E-Paper

ভেঙে ফেলা হচ্ছে বিধানচন্দ্র রায়ের শিলংয়ের বাড়ি

যা সার্কিট হাউস নামে পরিচিত, আদতে তা পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা আধুনিক শিলংয়ের অন্যতম রূপকার বিধানচন্দ্র রায়ের বাড়ি। ১৮৮২ সালে বিহারের পটনায় জন্ম হয় বিধানচন্দ্র রায়ের, তবে তাঁর পৈতৃক শিকড় বর্তমান বাংলাদেশের সাতক্ষীরায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:২৬
শিলংয়ে বিধানচন্দ্র রায়ের সেই বাড়ি।

শিলংয়ে বিধানচন্দ্র রায়ের সেই বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

শিলং শহরের লাবানে কেনচেস ট্রেস এলাকায় অবস্থিত সার্কিট হাউস ভেঙে ফেলতে চলেছে মেঘালয় সরকার। ওই বাড়ি ভাঙা হলে নিশ্চিহ্ন হবে বাড়ির সঙ্গে জড়িত বাঙালির বহু ইতিহাসও।

এখন যা সার্কিট হাউস নামে পরিচিত, আদতে তা পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা আধুনিক শিলংয়ের অন্যতম রূপকার বিধানচন্দ্র রায়ের বাড়ি। ১৮৮২ সালে বিহারের পটনায় জন্ম হয় বিধানচন্দ্র রায়ের, তবে তাঁর পৈতৃক শিকড় বর্তমান বাংলাদেশের সাতক্ষীরায়। তাঁর বাবা প্রকাশচন্দ্র রায় শিলংয়ে ব্রাহ্ম সমাজের প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং এই সূত্রেই রায় পরিবারের শিলংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। ১৯২০ সালে শিলংয়ে এসে বিধানচন্দ্র পাহাড় ও বনভূমি পরিবেষ্টিত শান্ত লাবান অঞ্চলে ওই বাড়ি তৈরি শুরু করেন। তা বিধান ভবন বা রায় ভিলা নামে পরিচিত ছিল। শিলং তখন ছিল অবিভক্ত অসমের রাজধানী। শুধু চিকিৎসাক্ষেত্রে নয়, শিলংয়ের আধুনিকীকরণেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন বিধানচন্দ্র। তিনি শিলং শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য জলপ্রপাতে টারবাইন বসিয়ে তৈরি করেন শিলং হাইড্রোইলেকট্রিক কোম্পানি, যা পরে মেঘালয় বিদ্যুৎ বোর্ড নামে পরিচিত হয়। ১৯২৩ সালে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন ময়ূরভঞ্জের মহারানি সুচারু দেবী।

ওই বছরেরই মে মাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলংয়ে ‘জিৎভূমি’ বাংলোয় থাকতে এসেছিলেন— জানালেন শিলংয়ে ঐতিহ্যবাহী ভবনগুলির সংরক্ষণ নিয়ে লড়াই চালানো মালবিকা বিশারদ। বিধান ভবনেও যেতেন রবীন্দ্রনাথ। সে বছর বিধান ভবনেই রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন পালিত হয়েছিল। ১৯২৯ সালের জুন মাসে সুভাষচন্দ্র বসু তৃতীয় বার শিলং সফরে এসে বিধান ভবনেই ছিলেন এবং এই বাড়ি থেকে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী বাসন্তী দেবীকে চিঠিও লিখেছিলেন। মালবিকার মতে, এমন গুরুত্বপূর্ণ ভবনকে সংরক্ষণের বদলে ভেঙে ফেলা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। প্রয়োজনে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এ নিয়ে হস্তক্ষেপ করুক।

উল্লেখ্য, ঐতিহ্যবাহী তারাঘর ভেঙে নতুন স্টেট গেস্ট হাউস নির্মাণ নিয়েও ব্যাপক বিতর্ক হয়েছে। সম্প্রতি শিলংয়ের মণিপুর রাজবাড়ি ভেঙে ফেলা নিয়েও চলছে প্রতিবাদ। পূর্ত দফতরের এক আধিকারিক জানান, বর্তমান সার্কিট হাউসটি ভেঙে নতুন কংক্রিটের ভবন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও ভবনের কিছু অংশে এখনও পুরনো স্থাপত্যের ছাপ রয়েছে, কিন্তু দফায় দফায় সরকারি ব্যবস্থাপনা ও আধিকারিকদের থাকার সুবিধার জন্য সেখানকার ঘরগুলির গঠন ও নকশায় নানা পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু জায়গায় চাহিদা বাড়তে থাকায় আর পুরোনো আমলের সার্কিট হাউসটি রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Shillong heritage

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy