রাজ্য শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানাবিধ অভিযোগে ভোটের মুখে জেরবার বিজেপি শিবির। তারই মধ্যে আসন নিয়ে দর কষাকষির প্রশ্নে অনড় এলজেপি দলের নেতা রামবিলাস পাসোয়ানের পুত্র চিরাগ। শুধু তাই নয়, যে ভাবে নেতা হিসেবে চিরাগ জনতার মধ্যে সাড়া পাচ্ছেন, তা চিন্তায়রেখেছে বিজেপিকে।
নিজেকে চিরাগ পরিচয় দেন নরেন্দ্র মোদীর হনুমান হিসাবে। কিন্তু গত বারের মতোই আসন নিয়ে দর কষাকষির প্রশ্নে আপসে যেতে নারাজ তিনি। পাঁচ বছর আগে নীতীশ কুমারের সঙ্গে বিবাদের জেরে জেডিইউ যে আসনগুলিতে প্রার্থী দিয়েছিল, তাতে এনডিএ-র জোট শরিক হয়েও প্রার্থী দিয়েছিলেন চিরাগ। যদিও ১৩৭টি আসনে লড়ে জেতেন একটি মাত্র আসনে। তবে গত লোকসভা নির্বাচনে বিহারে পাঁচটি কেন্দ্রে জেতে এলজেপি। মোট ভোটের প্রায় ৬.৬ শতাংশ পায়।
লোকসভার ওই ফলাফলে এ যাত্রায় উজ্জীবিত চিরাগ। এ বারে অন্তত ৪০টি আসনে লড়ার প্রশ্নে অনড়। বিহারের ৩৮টি জেলাতেই অন্তত এক জন প্রার্থী যে দিতে চান, তা ইতিমধ্যেই বিজেপিকে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। চিরাগের কথায়, ‘‘নবরাত্রির মধ্যে আসন নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হবে। কিন্তু সম্মানের প্রশ্নে সমঝোতা হবে না।’’ রাজনীতিকদের মতে, চিরাগ উচ্চাকাঙ্ক্ষী নেতা। পিতার বিপরীত চরিত্রের। রামবিলাস কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে অনেক সাবলীল ছিলেন। রাজ্য-রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাতেন না।
কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য হলেও,চিরাগের আসল লক্ষ্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া। যা পূরণে এ যাত্রায় ৪০ আসনে লড়ে অন্তত ২৫টি আসনে জেতার ছক কষেছেন তিনি। চিরাগ ভাল করেই জানেন, তিনি যদি ২৫টি আসন জিততে পারেন, শরিক নেতা হিসেবে এনডিএর উপমুখ্যমন্ত্রী পদ তাঁর বাঁধা। যা তাঁকে ভবিষ্যতে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসার রাস্তা খুলে দেবে। আবার বিজেপির করা একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এনডিএ নেতাদের মধ্যে নীতীশের পরেই জনতার পছন্দ চিরাগ। সেই অর্থে বিজেপিরকোনও নবীন নেতা চিরাগেরধারে কাছে নেই। যিনি তা থাকতে পারতেন, বিজেপির উপমুখ্যমন্ত্রীসেই সম্রাট চৌধুরী সপ্তম শ্রেণি ফেল বলে সরব হয়েছেন জন সুরাজ দলের নেতা প্রশান্ত কিশোর। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ জায়সওয়ালের বিরুদ্ধে হত্যার মামলায় জড়িতথাকা ও সংখ্যালঘু মেডিক্যাল কলেজ দখল নেওয়ার অভিযোগ করেসরব প্রশান্ত।
এ সব ক্ষেত্রে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের নীরবতা দলের ভাবমূর্তির পক্ষে ক্ষতিকর বলে সরব হয়েছেন বিজেপির নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আর কে সিংহ। তাঁর কথায়, ‘‘অভিযোগগুলির জবাব না দেওয়ায় দলের গ্রাফ নিম্নমুখী হচ্ছে। প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ। অভিযুক্ত নেতাদের উচিত ইস্তফা দিয়ে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করা। তা না করলে দলেরই ক্ষতি।’’ রাজনীতিকদের মতে, ভোটের আগে রাজ্য নেতৃত্বের প্রতি আর কে সিংহের অনাস্থা স্পষ্ট করে দিয়েছে, বিহারে প্রবল ভাবে দলীয় কোন্দলে ভুগছে পদ্ম শিবির।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)