প্রতীকী চিত্র।
গালিভারের মতো ঘুম না-হোক, কম যায় না উড়ান সংস্থার কর্মীর ঘুমও! ‘কার্গো হোল্ড’ অর্থাৎ বিমানের পেটে যাত্রীদের মালপত্র রাখার জায়গায় জিনিসপত্র তোলার কাজ করতে করতে কর্মীটি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন বিমানের খোলেই। সেই অবস্থায় বিমান তাঁকে নিয়ে চলে গেল বিদেশে!
অভাবনীয় এই ঘটনা ঘটেছে রবিবার, মুম্বইয়ে। ইন্ডিগোর ওই কর্মী আপাতত আবুধাবিতে রয়েছেন বলে বিমানবন্দর সূত্রের খবর। তাঁকে দেশে ফেরানো হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ) এবং বুরো অব সিভিল এভিয়েশন সিকিয়োরিটি (বিসিএএস)।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে দেশ যখন জেরবার, হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার পরে কাশ্মীরে জঙ্গি হানা— একের পর এক ঘটনা যখন ঘটেই চলেছে, তখন এই ঘটনাকে নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিশাল ফাঁক, বড়সড় গাফিলতি বলে মনে করছেন বিমান বিশেষজ্ঞেরা। প্রশ্ন উঠছে, উড়ান সংস্থার কর্তাদের, বিশেষত উড়ানের পাইলটের দৃষ্টি এড়িয়ে এমন ঘটনা ঘটল কী ভাবে? বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিমানের কার্গো হোল্ডে তাপমাত্রা ও বায়ুচাপ ঠিকঠাক ছিল বলেই জীবিত অবস্থায় ওই কর্মী আবুধাবি পৌঁছতে পেরেছেন। তাপমাত্রা বা বায়ুচাপের হেরফের হলে ওই কর্মীকে হয়তো বাঁচানোই যেত না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আবুধাবি পৌঁছে কার্গো হোল্ড খুলতেই স্থানীয় কর্মীদের চোখ কপালে উঠে যায়। কোনও বৈধ পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়াই এক ভারতীয় আবুধাবি পৌঁছে যাওয়ায় বিষয়টি বিদেশ মন্ত্রককেও জানাতে হয়। সেখান থেকে তাঁর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে তবেই তাঁকে ভারতে আনা হবে বলে বিমানবন্দর সূত্রের খবর।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার মাঝরাতে মুম্বই-আবুধাবি উড়ানে যাত্রীদের ওঠার সময় তাঁদের মালপত্রও তোলা হচ্ছিল কার্গো হোল্ডে। মুম্বই বিমানবন্দরে ইন্ডিগো তার নিজস্ব এজেন্সিকে দিয়ে এই কাজ করায়। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, ওই কর্মী সেই এজেন্সিতেই কাজ করেন। অন্য কর্মীদের সঙ্গে তিনি কার্গো হোল্ডে মালপত্র তোলার সময়েই সেখানে ঘুমিয়ে পড়েন। সেটা তাঁর সঙ্গে থাকা অন্য কর্মীরা খেয়ালও করেননি বলে অভিযোগ। সব মালপত্র তোলা হয়ে গেলে ওই ঘুমন্ত কর্মীকে ভিতরে রেখেই কার্গো হোল্ডের দরজা ‘লক’ করে দেওয়া হয়। প্রশ্ন উঠছে, সহকর্মীরা কেন খেয়াল করলেন না যে, ওই যুবক কার্গো হোল্ড থেকে বেরিয়ে আসেননি? বিমানবন্দরের একটি সূত্র জানায়, এই ধরনের কর্মীদের দিয়ে দিন-রাত কাজ করানো হয়। কিছু ক্ষেত্রে উপরি রোজগারের জন্য এঁরা ওভারটাইম করেন। ফলে দিনে কাজ করার পরেও রাতের শিফটে কাজ করতে হয় তাঁদের। মনে করা হচ্ছে, ওই কর্মীও এ ভাবে দিন-রাত কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে মালপত্র তোলার সময়েই বিমানের পেটে ঘুমিয়ে পড়েন।
এক পাইলট বলেন, ‘‘যাত্রী কেবিনের হাওয়াই ঘুরে কার্গো হোল্ডে যায়। তাই সেখানে অক্সিজেনের অভাব থাকে না। কিন্তু বায়ুচাপ ও তাপমাত্রার তারতম্য হলে সেখানে কোনও প্রাণীর বেঁচে থাকার কথা নয়। সেই জন্য যখন কেউ কার্গো হোল্ডে খাঁচায় ভরে কোনও পোষ্যকে নিয়ে যান, তখন আমাদের বলে দেওয়া হয়। আমরা বায়ুচাপ ও তাপমাত্রা ঠিক রেখে দিই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy