Advertisement
E-Paper

নবজাগরণের গল্প শুনল বরাক

উনিশ শতকের নবজাগরণ শুধু বঙ্গদেশেই সীমাবদ্ধ ছিল না, তার প্রভাব পড়েছিল পূর্ব ভারতের অন্যত্রও। নব জাগরণের আলো প্রভাবিত করেছিল বরাক উপত্যকার জনজীবনকেও। তবে তা ঘটেছিল উনিশ শতকের তৃতীয় দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৬

উনিশ শতকের নবজাগরণ শুধু বঙ্গদেশেই সীমাবদ্ধ ছিল না, তার প্রভাব পড়েছিল পূর্ব ভারতের অন্যত্রও। নব জাগরণের আলো প্রভাবিত করেছিল বরাক উপত্যকার জনজীবনকেও। তবে তা ঘটেছিল উনিশ শতকের তৃতীয় দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে। কারণ উনিশ শতকের প্রথম তিন দশক বরাক ছিল রাজন্যশাসিত।

‘উনিশ শতক: পরিক্রমা ও পর্যালোচনা’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে দু’দিন ধরে বাংলা ও বাঙালির নানা বিষয় নতুন করে তুলে আনলেন গবেষকরা। জিরি কলেজের শিক্ষিকা সুপর্ণা ভট্টাচার্য জানান, মধুসূদন দত্ত যখন ‘বীরাঙ্গনা’ লেখেন, রামকুমার নন্দীমজুমদার শিলচরে বসে রচনা করেন ‘বীরাঙ্গনা পত্রোত্তর কাব্য’। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সন্তোষ আকুড়ার কথায়, ‘‘উনিশ শতকে বরাকের বুকে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার মধ্যে চা জনজাতি গোষ্ঠীর আগমন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।’’ ১৮৫৭-র বিদ্রোহ ও বরাক উপত্যকার স্থাননাম নিয়ে আলোচনা করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রমাকান্ত দাস। আরেক শিক্ষক বুবুল শর্মা এ প্রসঙ্গে বাবাহর ঠাকুরের পুঁথির কথা জানান।

দ্বিজেন্দ্র-ডলি মেমোরিয়াল লাইব্রেরির এই সেমিনারে শরিক হয়েছে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজও। রেজিস্ট্রার সঞ্জীব ভট্টাচার্য এর উদ্বোধন করেন। উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সুতপা ভট্টাচার্য, আশিস খাস্তগির ও অপূর্বানন্দ মজুমদার। বক্তৃতা করেন বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কাছাড় জেলা সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরীও। গত কাল সমাপ্তি পর্বে বক্তব্য রাখেন সুবীর কর, অমলেন্দু ভট্টাচার্য।

উনিশ শতকের বাংলার কথা বলতে গিয়ে বিভিন্ন অধিবেশনে নারীবিকাশ, সামাজিক সংস্কার, বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস, কবিগুরুর সৃষ্টি, গীতিকবিতা, কবিগান ইত্যাদির কথা উল্লেখ করেছেন গবেষকরা। অনেকেই স্বামী বিবেকানন্দের কথায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। কেউ কেউ ঠাকুর রামকৃষ্ণ এবং সারদাদেবীর কথা টেনে আনেন। সারদাচরণ দে কলেজের শিক্ষিকা ছন্দা ধর বললেন, উনবিংশ শতকে রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো ঠাকুর রামকৃষ্ণ এবং স্বামী বিবেকানন্দও নারীমুক্তিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। রামকৃষ্ণ বলেছিলেন, জীবই শিব। স্বামীজি একে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলেন। নারী-পুরুষে সমতার তত্ত্ব তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন। জনতা কলেজের দর্শনের শিক্ষিকা সোমা ভট্টাচার্যও একই সুরে জানান, নারী-পুরুষের সমবিকাশে গুরুত্ব দিয়ে গিয়েছেন তিনি। এমসিডি কলেজের শমিতা ভট্টাচার্য বলেন, ‘কী উদার জীবনদর্শন পরিলক্ষিত হয়েছিল ঠাকুর রামকৃষ্ণের মধ্যে! আর স্বামীজি পরাধীন ভারতে নতুন সম্ভাবনার পথ খুলে দিয়েছিলেন। জড়ত্বময় চেতনাকে উঠে দাঁড়াতে শিখিয়েছিলেন।’ সত্যরঞ্জন কলেজের প্রবীর দাস আলোচনা করেন স্বামীজির পত্র-প্রবন্ধ নিয়ে। উনিশ শতকে ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে বিকশিত করার জন্য স্বামীজির ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অর্পিতারানি দাস। তাঁর কথায়, ‘বিবেকানন্দের জাতীয়তাবাদের সাফল্য পশ্চিমে বসবাসকারী ভারতীয়দেরও উদ্বুদ্ধ করেছিল।’ আরেক গবেষক জয়ন্তী চৌধুরী বললেন সারদাদেবীর কথা। তিনি জানান, সারদাদেবী নিজে কোনও আনুষ্ঠানিক বিদ্যালাভ করেননি। অথচ প্রতিটি সুশিক্ষিত নারীর হৃদয়ের আদর্শস্থল ছিলেন। সমাজের প্রতিটি কুসংস্কারের প্রতি ছিল তাঁর বিরূপ মনোভাব।

জনতা কলেজের শিক্ষিকা সীমা ঘোষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ভাস্বতী পালের আক্ষেপ, উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে বিংশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত যে সব অভিনেত্রী এসেছিলেন, বাংলা নাটকের ইতিহাসে তাঁদের ভূমিকা আজও সেভাবে স্বীকৃত হয়নি। স্ত্রীশিক্ষার প্রেক্ষাপটে রাসসুন্দরী দাসীর কথা পৃথকভাবে আলোচনা করেন জনতা কলেজের পিনাকি দাস ও গবেষক সুপর্ণা চক্রবর্তী। রামকুমারী বসুর কথা আনেন গবেষক রিঙ্কি রায়। কাছাড় কলেজের স্বাতীলেখা রায় উল্লেখ করেন গিরীন্দ্রমোহিনী দাসীর কথা। মোক্ষদায়িনী মুখোপাধ্যায় থেকে স্বর্ণকুমারী দেবী – অনেকের কথা বললেন এমসিডি কলেজের শিক্ষক আব্দুল মতিন লস্কর। একই কলেজের মহসিনা কবির বড়ভুইয়া বললেন, উনবিংশ শতক থেকে বাংলার সমাজ ও সাহিত্য জীবনে নারীর আত্মমর্যাদাবোধকে কেন্দ্র করে এক জাগ্রত প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়।

নবজাগরণের চর্চায় বাদ যায়নি মতুয়া সাহিত্যের কথাও। গবেষক সৌগত বাগচী বলেন, মতুয়া আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে বিশাল মতুয়া সাহিত্য ভাণ্ডার। তাঁর আক্ষেপ, বাংলা সাহিত্যের চর্চায় শতকাল আগে যেমন মতুয়া সাহিত্য গুরুত্ব পায়নি, তেমনি আজও একে এড়িয়ে যান অনেকে।

সেমিনারে বটতলা সাহিত্যের কথা বললেন ডায়মন্ড হারবার ওপেন ইউনিভার্সিটির ইতিহাস বিভাগের প্রধান অপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাবু কালচার নিয়ে আলোচনা করেন গুয়াহাটি বেঙ্গলি হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষিকা দীপান্বিতা পাল।

দুদিন ধরে যারা গবেষণাধর্মী নিবন্ধ পাঠ করেছেন তাঁদের অধিকাংশই দক্ষিণ অসমের। এ ছাড়াও ছিলেন কলকাতার বেথুন কলেজের বাংলার বিভাগীয় প্রধান সুমিতা মুখোপাধ্যায়, ইতিহাস বিভাগের অমৃতা বাগচী, দক্ষিণ ত্রিপুরার বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক কাঞ্চনজ্যোতি বসাক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সুমনচন্দ্র দাস, গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঞ্জয় ভট্টাচার্য ও শিবাণী সাহা। বিভিন্ন অধিবেশনে পৌরোহিত্য করেন রমা ভট্টাচার্য, দীপঙ্কর পুরকায়স্থ, সুতপা দত্ত।

Barak Valley
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy