দিন কয়েক আগেই প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছিল গোটা দেশ। সংসদে আলোচনা চেয়ে তুমুল হইচই জুড়েছিলেন বিরোধীরা। অথচ সেই আলোচনা যখন শুরু হল, তখন বিরোধী আসনে লোক কই?
দলিত নিগ্রহ নিয়ে এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ লোকসভায় যখন আলোচনা শুরু হয়, তখন শাসক শিবির তো প্রায় শূন্যই, এমনকী প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের মাত্র ৮ জন সাংসদ বসে রয়েছেন!
আলোচনা গড়িয়েছে, কিন্তু কংগ্রেসের ৪৫ জন সাংসদের মধ্যে হাজিরার সংখ্যা ২০ পেরোয়নি। সনিয়া গাঁধী অসুস্থ বলে হাসপাতালে। লোকসভায় নেই রাহুল গাঁধী, দলের নেতা মল্লিকার্জুন খড়গে। শেষের দিকে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া কিছুটা আবেগ, কিছুটা আক্রমণাত্মক হয়ে দলের বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের জবাবের মাঝেই সভাকক্ষ ত্যাগ করে প্রতিবাদও নথিবদ্ধ করেছে। কিন্তু যে দলিত নিগ্রহ নিয়ে এক সপ্তাহ আগেও গোটা দেশজুড়ে তোলপাড় চলছিল, যা নিয়ে আলোচনার দাবি করছিল খোদ বিরোধীরাই, আজ সেই আলোচনার সময়ই সেই ঝাঁঝ উধাও!
কেন? বিজেপির দাবি, লোকসভায় বিতর্কের আগেই প্রধানমন্ত্রী গত শনি ও রবি দু’দিন ধরে গো-রক্ষকদের আক্রমণ করে যে ভাবে দলিতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তার পর বিরোধীদের হাওয়া বেরিয়ে গিয়েছে। তার পর সংসদে এই আলোচনার আগেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রাজনাথ সব রাজ্যকে নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দিয়েছেন, গো-রক্ষার নামে নিগ্রহ হলেই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ফলে চাপে পড়েছে রাজ্যগুলোই। এর পর বিরোধীদের ঝাঁঝ থাকবে কী করে!
দলিত নিগ্রহ নিয়ে আজ সরকারের উপর যে চাপ আসার আশঙ্কা ছিল, তা অনেকটাই সামাল দিতে পেরেছে কেন্দ্র। বিএসপি নেত্রী মায়াবতীর কোনও সাংসদ নেই লোকসভায়। তাই তাঁদের দলের কেউ আক্রমণের সুযোগ পাননি। মায়াবতী সাংবাদিক বৈঠক করে মোদীকে নিশানা করলেও তাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে না বিজেপি। বরং বিরোধীদের যাবতীয় আক্রমণের অভিমুখ রাজনাথ ঘুরিয়ে দিতে পেরেছেন তাঁর জবাবি বক্তৃতায়। তাঁর মতে, মোদী ক্ষমতায় আসার পর দলিত আক্রমণ বাড়ার অভিযোগ ঠিক নয়। প্রধানমন্ত্রী দলিত প্রশ্নে সংসদের ভিতরে কেন বলেননি, এ নিয়ে অভিযোগের জবাবে বলেন, এর আগে কোন প্রধানমন্ত্রী সব বিষয়ে সংসদে এসে মুখ খুলেছেন? রাজনাথের বক্তব্য, আজ বিজেপিকে নিশানা করা হচ্ছে। কিন্তু কর্নাটক বা কংগ্রেস শাসিত অন্য রাজ্যে দলিত নিগ্রহের ঘটনা হলে তার দায় কে নেবে?
কিন্তু কেন আজ বিরোধীরা, বিশেষ করে কংগ্রেসও দলিত-বিতর্ককে তেমন গুরুত্ব দিল না? কংগ্রেস শিবির থেকে যা বলা হয়েছে, তাতে কার্যত বিজেপির দাবিই মেনে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর কড়া মন্তব্যের পরে তাঁদের আক্রমণের ঝাঁঝ কমেছে। পাশাপাশি রাজ্যগুলিকেও ব্যবস্থা নিতে বলে কেন্দ্রই উল্টে চাপ বাড়িয়েছে রাজ্যগুলোর উপরে। এর পর যেটা বাকি, তা হল, প্রধানমন্ত্রীর দেরিতে মুখ খোলা এবং গো-রক্ষকদের পিছনে সঙ্ঘ-বিজেপির উস্কানি। কিন্তু সেটাও বিশেষ কল্কে পেল না বিরোধীদের গা-ছাড়া মনোভাবের জন্যই।
আর পুরো সুবিধাটা তুলে নিল সরকারপক্ষ। উল্টে রাজনাথ সভায় দাঁড়িয়ে সঙ্ঘের হয়ে সওয়াল করলেন। দাবি করলেন, আরএসএসই গোটা দেশের সবথেকে বড় সংগঠন, যারা দলিত সেবা করে।
কাল সংসদের অধিবেশন শেষ। তার আগে দলিত বিতর্ক নিয়ে সংসদের কাঁটা পেরোনোর পর এখন বিজেপির মূল চ্যালেঞ্জ উত্তরপ্রদেশের ভোট-বৈতরণী পেরোনো। দলের ছোট-বড় সব নেতাই মানছেন, সংসদ অনেক সময়ই রঙ্গমঞ্চ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু ভোটের রুক্ষ মাটিতে ‘পদ্ম’ ফোটানো মোটেই সহজ কাজ নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy