Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মুকুলের বদলে দিল্লিতে আজ নতুন মুখের অভিষেক

অভিষেকের অভিষেক! দলনেত্রীর দীর্ঘদিনের ‘ডান হাত’ থেকে ব্যাটন যাবে ভাইপোর হাতে। রাজধানীর বহু আন্দোলনের সাক্ষী জন্তর মন্তরে কাল কেন্দ্র-বিরোধী প্রতিবাদসভায় নেতৃত্ব দেবেন তৃণমূল সাংসদ তথা দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, এত দিন রাজধানীতে দলের সভা সমাবেশের আয়োজন করা ও সেগুলিতে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব পালন করে এসেছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। তৃণমূলের কেন্দ্র-বিরোধী আন্দোলনের সেই ব্যাটনটিরই হাতবদল হতে চলেছে এ বার। রাজধানীতে রাজনৈতিক ইনিংস শুরু করবেন আনকোড়া অভিষেক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:২৪
Share: Save:

অভিষেকের অভিষেক!

দলনেত্রীর দীর্ঘদিনের ‘ডান হাত’ থেকে ব্যাটন যাবে ভাইপোর হাতে। রাজধানীর বহু আন্দোলনের সাক্ষী জন্তর মন্তরে কাল কেন্দ্র-বিরোধী প্রতিবাদসভায় নেতৃত্ব দেবেন তৃণমূল সাংসদ তথা দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, এত দিন রাজধানীতে দলের সভা সমাবেশের আয়োজন করা ও সেগুলিতে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব পালন করে এসেছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। তৃণমূলের কেন্দ্র-বিরোধী আন্দোলনের সেই ব্যাটনটিরই হাতবদল হতে চলেছে এ বার। রাজধানীতে রাজনৈতিক ইনিংস শুরু করবেন আনকোড়া অভিষেক।

সারদা থেকে বর্ধমান বিস্ফোরণ, একের পর এক ঘটনায় রাজ্যে যথেষ্ট চাপে রয়েছে তৃণমূল। প্রশ্ন উঠেছে সারদা-কাণ্ডে মুকুলের যোগ নিয়েও। সারদা কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পরেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত মুকুলই ছিলেন দলের দু’নম্বর নেতা। কিন্তু সিবিআই তদন্ত যত এগিয়েছে, ততই রাজনৈতিক সূচক পড়েছে তাঁর। ফলে দলের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ রাখার স্বার্থেই মুকুলকে সরিয়ে নতুন মুখকে সামনে আনার প্রয়োজন বোধ করছেন তৃণমূল নেত্রী। এবং তাঁর নির্দেশেই এই রদবদল। তবুও একে ঘিরে যথেষ্ট চাপানউতোর সৃষ্টি হয়েছে দলের অন্দরে।

আগামিকালের সভার প্রধান কান্ডারি তিনি। অভিষেক তাই সপ্তাহ দেড়েক ধরে তিনি দিল্লিতে নিয়মিত যাতায়াত করছেন। তার আগে ফেসবুকেও বার্তা দিয়েছেন এই বলে যে, জন্তর মন্তরের সভায় প্রধান বক্তা তিনিই। এতে মমতা-ঘনিষ্ঠ কিছু নেতা যতই উত্‌সাহিত হোন না কেন, অভিষেকের এই স্বঘোষিত সিদ্ধান্তে মুকুল-ঘনিষ্ঠরা ও দলের বর্ষীয়ান সাংসদরা ক্ষুব্ধ। ঘরোয়া আলোচনায় সেটা তাঁরা প্রকাশও করেছেন।

তৃণমূল শিবিরের একাংশ এমন আশঙ্কাও করছেন যে, দিল্লিতে ফের মুখ পুড়বে না তো দলের! ফাঁকা থাকবে না তো জন্তর মন্তরের প্রতিবাদমঞ্চ! লোকসভা ভোটের আগে যেমনটি হয়েছিল রামলীলা ময়দানে, অণ্ণা হজারে ও মমতার যৌথ সভায়! এমন আশঙ্কা ও প্রবীণদের ক্ষোভের আঁচ পেয়ে অভিষেক অবশ্য আজ বোঝাতে চেয়েছেন তিনি একা নন। দলের প্রবীণরাও পাশে আছেন তাঁর। অভিষেকের কথায়, “আমি ছাড়াও মুকুল রায়, ডেরেক ও’ব্রায়ান, ববি হাকিমের মতো তৃণমূল নেতারাও একযোগে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাবেন।”

কোন কোন বিষয় নিয়ে কেন্দ্রকে আক্রমণ করা হবে, তা নিয়েও শেষ মুহূর্তে নতুন করে রণকৌশল রচনা করতে বাধ্য হয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সভা ঘোষণা হওয়ার সময় ঠিক ছিল, আক্রমণ শানানো হবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সিবিআই-এর অপব্যবহার নিয়ে। কিন্তু খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ সেই কৌশলে জল ঢেলে দিয়েছে। খোদ তৃণমূলের স্বচ্ছতা নিয়ে যখন প্রশ্ন, তখন যারা অপরাধীদের ধরার চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে আক্রমণাত্মক হলে, হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছে অভিষেক শিবির। সে কারণে, সরাসরি কোনও তদন্তকারী সংস্থাকে নয়, সার্বিক ভাবে বিজেপি ও তাদের সরকারকে রাজনৈতিক ভাবে আক্রমণ করার কৌশল নিয়েছে তৃণমূল। আগামিকাল চার মাস পূর্ণ হচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের। এই চার মাসে সাম্প্রদায়িক অশান্তি থেকে মূল্যবৃদ্ধি কেন্দ্রীয় সরকারের সামগ্রিক ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে রাজনৈতিক আক্রমণ করা হবে। অভিষেকের কথায়, “সার্বিক কেন্দ্রীয় ব্যর্থতা ও বিজেপির নির্বাচনী মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আগামিকাল দল সরব হবে।”

তৃণমূলের ‘যুবরাজ’ বা তাঁর নেতৃত্বে আক্রমণকে অবশ্য আদৌ আমল দিতে নারাজ বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংেহের কথায়, “টলোমোলো পায়ে হাঁটা একটি শিশু, ডায়াপার ছেড়ে সাবালক হতে চাইছে! তাই আমরা একে গুরুত্বই দিতে চাইছি না।”

প্রতিপক্ষ গুরুত্ব দিক চাই না দিক, অভিষেক-বাহিনীর উত্‌সাহে অবশ্য ভাটা পড়ছে না। ঘটনাচক্রে দিল্লিতে একই রাস্তার উপর পাশাপাশি দু’টি বাড়িতে রয়েছেন মুকুল ও অভিষেক। মুকুলের পাশের বাড়ি ১৮৩ সাউথ অ্যাভিনিউয়ের বাড়িটির সংস্কার এবং সাজানোর কাজ চলছে জোরকদমে। ওই বাড়িটিই সদ্য বরাদ্দ হয়েছে প্রথম বারের সাংসদ অভিষেকের নামে। বড় কর্মসূচির আগের সন্ধেয় ওই বাড়িতে টিম-অভিষেক ব্যস্ত সভার খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনায়। এই যুব-তৃণমূল নেতাদের গড় বয়স তিরিশের নীচে।

পাশের বাড়িটিই কেমন যেন উত্তাপহীন। যদিও সকাল থেকেই কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তৃণমূল কর্মীরা এসে দেখা করে যাচ্ছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে। যাঁদের মূল সুরটাই হল “মুকুলদা আসতে বলেছিলেন তাই এসেছি। কে সভা করছে জানি না!” তাত্‌পর্যপূর্ণ ভাবে এই সভায় মুকুলের আসা নিয়েই অনিশ্চয়তা ছিল গোড়া থেকে।

তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, মুকুলবাবু ব্যক্তিগত ভাবে অভিষেকের নেতৃত্বাধীন সভায় উপস্থিত থাকতে ইচ্ছুক ছিলেন না। কিন্তু সম্প্রতি দলে ক্রমশ তাঁকে যে ভাবে কোণঠাসা করার চেষ্টা হচ্ছে, এর পরে আর অভিষেকের অভিষেক-মঞ্চে গরহাজির থাকার ঝুঁকি নেওয়ার উপায় ছিল না তাঁর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mukul abhishek tmc latest news online news
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE