কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী
বলিউডের বাঙালি শিল্প নির্দেশক কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীকে খুনের অভিযোগে রবিবার মহম্মদ ফুরকান নামে এক ব্যবসায়ী-সহ মোট দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কৃষ্ণেন্দু (৩৭) হুগলির কোন্নগরের মাস্টারপাড়ার বাসিন্দা। কর্মসূত্রে মুম্বইয়ের গোরেগাঁওয়ে থাকতেন। তাঁর দেহে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শুক্রবার মুম্বইয়ের বিরারে তাঁর গলাকাটা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
কৃষ্ণেন্দুকে শিল্পসামগ্রী সরবরাহ করত ফুরকান। ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরে পূর্বপরিকল্পনা করেই কৃষ্ণেন্দুকে খুন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সেই জন্য ঘটনার দু’দিন আগে ছুরি কিনেছিল ফুরকান। খুন ও দেহ লোপাটের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আরও দু’জনকে খুঁজছে পুলিশ।
কলকাতার ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজের প্রাক্তন ছাত্র কৃষ্ণেন্দু ২০০৮ সালে মুম্বই যান। প্রথমে প্রোডাকশন ডিজাইনের একটি সংস্থায় চাকরি করতেন। পরে নিজেই একটি সংস্থা খোলেন। ২০১৫ সালে ‘আইল্যান্ড সিটি’ নামে এক হিন্দি ছবির শিল্প নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছিলেন কৃষ্ণেন্দু। বছর তিনেক ধরে চিন্ময় মণ্ডল নামে এক শিল্পী বন্ধুর সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করছিলেন। মুম্বই থেকে ফোনে চিন্ময় বলেন, ‘‘৭ অগস্ট কৃষ্ণেন্দু একটি মিটিংয়ে যাওয়ার কথা বলে বেরিয়েছিল। ওই দিন রাত ৮টায় আমার সঙ্গে ওর শেষ কথা হয়।’’ ধৃত মহম্মদ ফুরকানকে তিনি চিনতেন। নিজেদের আড়াল করতে আরও তিন জনকে নিয়ে ফুরকানই থানায় গিয়ে কৃষ্ণেন্দুর নিখোঁজ হওয়ার কথা জানায় বলে পুলিশ জানিয়েছে। চিন্ময় বলেন, ‘‘আমরা ফুরকানের থেকে ৮৫ হাজার টাকা পেতাম। তবে টাকা নয়, আমাদের ল্যাপটপ হাতাতেই ও কৃষ্ণেন্দুকে খুন করে। ওর ধারণা ছিল, আমাদের ল্যাপটপ নিতে পারলেই আমাদের শিল্প নির্দেশনার সমস্ত নকশা পেয়ে যাবে।’’
নিখোঁজ হওয়ার পরেই মালবনি থানায় অভিযোগ দায়ের করে নিহতের পরিবার। কৃষ্ণেন্দুর কর্মচারীরা জানিয়েছেন, বুধবার রাত ন’টা ১৬-তে শেষবার কৃষ্ণেন্দুকে হোয়াটসঅ্যাপে সক্রিয় দেখা গিয়েছে। তার পর থেকে কৃষ্ণেন্দুর ফোনও বন্ধ ছিল।
বন্ধু মারফত খবর পেয়ে কৃষ্ণেন্দুর মামাতো ভাই দিব্যেন্দু সরকার মুম্বই গিয়ে দেহ শনাক্ত করেন। ফোনে তিনি জানান, ‘‘পুলিশকে অনুরোধ করেছি, দাদার মৃত্যুর নেপথ্যে আরও যারা রয়েছে তাদের যেন দ্রুত গ্রেফতার করা হয়।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ময়না-তদন্তের রিপোর্টে জানা গিয়েছে, কুপিয়েই হত্যা করা হয়েছে কৃষ্ণেন্দুকে। এই ঘটনায় ফুরকানকে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে সে। কিন্তু ফুরকানের অসংলগ্ন কথায় সন্দেহ আরও বাড়ে পুলিশের। শেষ পর্যন্ত খুনের কথা ফুরকান কবুল করেছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
শনিবারই কৃষ্ণেন্দুর মৃত্যুর খবর পৌঁছয় কোন্নগরে। ওই বাড়িতে নিহতের বাবা চন্দনবাবু এবং মা ছায়াদেবী থাকেন। তাঁরা দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন। সোমবার বিকেলে উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদব ওই বাড়িতে যান সমবেদনা জানাতে। তিনি বলেন, ‘‘আমি বিষয়টি আমাদের দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে জানাই। তিনি মুম্বইয়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy