বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞরাও জানিয়েছেন, বাঘিনিটি গত চার-পাঁচ দিন কিছুই খায়নি। —ফাইল চিত্র।
‘মানুষখেকো’! এই অভিযোগেই গুলি করে মারা হয়েছিল তাকে। অথচ মরার আগে এক সপ্তাহেরও বেশি পেটে কিছুই পড়েনি অবনীর। এক সপ্তাহ আগে মহারাষ্ট্রের যবৎমল জেলার পনঢারকাওড়া এলাকায় গুলি করা হয় ১৩ জন মানুষকে ‘খুনে’ অভিযুক্ত বাঘিনি অবনীকে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, শরীরের ভিতরে মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং শ্বাসনালী ফেটেই মৃত্যু হয়েছে ৫ বছর বয়সি টি-১ (অবনীর সাঙ্কেতিক নাম)-এর। তার পাকস্থলীতে গ্যাস এবং তরল মিলেছে। যা থেকে প্রমাণিত যে, মৃত্যুর আগে অন্তত ৪-৫ দিন বাঘিনিটির পেটে কিছুই পড়েনি।
বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞরাও জানিয়েছেন, পেটে শক্ত খাবারের বদলে গ্যাস এবং তরলের উপস্থিতি রয়েছে মানে বাঘিনিটি গত চার-পাঁচ দিন কিছুই খায়নি। সাধারণত এরা এক বারে ২৫-৩০ কেজি মাংস খেয়ে নিলে টানা সাত দিন আর কিছু খায় না। ময়না-তদন্তের রিপোর্টে আরও উঠে এসেছে যে, গুলিটি অবনীর বুকের বাঁ দিক থেকে ঢুকে কাঁধের হাড়ে লেগে হৃদ্পিণ্ড ফুটো করে দিয়েছিল। এ ভাবে গুলি লাগা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
অবনীর মৃত্যুর পর থেকে দেখা মেলেনি তার দশ মাসের দুই সন্তানের। তারাও কি তবে এত দিন না খেয়েই দিন কাটাচ্ছে? বন দফতরের কর্মীদের কাছে এখন সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। দিন কয়েক আগে বন দফতরের আধিকারিকেরা জানান, ছোটখাটো শিকারের ভরসায় বাচ্চাগুলি হয়তো দিন সাতেক নিজেদের পেট চালিয়ে নিতে পারবে। তার মধ্যেই তাদের পাকড়াও করার পরিকল্পনা কথাও জানিয়েছিলেন বন দফতরের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক। বাচ্চাগুলিকে যাতে আর খালি পেটে না থাকতে হয়, তার জন্য নানা জায়গায় টোপ রেখে তাদের ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে বন দফতর। কিন্তু এখনও তাদের দেখা না মেলায় পশুপ্রেমীদের উদ্বেগ বাড়ছে। যেখানে অবনীকে গুলি করা হয়েছিল, সেখান থেকে ত্বকের নমুনা সংগ্রহ করে নাগপুরে আঞ্চলিক ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
অবনীর মৃত্যু ঘিরে দেশ জুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। আঙুল উঠেছে অবনীকে যিনি গুলি ছুড়েছিলেন, সেই আসগর আলির দিকেও। ছেলের হয়ে এ দিন আসগরের বাবা শফত আলির দাবি, ঘটনার তদন্ত হলে আসল সত্যি প্রকাশ পাবে। পশুপ্রেমীদের একাংশ যে ভাবে তাঁর ছেলেকে পরোক্ষে ‘খুনি’ বলছেন, তা নিয়েও সরব হয়েছেন তিনি। বিতর্কের মাঝে শুক্রবার বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ এবং আধিকারিকদের নিয়ে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গড়েছে মহারাষ্ট্র সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy