দীর্ঘ ১৪ বছরের অপেক্ষা। তবু পাকিস্তানের জেলে বন্দি ভাইয়ের কাছে রাখি পাঠাতে পারেননি দিদি। রাখিবন্ধনের দিনটি বছর বছর ঘুরে আসে। আর শুধু রাখি বাঁধার অপেক্ষাতেই দিন কেটে যায় হতাশ দিদির।
মধ্যপ্রদেশের বালাঘাটের বাসিন্দা, ফার্মেসির ছাত্র প্রসন্নজিৎ রংগারি একদিন আচমকাই তাঁর বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যান। পরিবারের লোকেরা ভেবেছিলেন, তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ২০২১ সালে হঠাৎ খবর আসে, পাকিস্তানের কোট লোকপত সেন্ট্রাল জেলে বন্দি রয়েছেন প্রসন্নজিৎ। সেই জেলেই বন্দি একজন ভারতীয় মুক্তি পাওয়ার পর দেশে ফিরে এসেছিলেন। পরিবারকে তিনিই জানান, প্রসন্নজিতের বেঁচে রয়েছেন এবং কোট লোকপত সেন্ট্রাল জেলে তাঁর বন্দি থাকার খবর। তথ্য-নথি মিলিয়ে দেখা যায়, ২০১৯ সালে বাটাপুর থেকে তাঁকে হেফাজতে নিয়েছে পাকিস্তান। সেখানে অন্য নামে বন্দি করা হয়েছে তাঁকে। তবে নথিপত্র শেষ পর্যন্ত প্রসন্নজিতের পরিচয়কেই নির্দেশ করে।
খবর পেয়েই মরিয়া হয়ে ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালান দিদি সংঘমিত্রা খোবরাগারে। তবে বছরের পর বছর ঘুরে যায়। প্রসন্নজিতের মুক্তির সম্ভাবনা অন্ধকারেই থেকে যায়। ছেলের জন্য অপেক্ষা করতে করতে মৃত্যু হয়েছে বাবার। মা মানসিক রোগগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। আর পেশায় দিনমজুর দিদি, ভাইয়ের মুক্তির ব্যবস্থা করতে ভারতের সরকারি দফতরগুলিতে ঘুরতে ঘুরতে এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। রাখি বন্ধনের দিনটিতে আবেগাপ্লুত হয়ে ভাইয়ের উদ্দেশে চিঠি লেখেন তিনি। ভাবেন, যদি কোনও ভাবে তা পৌঁছে যায় পাকিস্তানের জেলে।
পহেলগামে জঙ্গি হামলার পর দু’দেশের টানাপড়েনের মধ্যে ভারত থেকে পাকিস্তানে ডাক কিংবা ক্যুরিয়র সার্ভিস বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে সংঘমিত্রা ভারত সরকারের সাহায্য চাইছেন। জেলবন্দি ভাইয়ের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে সংঘমিত্রা লিখেছেন, ‘রাখি বন্ধনের দিনটাতে তোর কথা খুব মনে পড়ছে। আমি তোকে রাখি পাঠাতে চাই। কিন্তু তুই তো অনেক দূরে। আমার আশা, ভারত সরকার আমার রাখি গ্রহণ করে পাকিস্তানের জেলে তোর কাছে পাঠিয়ে দেবে। যাতে ভাইকে রাখি পরাতে দিদির ইচ্ছা পূর্ণ হয়। সব বোনেরাই ভাইকে রাখি পরায়। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য আমি সেটা পারছি না।’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)