Advertisement
E-Paper

৩০ বছরের জলযুদ্ধ, একাই কাটলেন খাল

বৃষ্টির জল ধরে রাখতে খাল কেটেই কাটিয়ে দিলেন জীবনের অর্ধেকটা!

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৫৫
লড়াকু: ঝুড়ি, কোদাল নিয়ে লউঙ্গী ভুইয়াঁ।

লড়াকু: ঝুড়ি, কোদাল নিয়ে লউঙ্গী ভুইয়াঁ।

মহারাষ্ট্রের খরাপ্রবণ লাতুরের জলযুদ্ধে প্রবাসী ‘গ্রামের ছেলে’ দত্তা পাটিল পাশে পেয়েছিলেন গোটা গ্রামকে। সুদূর ক্যালিফর্নিয়ায় বসে একটা পাওয়ার-পয়েন্ট প্রজেক্ট বানিয়ে নিজের সংস্থার থেকেও তিন বছরের জন্য পুরো এক কোটি টাকার অনুদান জোগাড় করে ফেলেছিলেন ইয়াহুর এঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডিরেক্টর পাটিল। কিন্তু ৩০ বছর ধরে একই রকম জলযুদ্ধে বিহারের গয়া জেলার লউঙ্গী ভুইয়াঁ ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’। বৃষ্টির জল ধরে রাখতে খাল কেটেই কাটিয়ে দিলেন জীবনের অর্ধেকটা!

একার লড়াইয়ে দিনবদল! ‘মাউন্টেনম্যান’ দশরথ মাঁঝির পরে লউঙ্গীর দৌলতে ফের শিরোনামে গয়া। ৭০ কিলোমিটার পথ উজিয়ে স্ত্রীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারেননি। সেই তাড়না থেকেই পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরির রোখ চেপে গিয়েছিল দশরথের। ১৯৬০ থেকে ১৯৮২— টানা বাইশ বছর একার হাতে পাহাড় কেটেছিলেন ‘মাউন্টেনম্যান’। ৩৬০ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট চওড়া রাস্তা তৈরি করে ৭০ কিলোমিটারের দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটারে নামিয়ে এনেছিলেন গহলৌর গ্রামের

দশরথ। আর কোঠীলাওয়া গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব ‘তরুণ’ লউঙ্গীর কাটা খালে এখন ভরপুর গ্রামের পুকুর। সেই জলে চাষ হচ্ছে, তেষ্টা মিটছে গৃহপালিত পশুদেরও।

বিস্তর লোকবল আর অর্থে কার্যত রাতারাতি ‘ইতিহাস’ তৈরি করেছেন পাটিল। বৃষ্টির জল ধরে রাখতে ১৩টি চেক-বাঁধ আর ১৫০০ হেক্টরের জলাশয় তৈরিতে গ্রামের মানুষের সঙ্গে পাটিল নিজেও কোদাল ধরেছিলেন সুযোগ-সুবিধা মতো। গয়ার লউঙ্গী কিন্তু একা-একা শুধু কোদালই চালিয়ে গিয়েছেন এত দিন। ‘ফাঁকা সময়ে’ গরু চরিয়েছেন গ্রামের লাগোয়া জঙ্গলে। গয়া জেলাসদর থেকে ৮০ কিলামিটার দূরে মাওবাদীদের ‘নিরাপদ আশ্রয়’ হিসেবে কুখ্যাত ওই গ্রাম থেকে জানালেন, ‘‘এক দিনের জন্যও পাশে কেউ ছিল না। চোখের সামনে দেখতাম, আমার বয়সি গ্রামের ছেলেরা সব শহরে পালাচ্ছে চাকরির খোঁজে। আমি কিন্তু মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছি। শুধু নিজের জন্য নয়, প্রয়োজনটা যে সবার। তাই সবাই দূরে থাকলে হবে কী করে?’’ সংবাদমাধ্যমকে বৃদ্ধ

জানালেন, কী ভাবে তিনি রোজ সকাল হলেই ঝুড়ি-কোদাল আর গৃহপালিত পশুদের নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। বেলা বাড়লে রোদ চড়ত। গাছের ছায়ায় খানিক জিরিয়ে নিয়েই ফের শুরু হত খাল কাটার কাজ।

পাহাড়ে জমে থাকা বৃষ্টির জল কারও কাজে লাগে না। তাই গোড়াতেই লউঙ্গী পণ করে নিয়েছিলেন, খাল কেটে এই জল গ্রামের পুকুরে আনতেই হবে। আজ গ্রামের সবাই লউঙ্গীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। স্থানীয় চিকিৎসক থেকে রাজনীতিবিদ ছাত্র সবাই বলছেন, ‘‘কাকার ক্ষমতা আছে বলতে হবে।’’ ৩০ বছর কিন্তু একাই খাল কেটে গিয়েছেন ‘একগুঁয়ে’ লউঙ্গী।

Laungi Bhuiyan Bihar Canal Farming Irrigation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy