Advertisement
E-Paper

ভোটারদের নাম কাটার চেষ্টা হয়েছিল! মানল কমিশন, তবে রাহুলের বাকি সব অভিযোগ ওড়াল ‘ভুল ও ভিত্তিহীন’ বলে

রাহুলের অভিযোগ, সফ্‌টঅয়্যার ব্যবহার করে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। ‘ভোট চুরি’র চেষ্টা কী ভাবে ধরা পড়েছে, তা-ও জানিয়েছেন রাহুল। অন্য দিকে, রাহুলের অধিকাংশ অভিযোগকেই ‘ভুল এবং ভিত্তিহীন’ বলে খারিজ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২১:১২
Attempts to delete 6,000 voter names in Karnataka, Rahul Gandhi presents proof

সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল গান্ধী। ছবি: পিটিআই।

প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন হাইড্রোজেন বোমা ফাটাবেন। সেই প্রতিশ্রুতিরক্ষা না-করলেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় ‘ভোট চুরির প্রমাণ’ তুলে ধরলেন রাহুল গান্ধী। অভিযোগ করলেন, কেন্দ্রীয় ভাবে সফ্‌টঅয়্যার ব্যবহার করে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। ‘ভোট চুরি’র চেষ্টা কী ভাবে ধরা পড়েছে, তা-ও জানিয়েছেন রাহুল। অন্য দিকে, রাহুলের অভিযোগকে ‘ভুল এবং ভিত্তিহীন’ বলে খারিজ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাদের বক্তব্য, অনলাইনে কেউ কোনও ভোটারের নাম বাদ দিতে পারেন না। কারও নাম বাদ দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য শোনা হয় বলেও জানায় কমিশন। একই সঙ্গে কর্নাটকের একটি বিধানসভা কেন্দ্রের নামোল্লেখ করে কমিশন জানিয়েছে, সেখানে ২০২৩ সালে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়। কিন্তু সেই চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি বলেও জানিয়েছে কমিশন।

রাতের দিকে একটি বিবৃতি দিয়ে কমিশন জানিয়েছে, কর্নাটকের অলন্দ বিধানসভা এলাকায় ভোটার তালিকা থেকে নাম কেটে দেওয়ার জন্য ২০২২ সালের ডিসেম্বরে অনলাইনে প্রায় ৬০১৮টা আবেদন জমা পড়েছিল। এত বেশি সংখ্যক আবেদন সন্দেহজনক মনে হওয়ায়, প্রতিটা আবেদন খুঁটিয়ে দেখে কমিশন। দেখা যায় মাত্র ২৪টা আবেদন সঠিক। ৫৯৯৪টা আবেদন ভুয়ো। তাই শুধু ওই ২৪টা গ্রহণ করে বাকি আবেদন বাতিল করে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে কমিশন। রাহুল অভিযোগ করেছিলেন, ‘ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া’ সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে কর্নাটকের সিআইডি কমিশনকে ১৮ বার চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু উল্টো দিক থেকে কোনও উত্তর মেলেনি বলে দাবি করছিলেন রাহুল। কমিশন অবশ্য জানিয়েছে, তাদের নির্দেশে কর্নাটকের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক পুলিশকে সব তথ্য দেন।

কী অভিযোগ রাহুলের

বৃহস্পতিবার একটি সাংবাদিক বৈঠক করে রাহুল অভিযোগ করেছিলেন, নির্দিষ্ট সফ্‌টঅয়্যারের মাধ্যমে নকল আবেদন করে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “অলন্দ কর্নাটকের একটি লোকসভা কেন্দ্র। কেউ কেউ ৬০১৮টি ভোট মুছে ফেলার চেষ্টা করেছেন। আমরা জানি না ২০২৩ সালের ভোটে (কর্নাটকের বিধানসভা নির্বাচন) ঠিক কত জনের নাম বাদ গিয়েছে। কিন্তু সংখ্যাটা অবশ্যই ৬০১৮-র বেশি হবে।” মঞ্চের পিছনে থাকা স্ক্রিনে কয়েকটি ফোন নম্বর তুলে ধরে রাহুল দাবি করেন, বিভিন্ন রাজ্য থেকে ফর্ম পূরণ করে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। কী ভাবে ওই নম্বরগুলি থেকে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) দেওয়া সম্ভব হল, সেই প্রশ্ন তোলেন রাহুল।

