দেশে ফেরার আগে। বুধবার ছবিটি তুলেছেন সুব্রত জানা।
কেউ দু’বছর, দেড় বছর, কেউ এক বছর আগে। বাংলাদেশ ছেড়ে এ দেশে এসে ধরা পড়েছিল তারা। দু’জন নাবালক ও দু’জন মহিলা। ধরা পড়ার পরে তাদের ঠাঁই হয় হাওড়ার পাঁচলার মালিপুকুর এলাকার একটি বেসরকারি হোমে। ফের তারা ঘরে ফিরে যাচ্ছে। আত্মীয় পরিজনেরাই তাদের নিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের দেশে। আজ বৃহস্পতিবার বেনাপোল সীমান্তে আত্মীয়দের হাতে তুলে দেওয়া হবে ঘরছাড়া মানুষদের।
বছর দেড়েক আগে ভাল কাজের খোঁজে দালালের হাত ধরে ঘর ছাড়ে ১৬ বছরের সেখ ইয়াসিন। তার বাড়ি ঝিনাইদহের আদমপুর গ্রামে। সীমান্ত টপকে প্রথমে সে বনগাঁয় আসে। সেখানে আসার পরে উধাও হয়ে যায় দালাল। শেষ পর্যন্ত একাই সে চলে আসে শিয়ালদহ স্টেশন। পরে সেখান থেকে নৈহাটি, ব্যান্ডেল, মুম্বই হয়ে চলে যায় দিল্লিতে। ট্রেনে ভিক্ষা করেই তার খাওয়া-দাওয়া জুটত। শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাতে ধরা পড়ে কিছুদিন সে দিল্লির এক হোমে ছিল। তবে বাঙালি হওয়ায় তাকে পাঁচলার এই হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
একইভাবে ১৩ বছরের মহম্মদ বিলাল বছর দুই আগে দালালের হাত ধরে কাজের খোঁজে ভারতে আসে। তার বাবার আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। সেই কারণেই সে ঘর ছাড়ে বলে বিলাল জানায়। বেঙ্গালুরুতে সে একটি নার্সিংহোমে ওয়ার্ডবয়ের কাজ করত। মায়ের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। মায়ের ডাকে ট্রেনে চড়ে ফেরার পথে সাঁতরাগাছি স্টেশনে সে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। গত প্রায় এক বছর ধরে সে হোমে আছে।
জিয়ানগরের কালানিয়া গ্রামের বছর ২৪-এর তরুণী খপ্পরে পড়ে নারীপাচারকারীদের। তারাই মুম্বইয়ে নিয়ে গিয়ে তাঁকে দেহ ব্যবসায় নামতে বাধ্য করে। শেষ পর্যন্ত মুম্বই পুলিশ নিষিদ্ধপল্লিতে হানা দিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে পশ্চিমবঙ্গে পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হয় এই হোমে। গত দেড় বছর ধরে তিনি এখানে।
বছর ৪২-এর এক মহিলা স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে এক দালালের সঙ্গে ভারতে চলে আসেন। দালাল তাঁকে মুম্বই নিয়ে গিয়ে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ জুটিয়ে দেয়। কয়েকদিন পরেই তাঁর সে কাজ চলে যায়। পরে দালালটি তাঁকে নিষিদ্ধপিতে পরিচারিকার কাজ জুটিয়ে দেয়। নিষিদ্ধপল্লিতে হানা দিয়ে পুলিশ তাঁকে ধরে। মুম্বইয়ের একটি হোমে কিছুদিন থাকার পরে তাঁকে পাঠানো হয় পাঁচলার এই হোমে। প্রায় দু’বছর ধরে তিনি হোমে রয়েছেন।
হোম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, চার জনেরই পরিবারের সমস্ত তথ্য ও তাদের বাড়ির লোকেদের টেলিফোন নম্বর জোগাড় করা হয়। তার পরে তাদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন কর্তৃপক্ষ। পরিবারের লোকজন ঘরছাড়া এই সব মানুষদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হন। এর পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার, ভারত সরকার এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করা হয়। হোমের তরফে অপর্ণা চক্রবর্তী বলেন, “কারও বাবা, কারও দাদা, কারও বা ছেলে আসছেন স্বজনদের ফিরিয়ে নিতে। প্রয়োজনীয় কাগজ জোগাড় করতেই যা একটু দেরি হল। পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য এ সব মানুষ যেন মুখিয়ে আছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy