Advertisement
E-Paper

সাত চালেই হরিয়ানা বিজেপির

লালের গড়ে গেরুয়া পতাকা ওড়ালেন নরেন্দ্র মোদী। ইতিহাসে এই প্রথম। যে হরিয়ানায় এক সময়ে ভজনলাল, বংশীলাল, দেবীলাল এই তিন লাল রাজ করে এসেছেন; যেখানে আজও তাঁদেরই উত্তরাধিকারীদের রমরমা, সেখানেই একার জোরে এই প্রথম সরকার গড়তে চলেছে বিজেপি। যে রাজ্যে গত বিধানসভা নির্বাচনেও মাত্র চারটি আসনে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল বিজেপিকে, সেখানেই আজ নরেন্দ্র মোদীর হাওয়া ও অমিত শাহের কৌশলে তছনছ হল লালেদের সংসার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০৫

লালের গড়ে গেরুয়া পতাকা ওড়ালেন নরেন্দ্র মোদী।

ইতিহাসে এই প্রথম। যে হরিয়ানায় এক সময়ে ভজনলাল, বংশীলাল, দেবীলাল এই তিন লাল রাজ করে এসেছেন; যেখানে আজও তাঁদেরই উত্তরাধিকারীদের রমরমা, সেখানেই একার জোরে এই প্রথম সরকার গড়তে চলেছে বিজেপি। যে রাজ্যে গত বিধানসভা নির্বাচনেও মাত্র চারটি আসনে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল বিজেপিকে, সেখানেই আজ নরেন্দ্র মোদীর হাওয়া ও অমিত শাহের কৌশলে তছনছ হল লালেদের সংসার। আর রাজ্যে গত দশ বছরের শাসক কংগ্রেস এমনই মুখ থুবড়ে পড়ল যে, প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদাটিও ধরে রাখতে পারল না। হেরে গেলেন ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা সরকারের ৯ জন মন্ত্রী।

উত্তর ভারতের দল হয়েও হরিয়ানার মতো রাজ্যে বরাবর ছোট দল হিসেবেই গণ্য হত বিজেপি। কিন্তু কেন্দ্রে সরকার গড়ার পর এ রাজ্যের ভোট-অঙ্কটাই আগাগোড়া বদলে ফেলতে চেয়েছেন মোদী-অমিত জুটি। মূল দুটি বিষয়কে তাঁরা মাথায় রেখেছেন। প্রথমত, হরিয়ানায় দাপট জাঠেদের। প্রায় ২৬ শতাংশ ভোট তাঁদের। কিন্তু এর বাইরেও একটি বড় অংশ রয়েছে, যাঁরা বরাবরই জাঠেদের দাপটের কাছে নিজেদের শোষিত মনে করেছেন। বিশেষ করে রাজ্যের ২০ শতাংশ দলিত। ভোট ময়দানে নেমে তাই প্রথমে এই বৃহৎ অ-জাঠ অংশকেই কাছে টানার চেষ্টা করেছেন দুই কুশীলব। দ্বিতীয়ত, হুডা সরকারের বিরুদ্ধে হাওয়া একটা ছিলই। তাতে ভর করে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠছিলেন দেবীলালের ছেলে ওমপ্রকাশ চৌটালা। জাঠেদের মধ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বাড়তে দেখে তা মোকাবিলা করা বিজেপির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। ভোটের মাসখানেক আগে ভজনলাল-পুত্র কুলদীপ বিষ্ণোইয়ের হরিয়ানা জনহিত কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ভেঙে যায় বিজেপির। তা সত্ত্বেও কোনও জোটসঙ্গী ছাড়া জাঠ ও অ-জাঠ, দুই গোষ্ঠীরই মন জয়ের অগ্নিপরীক্ষায় নামেন মোদী-অমিত। সেই লক্ষ্যে তৈরি করেন সাত দফা কৌশল।

কী সেই কৌশল? এক, ভোটের আগে কোনও মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা না করা। এমনিতে হরিয়ানায় তেমন কোনও মুখ ছিল না বিজেপির কাছে। কিন্তু মোদী-অমিত জুটি জানতেন, জাঠ বা অ-জাঠ, যাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করা হোক না কেন, তাতে অন্য অংশ বিরূপ হবে।

দুই, জাঠ অধ্যুষিত এলাকায় বেছে বেছে ২৬ জন জাঠ প্রার্থী দাঁড় করানো। ক্যাপ্টেন অভিমন্যুর মতো প্রভাবশালী নেতা যাঁদের মধ্যে অন্যতম। এই সব এলাকায় গিয়ে জাঠদের উন্নয়নের স্বপ্ন দেখান মোদী। বলেন, কেন্দ্রে ও রাজ্যে বিজেপি থাকলে শুধু তারাই জাঠেদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে।

তিন, অ-জাঠ এলাকায় গিয়ে ভোটারদের চৌটালা জমানার ভয় দেখান মোদী। বলেন, চৌটালা এলে ফের আইন-শৃঙ্খলা ভাঙবে। জাঠেদের দাপট বাড়বে। এই বিষয়টি উস্কে দিয়ে অ-জাঠদের উন্নয়নের মসীহা হিসেবেও নিজেকে তুলে ধরেন তিনি।

চার, দলিতদের মন জয় করার জন্য অমিত শাহ দলের সব দলিত সাংসদকে হরিয়ানায় ঘাঁটি গাড়তে বলেন। সাংসদরা দলিত অধ্যুষিত এলাকায় রাত্রিবাস করতেন, একসঙ্গে দলিতদের ঘরে খেতেন, সকাল-সন্ধে একসঙ্গে ভজন করতেন।

পাঁচ, মধ্যপ্রদেশ থেকে কৈলাস বিজয়বর্গীয়-র মতো নেতাকে উড়িয়ে এনে হরিয়ানার ধর্মগুরুদের সমর্থন হাসিল করেন বিজেপি নেতৃত্ব। এর ফলে ডেরা সচ্চা সওদার মতো ধর্মীয় সংগঠনের সমর্থনও বিজেপির ভাগ্যে জুটেছে। হরিয়ানার বিশাল এলাকায়, বিশেষ করে দলিতদের মধ্যে প্রভাব রয়েছে এই সংগঠনের।

ছয়, একই ভাবে আহির, গুর্জর, পঞ্জাবি, ব্রাহ্মণদের মতো প্রভাবশালী সম্প্রদায়ের ভোট জেতার জন্য সংশ্লিষ্ট নেতাদের কাজে লাগান অমিত শাহ। কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে আসা আহির নেতা রাও ইন্দ্রজিৎ সিংহ, রামবিলাস শর্মা, অনিল ভিজের মতো ব্রাহ্মণ নেতাদের দিয়েও বাজিমাত করেন তিনি।

এবং সাত, প্রচারের শেষ লগ্নে ওমপ্রকাশ চৌটালা জেলে যাওয়ার ফায়দা তোলে বিজেপি। এমনকী জেলে যাওয়ার আগে চৌটালা নিজেই অভিযোগ করেন, মোদী তাঁর জনপ্রিয়তায় ভয় পেয়েই সিবিআইকে দিয়ে তাঁকে জেলে পাঠাচ্ছেন। স্বভাবতই সেই অভিযোগ খণ্ডন করে বিজেপি।

এখন প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন? প্রাথমিক খবর, সেই দৌড়ে এগিয়ে অ-জাঠ নেতা মনোহরলাল খট্টর। ক্যাপ্টেন অভিমন্যুর সম্ভাবনার কথাও বলছেন কেউ কেউ। আবার উঠে আসছে রাজ্য সভাপতি রামবিলাস শর্মার নামও। আলোচনা চালাতে রাজ্যে এসেছেন বেঙ্কাইয়া নায়ডু।

haryana assembly election inld bjp
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy