E-Paper

সংস্কার ও আশঙ্কা

সমস্যা অন্যত্র। ভারতীয় বেসরকারি সংস্থাগুলোর বিদ্যমান বিদেশি অংশীদাররা যদি স্বাধীন ভাবে কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়, তা হলে সম্ভাব্য প্রতিকূল অধিগ্রহণের প্রচেষ্টার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় কি?

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:২৬

সম্প্রতি সবকা বিমা সবকি রক্ষা (বিমা আইন সংশোধন) আইন, ২০২৫ পাশ হল লোকসভায়। কেন্দ্রের দাবি, এর মাধ্যমে সব দেশবাসীকে বিমার আওতায় নিয়ে আসার পথে অনেক দূর অগ্রসর হওয়া যাবে। কমবে প্রিমিয়াম, বাড়বে কর্মসংস্থান। নতুন আইনটি তিনটি মূল আইন সংশোধন করল— বিমা আইন, ১৯৩৮; এলআইসি আইন, ১৯৫৬; এবং আইআরডিএআই আইন, ১৯৯৯। এই সংশোধনের লক্ষ্য নিয়ন্ত্রণের আধুনিকীকরণ, বিমা পরিধির সম্প্রসারণ এবং পলিসিধারকদের সুরক্ষায় জোর দেওয়া। বিমার অর্থ আদায় করতে অনেক গ্রাহকই সমস্যায় পড়েন। বিমা সংস্থাগুলি বার বার নথিপত্র চায়, এবং ক্ষেত্রবিশেষে যথেষ্ট হয়রানিও হয়। দাবি প্রত্যাখ্যানের প্রায়শই যথাযথ ব্যাখ্যা থাকে না। সরকারের দাবি, এ বার এই সমস্যাগুলির সুরাহা হবে। জীবন হোক বা স্বাস্থ্য, ভারতে বিমার প্রসার আজও বিশ্বের বাকি দেশগুলির তুলনায় কম। এই অবস্থায় ২০৪৭ সালের মধ্যে সব নাগরিককে বিমার আওতায় আনার লক্ষ্যে দেশে বিমা ক্ষেত্রে ১০০% প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি (এফডিআই)-র রাস্তা খুলতে চলেছে সরকার, এখন যা ৭৪%। এর ফলে বিদেশি বিমা সংস্থাগুলি ভারতে স্বাধীন ভাবে ব্যবসা করতে পারবে। বাজারে নতুনতর সংস্থা আসবে, এবং প্রতিযোগিতা বাড়বে। আশা করা যায়, সেই বর্ধিত প্রতিযোগিতা গ্রাহকদের জন্য বিমার শর্ত অনুকূলতর করবে। স্বাস্থ্য, জীবন এবং সাধারণ বিমার ক্ষেত্রে আরও বেশি বিকল্প থাকায়, গ্রাহকরা তাঁদের প্রয়োজন অনুযায়ী সেরা পলিসিটি বেছে নিতে পারবেন। পাশাপাশি বিদেশি পুনর্বিমাকারীদের প্রণোদনা দিতে তাঁদের নিট মালিকানাধীন তহবিল (এনওএফ)-এর ন্যূনতম পরিমাণ ৫,০০০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ১,০০০ কোটি টাকা করা হয়েছে।

তবে, সমস্যা অন্যত্র। ভারতীয় বেসরকারি সংস্থাগুলোর বিদ্যমান বিদেশি অংশীদাররা যদি স্বাধীন ভাবে কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়, তা হলে সম্ভাব্য প্রতিকূল অধিগ্রহণের প্রচেষ্টার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় কি? তা ছাড়া, বিদেশি সংস্থাগুলো গ্রামীণ চাহিদা উপেক্ষা করে উচ্চ মুনাফার শহুরে এলাকাগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে পারে। অন্য দিকে, এনওএফ-এর মাত্রা হ্রাসের ফলে বাজারে অপেক্ষাকৃত দুর্বল সংস্থার প্রবেশের ঝুঁকিও থেকে যায়, যা এই ক্ষেত্রের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রভাবিত করতে পারে। ভুললে চলবে না যে, কোনও বিমা সংস্থার ক্ষেত্রে পুঁজিইহল তার শক্তি, যাতে প্রয়োজনে বড় অঙ্কের দাবি মেটাতে পারে। এইখানেই সংশোধিত বিলটি আইআরডিএআই-এর ভূমিকাকে শক্তিশালী করে। এটি সংস্থাটিকে এমন শাস্তিমূলক ক্ষমতা প্রদান করে যা সেবি-র ক্ষমতার অনুরূপ। যেমন, বিমা সংস্থাগুলি অন্যায় ভাবে মুনাফা অর্জন করলে, তা বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিগ্রস্ত পলিসিধারীদের মধ্যে বিতরণ করার ক্ষমতা থাকছে আইআরডিএআই-এর কাছে।

লক্ষণীয়, বিমা পরিষেবা এখনও সর্বত্র সমান ভাবে সহজলভ্য নয়, বিশেষত গ্রামীণ ক্ষেত্রগুলিতে, যেখানে সচেতনতা, সামর্থ্য এবং বিতরণের ক্ষেত্রে ঘাটতি বিদ্যমান। দাবি নিষ্পত্তিতে বিলম্ব এবং ক্ষতিপূরণ প্রদান নিয়ে বিরোধ জনবিশ্বাসকে আরও দুর্বল করেছে, যা বিমার সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য, আইআরডিএআই বিমা সুগম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মতো সংস্কার চালু করেছে, যার লক্ষ্য হল বিমা পলিসি কেনা, পরিষেবা প্রদান এবং নিষ্পত্তির জন্য একটি সমন্বিত বাজার তৈরি করা। বিমা সংস্কারের সাফল্য কেবল মালিকানার উদারীকরণের উপরই নির্ভর করে না, বরং নিয়ন্ত্রক নমনীয়তা, ভোক্তা সুরক্ষা এবং প্রান্তিক পর্যায়ে পরিষেবা প্রদান— এই বিষয়গুলোকে কতটা ভাল ভাবে সমন্বিত করা যায় তার উপরও নির্ভর করে, যাতে এই সংস্কার পরিবার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রকৃত আর্থিক নিরাপত্তায় রূপান্তরিত হয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Insurance Bill Premium Employment FDI

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy