ত্রিপুরা জয়ের লক্ষ্যে অসমের শিলচরেও কাজ শুরু করেছে বিজেপি। শুরুতে দলের কথা প্রকাশ্যে আনা হয়নি। স্বাস্থ্যসেবার কাজ চলেছে ত্রিপুরায় বিজেপি সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা সুনীল দেওধরের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘মাই হোম ইন্ডিয়া’-র ছত্রছায়ায়। তবে এখন ত্রিপুরা বিধানসভা ভোট এগিয়ে এসেছে। রাখঢাকও উঠে গিয়েছে। উপকৃতদের বারবার মনে করানো হচ্ছে, সুনীল দেওধরের নির্দেশেই তাঁরা এখানে।
সুনীল দেওধরকে এখন আর ত্রিপুরাবাসীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে হয় না। তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে বিজেপির ‘প্রভারী’ হিসেবে ২০১৮-র ভোটের জন্য ঘুঁটি সাজাচ্ছেন তিনি। শিলচরে আসা ত্রিপুরার রোগীদের সাহায্য-সহযোগিতার পরিকল্পনাও তাঁরই।
ত্রিপুরার অধিকাংশ মানুষ চিকিৎসার জন্য শিলচরে আসেন। জটিল কি সাধারণ সমস্যা, নিজের রাজ্যের স্বাস্থ্যসেবায় তেমন ভরসা করেন না তাঁরা। আর একেই পুঁজি করেছেন দেওধর। এক দিকে প্রশ্ন তুলছেন, বাম সরকারের এই বুঝি সাফল্য! অন্য দিকে, শিলচরে গড়ে তুলেছেন ‘মাই হোম ইন্ডিয়া’-র স্বাস্থ্য সেবাসদন। শিলচরের কাজকর্ম দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছেন তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) অখিলেশ যাদবকে। সঙ্গে ২০ জন স্বেচ্ছাসেবক, একটি গাড়ি।
আগরতলা থেকে ট্রেন আসার সময়ে স্বেচ্ছাসেবকরা শিলচর স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকেন। দুঃস্থ-অসহায়দের দেখলেই সাহায্যের প্রয়োজন কিনা জানতে চান। কাউকে নিজেদের গাড়িতে নিয়ে যান স্বাস্থ্য সেবাসদনে। থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। যাদের আবার অর্থের সমস্যা নেই, ডাক্তার পাচ্ছেন না, তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন।
অখিলেশবাবুর কথায়, ‘‘দু’মাস ধরে আমরা এখানে কাজ করছি। দল না দেখে, প্রচুর মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। এর একটা প্রতিফলন তো ঘটবেই।’’ বহু বামপন্থী পরিবারের সদস্যও তাঁদের কাজকর্ম দেখে তারিফ করে গিয়েছেন বলে দাবি করলেন ‘মাই হোম ইন্ডিয়া’-র সাধারণ সম্পাদক বিনয় পাণ্ডে। তাঁর কথায়, ‘‘এই কাজটা বামেদের পক্ষে করা সম্ভব নয়। তাহলে স্বাস্থ্যসেবায় নিজেদের সরকারের ব্যর্থতা যে স্বীকার করে নিতে হবে!’’
সুনীলবাবুর এই দুই ঘনিষ্ট যুব নেতাই ত্রিপুরায় পরিবর্তনের ব্যাপারে আশাবাদী। এই সময়ে রাজ্যে সিপিএমের দখলে রয়েছে ৫০টি আসন। সিপিআই-র আরও ১টি। বিরোধীদের দখলে মাত্র ৯টি। এই হিসেব কণ্ঠস্থ করেও ত্রিপুরাকে বামেদের শক্ত দুর্গ বলে মানতে নারাজ বিনয়বাবু। তিনি বলেন, ‘‘বিকল্প না পেয়ে মানুষ এতদিন বামেদের ভোট দিতে বাধ্য হয়েছেন। বিজেপি মাঠে নামায় এখন আর কেউ দ্বিতীয় কিছু ভাববেন না।’’ সিপিএম ক্যাডার ভিত্তিক দল হিসেবে যেখানে বুথে-বুথে ভোট আদায়ে জোর দিয়েছে, বিজেপি সেখানে ‘মাইক্রো-বুথে’ গুরুত্ব দিয়েছে। একটি বুথকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে দায়িত্ব তুলে দিচ্ছে গ্রামীণ নেতাদের হাতে। এ ভাবেই ৫০টি আসনে অন্তত ৫০ শতাংশ ভোট আদায় লক্ষ্য তাঁদের, দাবি বিনয়-অখিলেশদের।