মে মাসের কথা। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর অভিঘাতে বেশ কিছুটা কোণঠাসা পাকিস্তান। সে সময়ে বালুচিস্তান প্রদেশের বাসিন্দারা ভেবেছিলেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’ আরও কিছু দিন চললে ‘কাহিল’ পাকিস্তানের হাত থেকে মুক্তি মিলবে সহজেই। কিন্তু তাঁদের সেই আশা পূরণ হয়নি, আক্ষেপ করছিলেন বালোচ-নেতা মির ইয়ার বালোচ।
আনন্দবাজার পত্রিকাকে মির বললেন, ‘‘অপারেশন সিঁদুর-এর সময়ে বালুচিস্তান ভারতের পাশে ছিল। ভেবেছিলাম, এ বার হয়তো পাকিস্তানের পতন ঘটবে। কিন্তু তার আগেই অপারেশন থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’ মির-ই কয়েক মাস আগে বালুচিস্তানকে স্বাধীন দেশ ঘোষণা করেছিলেন। বালুচিস্তানের পরিস্থিতির কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে খোলা চিঠিও লিখেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতকে আমরা মিত্র দেশ বলে মনে করি। মোদীজি আমাদের দিকে বন্ধুত্বের হাতের বাড়িয়ে দেবেন কি না, সেটা তাঁর সিদ্ধান্ত!’’ মিরের মতে, ভারত সরকারের উচিত বালুচিস্তান-সহ সিন্ধুদেশ, পাশতুনিস্তান, গিলগিট-বালটিস্তান, পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বসে, তাদের পাশে থাকা। ‘‘যা ভারতকে একটি দায়িত্বশীল এবং শক্তিশালী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে,’’ বলছিলেন তিনি।
পাক-প্রশাসনের দীর্ঘ ‘অত্যাচার’-এর প্রতিবাদে বালোচেরা আজ পথে। কিন্তু একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা অর্জন কি আদৌ সম্ভব? মিরের উত্তর, ‘‘রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের কোনও অস্তিত্ব নেই। কেউ যদি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সামরিক খাতের মোটা খরচ এবং বিদেশি ঋণ-প্রাপ্তির উপর ভিত্তি করে ব্যাখ্যা করতে চান, তা হলে সেটা আলাদা প্রশ্ন।’’ পাকিস্তানকে দেশ হিসেবেই অস্বীকার করছেন? বালোচ নেতার জবাব, ‘‘১৯৪৭ সালের পর থেকে দেশটার অস্তিত্ব শুধু সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে টিকে রয়েছে— এ কথা নিশ্চয়ই ভারতীয়দের অজানা নয়। দেশটায় ভাল ভাবে জীবিকা অর্জনের সুযোগও নেই। অন্য দিকে, ইসলামাবাদ এবং রাওয়ালপিন্ডিতে বসে থাকা তথাকথিত শাসকেরা বালুচিস্তানের সম্পদ লুট করে, সেই অর্থ দিয়ে পাক সেনাকে প্রতিপালন করছে।’’ মীরের মতে, ব্যক্তিগত লাভের জন্য বিদেশি শক্তির কাছে জাতীয় স্বার্থকে বিকিয়ে দেওয়াটা পাকিস্তানের কাছে কোনও নতুন বিষয় নয়।
বালুচিস্তানের আন্দোলনটা পুরোটাই ‘পাক অপশাসন’ থেকে মুক্তির আঙ্গিকে। তাঁর কথায়, ‘‘বালুচিন্তানের সন্তান হারানো প্রতিটি মা, তাঁদের শরীরের গয়না খুলে তা বিক্রি করে এই আন্দোলনকে সমর্থন করছেন।’’ প্রসঙ্গটা যদি মাতৃভূমি রক্ষার হয়ে থাকে, তা হলে আপনারা চিন ও পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ‘করিডর’-এর বিরোধিতা করছেন কেন? সেটা কার্যকর হলে তো বালুচিস্তানের আখেরে উন্নতিই হবে। ‘করিডর’-এর একটি প্রান্ত তথা গ্বদর বন্দর তো বালুচিস্তানেই। বালোচ নেতা এই প্রসঙ্গে বলছিলেন, ‘‘আমরা বিশ্বাস করি চিন-পাকিস্তানের অর্থনৈতিক করিডর আদতে অর্থনৈতিক উদ্যোগ নয়, বরং চিনের একটি বিস্তারবাদী সামরিক পরিকল্পনা। যার মূল লক্ষ্য আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ লুট।’’
বালুচিস্তানে পাকিস্তান প্রশাসন তথা পাক সেনার অত্যাচার, খুন, ধর্ষণের অভিযোগ প্রসঙ্গে মির বলেন, ‘‘আমরা কয়েকশো চিঠি লিখেছি রাষ্ট্রপুঞ্জে।’’ তবে তাতে যে প্রত্যাশিত ফল মেলেনি, তা-ও মেনে নিয়েছেন এই বালোচ নেতা। বালোচ ইয়াকজেতি কমিটি (বিওয়াইসি)-র নেত্রী মাহরাং বালোচ এখনও পাক-প্রশাসনের হাতে বন্দি। মির মনে করেন, ‘‘বিওয়াইসি পাক-সংবিধান মেনে চলে। পাকিস্তানের অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া একটা সংগঠনের নেত্রীর যদি এই হাল হয়, তা হলে বালোচ আন্দোলনের পক্ষে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের কী পরিণতি হতে পারে, এক বার ভাবুন। মাহরাং বালোচের মতো হাজার হাজার বালোচ পুরুষ-নারী পাকঅত্যাচারের শিকার।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)