Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শিয়া-সূত্রেও জট, রামমন্দির প্রশ্নে রফা অধরাই

কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে খবর এসেছে, শুধু লখনউ নয়, গোটা দেশ থেকেই শিয়া নেতারা সুপ্রিম কোর্টে পাল্টা দরবার করে বলতে চলেছেন যে, অযোধ্যায় রামমন্দির আর তার ৪২ কিলোমিটার দূরে মসজিদ করার প্রস্তাব তাঁরা মানছেন না।

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৮ ০৪:২১
Share: Save:

রামমন্দির বিতর্ক নিয়ে আদালতের বাইরেই সমঝোতায় আসতে চাইছে বিজেপির একাংশ।

শিয়া ওয়াকফ বোর্ডের সম্মতিসূচক হলফনামার ভিত্তিতে নরেন্দ্র মোদী সরকার অযোধ্যার বিতর্কিত স্থানে রামমন্দির নির্মাণের আবেদন করেছিল কোর্টের কাছে| লখনউয়ের শিয়া বোর্ডের প্রধান ওয়াসিম রিজভি এই অবস্থানের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড শিয়া বোর্ডের এই প্রস্তাব মানেনি। উপরন্তু বহু শিয়া নেতাও এখন রিজভির বিরোধিতায় বেঁকে বসেছেন।

কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে খবর এসেছে, শুধু লখনউ নয়, গোটা দেশ থেকেই শিয়া নেতারা সুপ্রিম কোর্টে পাল্টা দরবার করে বলতে চলেছেন যে, অযোধ্যায় রামমন্দির আর তার ৪২ কিলোমিটার দূরে মসজিদ করার প্রস্তাব তাঁরা মানছেন না।

কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি এবং আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ দলের শীর্ষ স্তরে এ নিয়ে আলোচনা করছেন। নকভি নিজে শিয়া নেতা। তিনিও ওয়াসিম রিজভির বিরুদ্ধে। কারণ তাঁর ধারণা, নিজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত লঘু করতেই রিজভি বিজেপিকে সমর্থন করছেন।

মুলায়ম জমানায় ওয়াসিম ছিলেন সমাজবাদী পার্টি নেতা আজম খানের ডান হাত। যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ওয়াসিমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তের নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে যোগীর প্রস্তাব ছিল, সুন্নি আর শিয়া পৃথক বোর্ড না রেখে একটাই বোর্ড হোক। বিপদ বুঝে ওয়াসিম বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। এমনকি কিছু দিন আগে তিনি ‘ইন্ডিয়ান শিয়া আওয়ামি লিগ’ নামে নতুন দলও চালু করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১৬টি রাজ্যে দলের সভাপতিও নিযুক্ত করেছেন। মন্ত্রী থাকাকালীন মৌলানা কালবে জাওয়াত, নবাব কাজিম আলিদের সরিয়ে ওয়াসিমকে শিয়া বোর্ডে বসান আজম খান। এখন বিতাড়িতরা ওয়াসিমের বিরুদ্ধে গলা তুলছেন।

আরও পড়ুন: যোগীকে কালো পতাকা দেখিয়ে ভিটেছাড়া পূজা

ওয়াসিমের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টে শিয়া হলফনামায় বলা হয়, তারা লখনউয়ে ঘণ্টাঘরের কাছে হোসেনাবাদ এলাকায় মসজিদ নির্মাণে রাজি। তবে বাবর বা কোনও শাসকের নামে এই মসজিদ হবে না। নাম হবে ‘আমন কি মসজিদ’। এই হলফনামার বিরুদ্ধে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড সুপ্রিম কোর্টেই তাদের প্রতিবাদ নথিভুক্ত করেছে। বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটির প্রতিনিধি হাজি মেহবুবও বলেন, ‘‘শিয়া ওয়াকফ বোর্ডের প্রস্তাব মানছি না। আমরা চাই বাবরি মসজিদের ব্যাপারে সকল প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক।’’ এর আগে দিগম্বর আখড়ার মহন্ত সত্যেন্দ্র দাসের সঙ্গে অ্যাকশন কমিটির ইকবাল আনসারি বৈঠক করে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন। এখন পুরো ব্যাপারটা বিশ বাঁও জলে। মসজিদ ইসলামের অপরিহার্য অঙ্গ কি না, তার বিচার করতে সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠনের দাবি জানিয়েছিল সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড। সুন্নিদের দাবি, মসজিদ ইসলামের অপরিহার্য অঙ্গ। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট রায় সংরক্ষিত রেখেছে।

এই অবস্থায় বিজেপির একাংশ মনে করছেন, অযোধ্যা এখন গোটা দেশ তো দূরের কথা, উত্তরপ্রদেশেও কোনও বড় বিষয় নয়। বরং সুব্রহ্মণ্যম স্বামী এবং স্বঘোষিত ধর্মগুরু রবিশঙ্কর আদালতের বাইরে সমঝোতার যে চেষ্টা চালাচ্ছিলেন, সেটাই করুন। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE