Advertisement
E-Paper

মসজিদ সারিয়ে এখন বাবরি ভাঙার প্রায়শ্চিত্ত

এক দিন যে বলবীর ঝোঁকের মাথায় বাবরির চুড়ো থেকে ইট খসিয়েছিলেন, আজ তিনিই নিষ্ঠাবান মৌলবি। লম্বা দাড়ি। নিয়মিত ভোরে আজান করেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও পড়েন। শুধু ধর্মই নয়, বদলেছে আমিরের জীবনের মানেও। এখন একটাই চাওয়া, ভেঙে পড়া শ’খানেক মসজিদ সারাবেন আমির।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩৭
বলবীর ওরফে মহম্মদ আমির

বলবীর ওরফে মহম্মদ আমির

এ যেন রত্নাকর থেকে বাল্মীকি হয়ে ওঠার গল্প। ঝোঁকের বশেই ২৫ বছর আগে হাতে শাবল তুলে নিয়েছিলেন। বাবরি মসজিদের মাথায় উঠে ঘা দিয়েছিলেন বলবীর সিংহ। সঙ্গে বন্ধু যোগেন্দ্র। আর পিছনে ছিল শিবসেনার মন্ত্রণা।

সেই পাপবোধ তাড়া করে ফিরেছে বলবীরকে। বাকি জীবন বাড়ি থেকে দূরে স্বজনহীন কেটে গিয়েছে তাঁর। কিন্তু আজকের সেই মানুষটাকে দেখলে চিনতে অসুবিধে হয়।

অবশ্য বলবীর নন, তিনি এখন মহম্মদ আমির। প্রায়শ্চিত্ত করতেই ধর্ম বদলান তিনি। এক দিন যে বলবীর ঝোঁকের মাথায় বাবরির চুড়ো থেকে ইট খসিয়েছিলেন, আজ তিনিই নিষ্ঠাবান মৌলবি। লম্বা দাড়ি। নিয়মিত ভোরে আজান করেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও পড়েন। শুধু ধর্মই নয়, বদলেছে আমিরের জীবনের মানেও। এখন একটাই চাওয়া, ভেঙে পড়া শ’খানেক মসজিদ সারাবেন আমির।

ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইংরেজি, তিনটি বিষয়ে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন বলবীর। সাধারণ পরিবারে বড় হন। উগ্র হিন্দুবাদ তো দূরের, বলবীরের বাবা দৌলতরাম ছিলেন গাঁধীবাদী। স্কুলে পড়াতেন। দেশভাগের যন্ত্রণাকে দেখেছেন তিনি। মুসলিম প্রতিবেশীদেরকে চিরকাল আগলে রাখতে চাইতেন দৌলতরাম। মূর্তি পুজোতেও বিশ্বাস করতেন না। বলবীরের যখন ১০ বছর বয়স, সবাই মিলে পানিপথে চলে আসেন তাঁরা।

দোষ ছিল বোধহয় পানিপথের জলহাওয়াতেই। বলবীর জানান, হরিয়ানার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা মানুষেরা বিশেষ মর্যাদা পেতেন না পানিপথে। এমন কী কেউ বাঁ হাতে রুটি খেলেও তাঁকে ‘মুসলিম’ বলে হেয় করা হত। এমন হাজার জিনিস তাড়িয়ে বেড়াত বলবীরকে। সে সময় কয়েক জন আরএসএস কর্মীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়। ‘আপনি’ ‘আপনি’ করে কথা বলতেন তাঁরা। ওই একটু সম্মানের মোহতেই তাঁদের সঙ্গে জড়িয়ে যান বলবীর। শিবসেনা করতে করতেই বিয়ে। পাশ করেন রোহতকের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আরএসএসের সঙ্গে নিয়মিত ওঠাবসার কারণে প্রতিবেশীরা তাঁকে কট্টর হিন্দুবাদী বলে ভাবতে শুরু করেছিলেন। অথচ বলবীরের কথায়, ‘‘কখনও মন্দিরেও যেতাম না। বাড়িতে গীতা ছিল, তবে সেটা কখনও ছুঁয়েও দেখিনি আমরা।’’

তত দিনে তাঁর মগজধোলাই হয়ে গিয়েছে। ১৯৯২ সালে শিবসেনা তাঁকে অযোধ্যায় পাঠায় বাবরি মসজিদ ভাঙতে। আশপাশের বন্ধুরাও উস্কানি দিয়েছিল। বলেছিল ‘‘কুচ করে বিনা ওয়াপাস না আনা (কিছু না করে ফিরবে না)।’’ বাবরি ভেঙে পানিপথে ফেরার পরে শিবসেনার তরফে তাঁদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। শিবসেনার স্থানীয় অফিসে রাখা হয় বাবরির মাথা থেকে ভেঙে আনা ইট দু’টিও।

কিন্তু বাড়ির দরজা তাঁর জন্য বন্ধ হয়ে যায় চিরতরে। রত্নাকরের পাপের ভাগ নেননি তাঁর স্ত্রী। বলবীরের পাপের ভাগও তাঁর স্ত্রী নিলেন না। পানিপথের বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এলেন বলবীর। স্ত্রী থেকে গেলেন তাঁর বাবার বাড়িতেই।

সেই শুরু বলবীরের ভবঘুরে জীবনের। এরই মধ্যে খবর আসে বাবা মারা গিয়েছেন। ছেলের হাতে বাবরি ধ্বংস হওয়ার দুঃখ সহ্য করতে পারেননি বাবা দৌলতরাম। তাঁর কথায়, ‘‘পশুর মতো জীবন কাটছিল। চোখ বন্ধ করলেই কান্না শুনতে পেতাম। তাড়া করে ফিরত ওই শাবলের ঘা।’’ সিদ্ধান্ত নেন প্রায়শ্চিত্ত করবেন। সোনেপতে গিয়ে মৌলনা কালিম সিদ্দিকির কাছে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নেন বলবীর। ‘রত্নাকর’ থেকে হয়ে ওঠেন মহম্মদ আমির।

মালেগাঁওয়ে একটি জনসমাবেশে এসে সেই গল্পই শোনালেন আজকের ‘বাল্মীকি’ আমির। জানালেন, ১৯৯৩ থেকে ২০১৭, এই ২৪ বছরে উত্তরভারতের মেওয়াত-সহ বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু ভেঙে পড়া মসজিদ খুঁজে বের করে সেগুলির মেরামত করেছেন তিনি। উত্তরপ্রদেশের হাথরাসের কাছে ভেঙে পড়া মেন্ডুর মসজিদও সারাই করেন আমির। সেই কাজে তাঁর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন তাঁর মুসলিম ভাইয়েরাই।

Balbir Singh Mohammed Amir Kar Sevak Babri Masjid Demolition বলবীর সিংহ মহম্মদ আমির
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy