বিহারে ভোটের মাঝেই নীতীশ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এনডিএ জোটকে অস্বস্তিতে ফেলে দিলেন প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ আর কে সিংহ। তাঁর দাবি, দ্বিতীয় এনডিএ সরকারের সময়ে তিনি যখন কেন্দ্রে বিদ্যুৎমন্ত্রী ছিলেন সে সময়ে বিহারে আদানি গোষ্ঠীর এক সংস্থাকে ২৫ বছর ধরে বেশি দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার বরাত দিয়েছিল নীতীশ সরকার। যার ফলে সরকারের প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকা বাড়তি খরচ হতে চলেছে বলে অভিযোগ আনেন বিজেপির ওই নেতা। স্বভাবতই ভোটের মাঝে বিজেপির ওই নেতা নীতীশ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগে সরব হওয়ায় এ নিয়ে প্রচারে নেমে পড়েছেন বিরোধীরা। অন্য দিকে আর কে সিংহ জানিয়েছেন, তাঁর ওই সত্যভাষণের জন্য দল চাইলে তাঁকে বহিষ্কার করতে পারে।
এই প্রথম নয়, বিগত কিছু দিন ধরেই বিজেপির নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সরব রয়েছেন দেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রসচিব আর কে সিংহ। কিছু দিন আগে জন সুরাজ দলের নেতা প্রশান্ত কিশোর বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরির বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জমি হাতিয়ে নেওয়া ও খুনের মামলায় যুক্ত থাকার অভিযোগে সরব হন। সে সময়ে প্রশান্ত কিশোরকে সমর্থন করে আর কে সিংহ বলেছিলেন, নিজেকে নিরপেক্ষ প্রমাণ না করা পর্যন্ত সম্রাটের ভোটে লড়া উচিত নয়। স্বভাবতই দলের নেতার বিরুদ্ধে আর কে সিংহের মুখ খোলা মোটেই ভাল ভাবে নেয়নি দল।সেই বিতর্ক মেটার আগেই এ বার নীতীশ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সরব হয়েছেন আর কে সিংহ। তাঁর দাবি, তিনি কেন্দ্রে যখন মন্ত্রী ছিলেন সে সময়ে ভাগলপুরের পিরপইতিতে ২৪০০ মেগাওয়াটের একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা হয়। যা তৈরির দায়িত্ব পায় আদানির সংস্থা। ওই নির্মাণে প্রতি মেগাওয়াটে খরচ হওয়ার কথা ছিল ১০ কোটি টাকা। যাতে প্রতি ইউনিট পিছু ওই বেসরকারি সংস্থাকে ২.৭৫ টাকা দেওয়ার কথা ছিল রাজ্য সরকারের। কিন্তু রাজ্য সরকার ওই বেসরকারি সংস্থাকে প্রতি ইউনিট পিছু ৪.১৬ টাকা দিতে চুক্তি করে। এর ফলে রাজ্য সরকারের বছরে ২,৫০০ কোটি টাকা এবং যেহেতু সংস্থার সঙ্গে ২৫ বছরের চুক্তি হয়েছিল তাই ৬২ হাজার কোটি টাকা সরকারের ঘর থেকে বাড়তি গলে যাওয়ার অভিযোগ আনেন ওই প্রাক্তন সাংসদ। যদিও আদানির সংস্থা ইতিমধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অসত্য বলে দাবি করেছে।
ভোট চলাকালীন ওই অভিযোগ ওঠায় স্বভাবতই নীতীশ সরকারের দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছেন কংগ্রেস ও আরজেডি নেতৃত্ব। আরজেডি মুখপাত্র মৃত্যুঞ্জয় তিওয়ারি বলেন, ‘‘নীতীশ সরকারের দুর্নীতি নিয়ে বিজেপি নেতারাই সরব হয়েছেন। সরকারের উচিত এ নিয়ে মুখ খুলে অবস্থান স্পষ্ট করা।’’ অন্য দিকে ঘরোয়া ভাবে বিজেপি নেতারা বলছেন, হতাশা থেকেই এ ধরনের অভিযোগ তুলছেন আর কে সিংহ। লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকেই কার্যত কোণঠাসা তিনি। উপরন্তু আরার মতো রাজপুত অধ্যুষিত এলাকায় আর কে সিংহের পরিবর্তে জনপ্রিয় ভোজপুরি গায়ক পবন সিংহকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে দল। পবনও জাতিতে রাজপুত এবং যুব সমাজে জনপ্রিয়। ফলে দল তাঁকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়ার নীতি নিয়ে এগোচ্ছে। প্রশ্ন হল, সরকারের বিরুদ্ধে এ ভাবে মুখ খোলায় তাঁর বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেবে দল? বিজেপি নেতৃত্বের মতে, ভোটের মাঝে ব্যবস্থা নিলে বিরোধীরা আরও বলার সুযোগ পাবেন। ভোট শেষের পরে আর কে সিংহের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে পদক্ষেপ করার কথা ভেবে রেখেছে দল।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)