কী বলল কমিশন

রাহুলের অভিযোগকে ‘ভুল এবং ভিত্তিহীন’ বলল কমিশন। তবে ২০২৩ সালে অলন্দ বিধানসভা কেন্দ্রে যে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার ‘ব্যর্থ’ চেষ্টা হয়েছিল, তা স্বীকার করেছে কমিশন। কমিশন জানিয়েছে, এই বিষয়ে তদন্তের জন্য এইআইআর দায়ের করা হয়েছে।

রাহুলের তোপে জ্ঞানেশ

‘ভোট চুরি’র অভিযোগের সূত্রেই রাহুল আক্রমণ করেন নির্বাচন কমিশন এবং দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে। রাহুল বলেন, “দেশে স্বচ্ছ এবং অবাধ নির্বাচনের বিষয়টি সুনিশ্চিত করার বদলে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে নির্বাচন কমিশন। যাঁরা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে খর্ব করার চেষ্টা করছেন, তাঁদের রক্ষা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।” একই সঙ্গে রাহুলের সংযোজন, “জ্ঞানেশ কুমারজি ভোট চুরিকে রক্ষা করছেন। এটা নিয়ে এখন আর কোনও সংশয় নেই।”

ভোট চুরির ব্যাখ্যা রাহুলের

কী ভাবে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাহুল। তিনি বলেন, “একটি সফ্‌টঅয়্যার বুথের ভোটার তালিকায় থাকা প্রথম নামটি বেছে নিচ্ছে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কেউ এই কাজ চালাচ্ছেন। তিনি কেবল নিশ্চিত করছেন এটাই যে, আবেদনকারী যেন বুথের প্রথম ভোটার হন। তার পর (নাম বাদ দেওয়ার) আবেদন জমা করা হচ্ছে। এটা সাধারণ কর্মীদের কাজ নয়।” কর্নাটকের যে ১০টি বুথে সবচেয়ে বেশি ভোটারদের নাম কাটা গিয়েছে, সেগুলির অধিকাংশই কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বলে দাবি করেন রাহুল।

তিন চরিত্র

সাংবাদিক বৈঠকে জনৈক গোদাবাইয়ের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে রাহুলের দাবি, ভোটারদের অজান্তেই তাঁদের নাম করে আবেদনপত্র জমা দেওয়া হচ্ছে, যাতে অন্য ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া যায়। সূর্যকান্ত বলে এক জনের নাম উল্লেখ করে রাহুলের অভিযোগ, ওই ব্যক্তির নামে ১৪ মিনিটে ১২ জন ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। ওই ব্যক্তি মঞ্চে উঠে দাবি করেন, তিনি এই সব কিছুই জানেন না। নাগরাজ বলে এক জনের নামোল্লেখ করে রাহুলের দাবি, ওই ব্যক্তি ভোর ৪টে সাত মিনিটে মাত্র ৩৬ সেকেন্ডের মাধ্যমে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার দু’টি আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন বলে দেখানো হচ্ছে। কী ভাবে ৩৬ সেকেন্ডে দু’টি আবেদনপত্র জমা দেওয়া সম্ভব, সেই প্রশ্ন তুলেছেন রাহুল।

কী ভাবে এই ‘কারচুপি’ প্রকাশ্যে এসেছে, তা ব্যাখ্যা করে রাহুল জানান, বুথ স্তরের এক আধিকারিক দেখেন তাঁর কাকার নাম এক প্রতিবেশী বাদ দিয়ে দিয়েছেন। সেই প্রতিবেশীকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বিষয়টি জানেন না বলে জানান। এমনকি বুথ স্তরের ওই আধিকারিকও নাম বাদ পড়ার বিষয়টি জানতেন না বলে দাবি করেছেন রাহুল। সেই সূত্রেই রাহুলের সংযোজন, “কেউ কেউ গোটা প্রক্রিয়াটাকে ‘হাইজ্যাক’ করেছে এবং ভোটারদের নাম বাদ দিয়েছে।”

ভোটার তালিকায় সংযোজন!

মহারাষ্ট্রের রাজুরা বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার তালিকা তুলে ধরে রাহুলের দাবি, সেখানে অনলাইনে ৬৮৫০ জন ভোটারের নাম অবৈধ ভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যেই ভোটার তালিকায় এই সংযোজন-বিয়োজন চলছে বলে দাবি রাহুলের।

Rahul Gandhi Vote Chori Election Commission Of India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy