E-Paper

রিলস বানিয়ে সংসার চালাব? মোদীকে প্রশ্ন পরিযায়ীদের

শহরের সীমানা পেরিয়ে মুজফ্ফ‌রপুর জেলার লিচুবাগান ঘেরা গ্রাম পেরিয়ে দলিত মহল্লায় ঢুকলে দেখা মিলবে বিকাশ রাজ, রাজু পাসোয়ানদের সঙ্গে।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৫ ০৬:২১
বিহারে প্রথম দফার ভোটে দানাপুরের একটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ভোটদাতারাও। বৃহস্পতিবার পটনায়।

বিহারে প্রথম দফার ভোটে দানাপুরের একটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ভোটদাতারাও। বৃহস্পতিবার পটনায়। ছবি: পিটিআই।

‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এর আগে বলেছিলেন, পকোড়া বেচে রোজগার করতে। এখন উনি বলছেন, সস্তায় ইন্টারনেটের ডেটা মিলছে। তাই রিলস বানিয়ে রোজগার করতে। পড়াশোনা শিখে সরকারি চাকরি করব বলে আশা ছিল। এখন কি রিলস বানিয়ে সংসার চালাতে হবে?”

বিরক্ত মুখে প্রশ্ন করছিলেন মুজফ্ফ‌রপুর শহরের ধীরজ কুমার। ভূগোলের স্নাতক এখন সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। হাতখরচ চালাতে বাড়িতে ছাত্র পড়ান। তাঁর বন্ধু রবীন্দ্র প্রসাদ বললেন, ‘‘এনডিএ বলেছে, ফের ক্ষমতায় এলে সীতামঢ়ীতে জানকী মন্দির তৈরি করবে। এ দিকে কারখানার বেলায় অমিত শাহ বলছেন, বিহারে জমি নেই। তা হলে মন্দিরের জন্য জমি আসবে কোথা থেকে?”

শহরের সীমানা পেরিয়ে মুজফ্ফ‌রপুর জেলার লিচুবাগান ঘেরা গ্রাম পেরিয়ে দলিত মহল্লায় ঢুকলে দেখা মিলবে বিকাশ রাজ, রাজু পাসোয়ানদের সঙ্গে। কেউ পুণে, কেউ গুরুগ্রামে দিনমজুরির কাজ করেন। বিহার থেকে ভিন্‌ রাজ্যে যাওয়া লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে তাঁরাও রয়েছেন। ছট পুজোর সময় গ্রামে ফিরেছেন। আবার ভোট দিয়ে ফিরে যাবেন। কিন্তু একই মহল্লার সুনীল পাসোয়ান কবে কাজ করতে ফিরে যাবেন, এখনও ঠিক নেই। সুনীল কাজ করতেন হিমাচল প্রদেশে। ‘বিহারি শ্রমিকরা কম টাকায় কাজ করে হিমাচলিদের রুটিরুজিতে ভাগ বসাচ্ছে’ বলে বিক্ষোভের জেরে সুনীলকে গ্রামে ফিরতে হয়েছে। এখন অন্য কোনও রাজ্যে কাজ পাওয়ার জন্য ঠিকাদারদের ফোনের অপেক্ষায় দিন কাটছে। পাশ থেকে রাজু বলেন, ‘‘আমরা সত্যিই অন্য রাজ্যে গিয়ে ১০ টাকার কাজ ৮ টাকায় করতে রাজি হয়ে যাই। আপত্তি তো উঠবেই।’’

এ বার বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে বেকারত্ব ও রাজ্যের মানুষকে পেট চালাতে ভিন্‌ রাজ্যে যেতে বাধ্য হওয়া বা ‘পলায়ন’-এর সমস্যা স্পষ্ট কলেজের গণ্ডি পেরোনো ধীরজ থেকে ভিন্‌ রাজ্যে কাজ করে পেট চালানো রাজু, সুনীলদের কথায়। বৃহস্পতিবার বিহারের প্রথম দফায় ভোটগ্রহণের পরে আগামী মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফায় ভোট দিতে যাওয়ার সময়ে তরুণ প্রজন্ম ও খেটে খাওয়ার মানুষের মনে এই নিয়েপ্রশ্ন থাকবে।

২০১১-র জনগণনা অনুযায়ী, বিহারের ১০ কোটি মানুষের মধ্যে ৭৫ লক্ষ ভিন রাজ্যে কাজ করতেন। এখন বিহারের জনসংখ্যা আনুমানিক ১২ থেকে ১৩ কোটির কাছাকাছি। কেন্দ্রীয় সরকারের ই-শ্রম পোর্টাল অনুযায়ী এর মধ্যে ৩ কোটি ১৮ লক্ষ মানুষ অন্য রাজ্যে কাজ করেন। নির্বাচন কমিশনের হিসেব, বিহারের ৭ কোটি ৪১ লক্ষ ভোটারের ৪৬ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩৯ বছরের মধ্যে। শহরের তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১০ শতাংশের বেশি। নির্বাচনে রুটিরুজি তাঁদের সামনে বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।

পটনা থেকে মুজফ্ফ‌রপুর পর্যন্ত সড়কের দু’পাশের গ্রাম বা কসবায় ঢুকলে টের পাওয়া যায়, এর অনেকটাই কৃতিত্ব প্রশান্ত কিশোরের। জন সুরাজ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা বিহারের বেকারত্ব, রুটিরুজির অভাব ও পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা ভোটের ময়দানে তুলে ধরেছেন। সবাই মোবাইলে তাঁর বক্তৃতা, সাক্ষাৎকার শুনছেন। সমস্তিপুরে প্রচারে গিয়ে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ‘‘সস্তায় ইন্টারনেটের ফায়দা বিহারের তরুণরা তুলেছে। রিলস বানিয়ে রোজগার করছেন তাঁরা। এটা বিজেপি তথা এনডিএ-র নীতির কৃতিত্ব।’’ প্রশান্ত কিশোর তাঁর জবাবে বলেছেন, ‘‘সস্তায় ডেটা নয়, ঘরে বেটা চাই। ঘরের ছেলে ঘরে থেকে রোজগার করবে। মা-বাপকে ভিডিয়ো কলে ছেলের সঙ্গে কথা বলতে হবে না।’’ চাকরির জন্য উপযুক্ত মানের শিক্ষার কথাও বলছেন প্রশান্ত।

তরুণ প্রজন্মকে তেজস্বী যাদব আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁর সরকার ক্ষমতায় এলে প্রতিটি পরিবারে এক জনের সরকারি চাকরি হবে। মুজফ্ফ‌রপুরের সবথেকে পুরনো এল এস কলেজের অঙ্কের ছাত্রী সুনীতা কুমারী সন্দিহান। ‘‘এত জনকে সরকারি চাকরি দেওয়া কি সম্ভব? বরং প্রশান্ত কিশোর যে ভাবে ভিন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া আটকাতে চাইছেন, সেটা বিশ্বাসযোগ্য। তবে উনি এ বার সরকার গড়তে পারবেন বলে মনে হয় না।”

এনডিএ কী দিশা দেখাচ্ছে? অমিত শাহ বিহারে প্রচারে গিয়ে ‘ডিফেন্স করিডর’ থেকে প্রতি জেলায় কারখানা তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু একই সঙ্গে বিহারে জমির সমস্যার দিকে আঙুল তুলেছেন। বিজেপির অভিযোগ, বিহারের মানুষ কারখানা চান, কিন্তু জমি দিতে চান না। মুজফফরপুরের ব্রহ্মপুরা গ্রামে মাল্লা, নিষাদ সম্প্রদায়ের বাস। ইবিসি বা অতীব অনগ্রসর শ্রেণির আওতাভুক্ত। মাছের চাষ, নৌকা চালানো নিয়ে বুড়ি গণ্ডক নদীর ঢেউয়ের সঙ্গে তাঁদের জীবন ওঠানামা করে। নিষাদদের গ্রামের মুখিয়া বিপুল সাহনি বলেন, ‘‘জমির মালিক তো ব্রাহ্মণ, ভূমিহার, যাদবরা। আমাদের কাছে জমিই নেই। থাকলে কারখানার জন্য দিয়ে দিতাম। ছেলেপুলেগুলোকে দু’দিন ধরে ট্রেনে বসে অন্ধ্র বা পুণেতে কাজ করতে যেতে হত না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Muzaffarpur Bihar Bihar Assembly Election 2025

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy