লোকসভা নির্বাচনের আগেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-র ধারা তৈরি হয়ে যাবে বলে আজ দাবি করল নরেন্দ্র মোদী সরকার। এক বার ধারা তৈরি হয়ে গেলে ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে প্রতিবেশী দেশ থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কাজ শুরু করে দেওয়া যাবে বলেও দাবি করছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা। যদিও তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, এটা আসন্ন লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে বাংলায় মতুয়া সমাজের ভোট টানার কৌশল ছাড়া কিছু নয়।
গত চার বছর ধরে ঠান্ডা ঘরেই পড়ে রয়েছে সিএএ। প্রতি ছ’মাস অন্তর ওই আইনের ধারা তৈরির জন্য অতিরিক্ত সময় চেয়ে এসেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এত দিন পরে মন্ত্রকের তরফে এক স্বরাষ্ট্র কর্তা বললেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনের অনেক আগেই ওই আইনের ধারা তৈরি হয়ে যাবে। এক বার ওই ধারা তৈরি হয়ে গেলেই ওই আইন রূপায়ণে কোনও বাধা থাকবে না। আইনের ধারায় যাঁরা যোগ্য, তাঁরা আবেদন করে নাগরিকত্ব পাবেন।’’ কিন্তু বিরোধীদের দাবি, গোটা উদ্যোগ লোক দেখানো। গত বার লোকসভা ভোটের আগে ওই আইন আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চেয়েছিল বিজেপি। এ বার ওই আইনের ধারা নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট টানার কৌশল নিয়েছে তারা।
দীর্ঘ সময় ধরে নাগরিকত্ব পাওয়ার দাবিতে সরব রয়েছেন বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা মতুয়া সমাজ। গত লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া অধ্যুষিত লোকসভা কেন্দ্রগুলিতে উল্লেখজনক সাফল্য পায় গেরুয়া শিবির।
২০১৯ সালে ক্ষমতায় ফিরেই সিএএ আইন পাশ করায় নরেন্দ্র মোদী সরকার। ওই আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো ইসলাম ধর্মাবলম্বী প্রতিবেশী দেশ থেকে যদি সে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা (হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, পার্সি ও খ্রিস্টান) ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে এ দেশে আশ্রয় নিতে চান, সে ক্ষেত্রে তাদের আশ্রয় দেবে ভারত। কেন ওই তালিকায় মুসলিমদের নাম নেই, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পথে নামেন একাধিক সংখ্যালঘু সংগঠন ও বিরোধীরা।
এখন নতুন প্রতিশ্রুতি শুনে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া বেশ সময়সাপেক্ষ। চার মাসের মধ্যে আইনের ধারা তৈরি করে নাগরিকত্ব দেওয়া কতটা সম্ভব তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। বিরোধীদের মতে, ভোটের আগে আইনের ওই ধারা তৈরি হলেও, সেই আইনের সুবিধা পেতে পেতে লোকসভা নির্বাচন গড়িয়ে যাবে। প্রশ্ন উঠছে যে, গত চার বছরে কেন ওই ধারা তৈরি করে উঠতে পারল না শাসক শিবির? এখন ভোট কাছে আসার কারণেই কি দ্রুত আইনের ধারা বানানোর উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে? তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, যে ধারা গত চার বছরে হল না, তা আগামী চার-পাঁচ মাসের মধ্যে তৈরি হবে এবং তার ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা শাসক শিবিরের ভুয়ো প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছু নয়।