E-Paper

ভুটানরাজের আগমন, চিনের সঙ্গে রসায়ন বুঝতে চায় দিল্লি

তিন দিনের গুয়াহাটি সফর সেরে রাজা যাবেন মুম্বই। তারপর নয়াদিল্লি পৌঁছে ভারতের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি। 

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৬
Bhutan King Jigme Khesar Namgyal Wangchuk arrives in India

কামাখ্যা মন্দিরে প্রার্থনারত ভূটানের রাজা জিগমে ওয়াংচুক। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।

প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভুটান এবং চিনের মধ্যে সীমান্ত-বিবাদ নিষ্পত্তি নিয়ে সাত বছর পর নতুন উৎসাহে আলোচনা শুরু হয়েছে। উঠছে ডোকলামের কথা। ভারতের রণকৌশলগত নিরাপত্তার সঙ্গে যা সরাসরি যুক্ত। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আট দিনের সফরে, শুক্রবার ভারতে এসে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসর নামিগিয়েল ওয়াংচুক।

তিন দিনের গুয়াহাটি সফর সেরে রাজা যাবেন মুম্বই। তারপর নয়াদিল্লি পৌঁছে ভারতের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি।

এই প্রথম রাজা জিগমে ওয়াংচুক গুয়াহাটি সফরে এলেন। শুক্রবার বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। সেখান থেকেই কামাখ্যা মন্দিরে যান রাজা জিগমে। পরে হিমন্তের সঙ্গে তাঁর সৌজন্য বৈঠক হয়। ভুটানের সঙ্গে অসমের ২৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। ১৯৯০ থেকে দুই দশক ধরে অসমের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন ভুটানে ঘাঁটি গাড়ায় দুই পড়শির সম্পর্কেও প্রভাব পড়ে। ভুটানে ঢুকে দফায়-দফায় অভিযানও চালিয়েছে ভারতীয় সেনা।

কূটনৈতিক শিবিরের মতে, সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয়টি রাজার সফরের আলোচ্যসূচির কেন্দ্রে থাকতে চলেছে। সম্প্রতি নয়াদিল্লির চাপ বাড়িয়ে একটি বিবৃতিতে চিন জানিয়েছে, সীমান্ত সমস্যা মেটানোর প্রশ্নে থিম্পু এবং বেজিংয়ের ঐকমত্য হয়েছে। এ ব্যাপারে দু’দেশের মধ্যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া দ্রুত এগোচ্ছে বলে জানিয়েছে শি জিনপিং সরকার। সাউথ ব্লক এই প্রক্রিয়ার দিকে নজর রেখে চলছে বলেই খবর। কারণ, চিন-ভুটান সীমান্ত সমস্যা সমাধানের সঙ্গে ত্রিদেশীয় সীমান্তে অবস্থিত ডোকলাম উপত্যকার আধিপত্য সরাসরি যুক্ত।

প্রসঙ্গত, চিন ও ভুটানের মধ্যে সে ভাবে জোরদার কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। কিন্তু দুই দেশের আধিকারিকরা নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। আর সম্প্রতি নতুন উদ্যমে এই যোগাযোগ বাড়ানো হয়েছে। সূত্রের খবর, জিগমের সঙ্গে নয়াদিল্লির বৈঠকে ভারত তার উদ্বেগের কথা তুলে ধরবে বিশদে।

ভারত, ভুটান আর চিন— এই তিনটি দেশের সীমান্তে অবস্থিত অপ্রশস্ত মালভূমি এই ডোকলাম। ভারত আর ভুটান, দুই দেশই দাবি করে যে এই মালভূমিটি ভুটানের অংশ। ১৯৬২-র ভারত-চিন যুদ্ধের পর থেকেই চিন দাবি করে আসছে যে ডোকলাম তাদের এলাকা। তারা ওই অঞ্চলে একটি রাস্তা তৈরির কাজ চালাচ্ছিল ২০১৭ সালে, তখনই ভুটানের রাজকীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা চিনা বাহিনীকে বাধা দেয়। এর দু’দিন পরে ভুটানের আর্জিতে সাড়া দিয়ে ভারতীয় বাহিনী অস্ত্র আর বুলডোজার নিয়ে সেখানে হাজির হয়। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে ডোকলাম নিয়ে চিনের সঙ্গে ভুটান আর ভারতের বিবাদ চলেছিল। ডোকলামে চিনের কর্তৃত্ব স্থাপিত হলে ভারতের শিলিগুড়ি করিডরের খুব কাছে চলে আসবে চিনা বাহিনী। সে কারণে ডোকলাম এলাকাটি ভুটানের বলে থিম্পু আর দিল্লি দাবি করলেও তা ভারতের কাছে সামরিক কৌশলগত কারণে অতি গুরুত্বপূর্ণ। ফলে বেজিং এবং থিম্পুর মধ্যে চলতি কূটনৈতিক রসায়নটি কী, সেটাই রাজার সফরে আঁচ করতে চাইবে মোদী সরকার।

এ দিকে, রাজার অসম সফরকালে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত এ দিন বলেন, “আমাদের দু’দেশের মধ্যে সুপ্রাচীন কালের বন্ধন রয়েছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্র, শিক্ষা ও পরিকাঠামোগত অংশীদারির পাশাপাশি অসম ও ভুটানের মানুষের আধ্যাত্মিক মেলবন্ধনও উল্লেখযোগ্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতি নিয়ে এখানকার মানুষের উৎসাহের কথা ভুটানরাজকে জানাতে পেরে আমি আনন্দিত।”

শুক্রবার রাজ্যপাল গুলাবচাঁদ কাটারিয়া ভুটানরাজের সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করেন। শনিবার সকালে অসমে পাঠরত ভুটানের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মত বিনিময়ের পরে তিনি কাজিরাঙায় যাবেন। সেখানে জিপ সাফারির পরে রাতে ভুটানরাজের সম্মানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে অসম সরকার। রবিবার সকালে হাতি সাফারির পরে তিনি রওনা দেবেন মুম্বইয়ে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bhutan India King

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy