Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Protection of Churches

গির্জারও সুরক্ষা চেয়ে দিল্লিকে চাপ অস্ট্রেলিয়ার

মার্চ মাসে ভারত সফররত অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানেজ়ের সঙ্গে মোদীর শীর্ষ বৈঠকে প্রসঙ্গটি ওঠে। মোদী তাঁকে জানান, অস্ট্রেলিয়ায় একের পর এক হিন্দু মন্দিরের উপর হামলার ঘটনায় ভারত উদ্বিগ্ন।

Picture of PM Narendra Modi.

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:২৭
Share: Save:

দেশে খ্রিস্টান সম্প্রদায় এবং গির্জার উপরে হামলার ঘটনা ঠেকাতে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে অনুরোধ করেছে আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়া। কূটনৈতিক সূত্রে এ খবর পাওয়া গিয়েছে। তারই জেরে গত এক মাসে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কাছে প্রধানমন্ত্রীর পৌঁছনোর একটি তাগিদও দেখা গিয়েছে। সূত্রের মতে, এর একটি বড় কারণ আন্তর্জাতিক চাপ। পাশাপাশি খ্রিস্টানদের মধ্যে বিজেপিকে ছড়িয়ে দেওয়ার একটি কৌশলও বিজেপি নেতৃত্বের রয়েছে।

সূত্রের খবর, মার্চ মাসে ভারত সফররত অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানেজ়ের সঙ্গে মোদীর শীর্ষ বৈঠকে প্রসঙ্গটি ওঠে। মোদী তাঁকে জানান, অস্ট্রেলিয়ায় একের পর এক হিন্দু মন্দিরের উপর হামলার ঘটনায় ভারত উদ্বিগ্ন। অ্যালবানেজ় আশ্বাস দেন, এই ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেটা তাঁর সরকার অগ্রাধিকার দিয়ে দেখবে। সেই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী এটাও জুড়ে দেন, বিনিময়ে ভারতকেও গির্জা এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শীর্ষ বৈঠকের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে মোদী অ্যালবেনেজ়ের কাছ থেকে পাওয়া আশ্বাসের কথাটি বলেছিলেন। সূত্রের খবর, তিনি স্বাভাবিক ভাবেই এড়িয়ে গিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর গির্জা সংক্রান্ত কথোপকথন। একই ভাবে, ভারতে গির্জাগুলির নিরাপত্তা চেয়ে আমেরিকার কূটনীতিকদের তরফ থেকেও মোদী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। সরকারকে মাথায় রাখতে হচ্ছে, আগামী মাসে দু’বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে মোদীর। এক বার জি-৭ বৈঠক উপলক্ষে জাপানে, আর তার পরেই সিডনিতে কোয়াড সম্মেলনে। আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়া, দু’টি দেশই ভারতের কৌশলগত অংশীদার। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তিও রয়েছে নয়াদিল্লির। চিন যখন ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ক্রমশ আধিপত্য বাড়াচ্ছে, তখন অস্ট্রেলিয়ার মতো রাষ্ট্রকে ভারত চটাতে পারে না।

রাজনৈতিক সূত্রের খবর, সম্প্রতি বিরোধী দলের কিছু খ্রিস্টান সাংসদ ‘ট্র্যাক টু’ সংলাপ সেরেছেন বিদেশি (আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়া) কূটনীতিকদের সঙ্গে। তাঁরা অস্ট্রেলিয়ার কর্তাদের বলেছেন, দ্বিপাক্ষিক আলোচনার টেবিলে তাঁরা প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারকে চাপ দিচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু ভারতে সংখ্যালঘু নিরাপত্তা নিয়ে তাঁদের প্রকাশ্যেই সরব হওয়া উচিত। এই নেতাদের একাংশের বক্তব্য, তাঁদের কথা শুনে বিদেশি রাষ্ট্রনেতারা প্রকাশ্যেই সরব হবেন, এমনটা নয়। কিন্তু তাঁদেরও দেশের একটা বড় অংশের মনোভাব জানিয়ে রাখাটা জরুরি ছিল।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সফরের পরই বেশ কিছু ঘটনা দেখা যাচ্ছে, যাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। দিন কুড়ি আগে ইস্টার সানডে উপলক্ষে দিল্লির সেক্রেড হার্ট ক্যাথলিক চার্চে প্রথম পা রাখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখান থেকে গোটা বিশ্বের খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি। মোমবাতি জ্বেলে প্রার্থনা সেরেছেন। গির্জা চত্বরে গাছ লাগিয়ে জল বাঁচাতে বিশেষ সেচ পদ্ধতি নিয়েও কথা বলেছেন যাজকদের সঙ্গে। পাদ্রিরা তাঁকে যিশুর মূ্র্তি দিয়েছেন।

কেরলের খ্রিস্টানদের মন জয়েও ময়দানে নামতে দেখা গিয়েছে মোদীকে। সম্প্রতি সেখানকার যাজকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে, কথা বলে খুশি সাইরো মালাবার চার্চের আর্চবিশপ কার্ডিনাল জর্জ অ্যালেনচেরি। পাশাপাশি একাধিক চার্চের বিশপের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন মোদী। কেরলে বর্তমানে ১৮% খ্রিস্টান রয়েছেন। কিন্তু এত দিন বিজেপি কেরলে সে ভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি। এ বার ২০২৪ এর আগে কেরলে খ্রিস্টানদের দূরে সরিয়ে রাখা নয়, তাদের মন জয়ে উদ্যোগী হচ্ছে বিজেপি। দলীয় নেতারাও দল বেঁধে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে দেখা করা শুরু করেছেন। তাঁদের নানা অভাব অভিযোগের কথাও তাঁরা শুনছেন বলে খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India Australia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE