এমনটা যে হতে চলেছে, তা আগেই অনুমান করা গিয়েছিল। হলও তা-ই। আরজেডি নেতা তথা বিহারের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবকেই এ বারের নির্বাচনে বিরোধী শিবিরের ‘মুখ্যমন্ত্রী মুখ’ হিসাবে বেছে নেওয়া হল। বৃহস্পতিবার পটনা থেকে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে এই ‘ঐকমত্যে’র কথা ঘোষণা করল বিহারের ‘মহাগঠবন্ধন’ (বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’য় বিহারের শরিক দলগুলির জোট এই নামেই পরিচিত)। উপমুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে বিকাশশীল ইনসান পার্টির (ভিআইপি) নেতা মুকেশ সাহানিকে।
আসন সমঝোতা থেকে শুরু করে বৃহস্পতিবারের যৌথ সাংবাদিক বৈঠক শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত বিতর্ক পিছু ছাড়েনি ‘মহাগঠবন্ধন’কে। বিহারের তিনটি আসনে দুই প্রধান বিরোধী দল আরজেডি এবং কংগ্রেস, উভয়েই প্রার্থী দিয়েছে। বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, ওই আসনগুলিতে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা’ হবে তাদের মধ্যে। তবে ভোটের ল়ড়াইয়ে এমন ‘বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা’ নিয়ে তাদের খোঁচা দিতে শুরু করেছে বিজেপি এবং জেডিইউ। বৃহস্পতিবার যৌথ সাংবাদিক বৈঠকের মঞ্চের পিছনে যে হোর্ডিংটি ব্যবহার হয়েছে, সেখানেও ছিল শুধু তেজস্বীর ছবি। বিরোধী জোটের অন্য দলগুলির নেতাদের কোনও ছবি ছিল না সেখানে। তা নিয়েও বিতর্ক দানা বাঁধে। এ অবস্থায় যৌথ সাংবাদিক বৈঠক থেকে বিরোধী শিবির নিজেদের মধ্যে ‘ঐকমত্য’ তুলে ধরার চেষ্টা করল বলেই মনে করা হচ্ছে।
পটনার ওই সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস কংগ্রেস হাইকমান্ডের দূত তথা রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত। ‘মুখ্যমন্ত্রী মুখ’ হিসাবে তেজস্বীর নামও তিনিই ঘোষণা করেন। আরজেডি নেতা ‘তরুণ’ এবং ‘কাজের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ বলেই তাঁকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জানান গহলৌত। বিজেপির উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমি অমিত শাহকে বলতে চাই, আমাদের নেতা তেজস্বী যাব। এ বার তাদের (শাসক জোট ‘এনডিএ’-র) মুখ্যমন্ত্রী পদের মুখ নিশ্চিত করে ফেলা উচিত।”
তেজস্বীকে মুখ্যমন্ত্রী পদের মুখ হিসাবে ঘোষণা করার পাশাপাশি বিকাশশীল ইনসান পার্টির প্রধান মুকেশ সাহানিকে বিরোধী জোটের উপমুখ্যমন্ত্রী পদের মুখ হিসাবে ঘোষণা করা হয়। তবে পরে উপমুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য আরও নাম ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার যৌথ সাংবাদিক বৈঠকের মঞ্চে গেহলৌত, তেজস্বীদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এমএল) নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্যও। যৌথ সাংবাদিক বৈঠক শেষে বেরোনোর সময়ে তিনি বলেন, “বিহারের মতো একটি বড় রাজ্যে, প্রয়োজন অনুসারে ‘উপমুখ্যমন্ত্রী মুখ’ ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম হয়ত, আরও বেশি সংখ্যক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। কিন্তু এ বার জোট বড় হয়েছে। তাই আমরা কম আসনে, ২০টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। তবে আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করব।”
আরও পড়ুন:
আসন সমঝোতা নিয়ে জটের মাঝে অনেকটা দেরি করে প্রার্থিতালিকা প্রকাশ করেছে আরজেডি। শুরুর দিকে কংগ্রেস এবং আরজেডি উভয়েই আনুষ্ঠানিক প্রার্থিতালিকা প্রকাশ না-করেই নিজেদের মতো করে কিছু আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিয়েছিল। পরে অবশ্য তারা প্রার্থিতালিকা প্রকাশ করেছে। তবে ‘মহাগঠবন্ধন’-এর সমীকরণ কতটা মসৃণ রয়েছে, তা নিয়ে তখন থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে সেই বিতর্কে ইতি টানার চেষ্টা করলেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা গহলৌত। তিনি বলেন, “(মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য) তেজস্বীর নাম আসবে, এটাই স্বাভাবিক। রাহুল গান্ধী এবং অন্য সকলের মনেই তেজস্বীর নামই ছিল। তেজস্বীই হবেন আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর মুখ।”
বিরোধী জোট থেকে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার পরে তেজস্বী বলেন, “আমরা যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করলাম। কিন্তু ‘এনডিএ’তে নীতীশ কুমারের সঙ্গে অবিচার করা হচ্ছে। তারা একটিও যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করেনি। তাদের মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও করা হয়নি। আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি, বিজেপির লোকেরা নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রী করতে চাইছেন না।” কেন এখনও পর্যন্ত নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করল না এনডিএ শিবির, তা নিয়েও বিজেপির উদ্দেশে প্রশ্ন তোলেন আরজেডি নেতা।
বৃহস্পতিবার নওয়াদা এবং মধুবনী জেলার দুই কেন্দ্র থেকে প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র প্রার্থীরা। নওয়াদার বারিসলিগঞ্জ থেকে কংগ্রেস প্রার্থী সতীশ কুমার এবং মধুবনীর বাবুবরহী থেকে ভিআইপি প্রার্থী বিন্দু গুলাব যাদব সরে দাঁড়িয়েছেন।