রাহুল গান্ধী-তেজস্বী যাদব চলছেন ডালে ডালে। বিজেপি চলছে পাতায় পাতায়।
বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকায় পরিমার্জনের নামে পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে বলে রাহুল-তেজস্বী অভিযোগ তুলছেন। এর বিরুদ্ধে বিহার জুড়ে ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’-ও করেছেন ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের নেতারা। ঠিক সেই সময়েই বিজেপির বিহারের নেতারা দিল্লি, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানার মতো বিভিন্ন রাজ্যে ঘুরে বিহারের পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরির কাজ করেছেন। বিহারে এনডিএ-র সরকার কী কী উন্নয়নের কাজ করেছে, তার প্রচার করেছেন। এই পরিযায়ী শ্রমিকরা যাতে রাজ্যে ফিরে গিয়ে বিজেপি বা এনডিএ-কেই ভোট দেন, সে জন্যও তাঁদের বোঝানো হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপি নেতারা একই ভাবে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে পৌঁছতে দুর্গোৎসবের সময় থেকে বিভিন্ন রাজ্যে যাওয়া শুরু করছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তথা তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থার অভিযোগ তুলেছে। সেই ক্ষত মেরামত করতে তাঁদের এই উদ্যোগ।
একই ভাবে বিহারের বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে গত জুলাই মাস থেকেই বিহারের বিজেপি নেতারা দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানায় ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছেন। বিহারের বিজেপি সূত্রের খবর, দলের ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’ কর্মসূচি অনুযায়ী অন্য রাজ্যের জেলায় জেলায় পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে ছোট ছোট বৈঠক করা হয়েছে। বিজেপির সমস্ত রাজ্য ও জেলার পদাধিকারী, প্রাক্তন বিধায়ক-সাংসদরা অন্য রাজ্যে গিয়ে পাঁচ দিন করে থাকছেন। সেখানে বিহারি পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশাপাশি এনজিও, ছট পুজো আয়োজন কমিটির সঙ্গেও তাঁরা কথা বলছেন। বিহারের বিজেপি নেতাদের হিসেবে, শুধু দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ-হরিয়ানা-মহারাষ্ট্রেই বিহারের অন্তত ২ কোটি পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন। তা ছাড়া, বিহারের একটা বড় সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক পশ্চিমবঙ্গে কাজ করেন।
বিহারের বিজেপি সূত্রের খবর, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ মেনেই নেতারা পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে পৌঁছনোর কাজ শুরু করেছেন। বিহারের এক বিজেপি নেতা বলেন, ‘‘রাহুল-তেজস্বী পরিযায়ী শ্রমিকদের ভোটার তালিকা থেকে নাম কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুললেও আমাদের ধারণা, তাতে ভোটের রাজনীতিতে বিশেষ প্রভাব পড়বে না। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে সেই অনুযায়ী রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাহুল-তেজস্বীর ভোটার অধিকার যাত্রায় মানুষের সাড়া দেখে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছেন, সতর্ক হওয়া দরকার। না হলে কখন পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাবে, টের পাওয়া যাবে না।’’
বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকায় পরিমার্জনের কাজ শুরুর আগেই মার্চ মাসে রাজ্যে রাজ্যে বিহার দিবস পালন করেছিল বিজেপি। এসআইআর-এ ভোটার তালিকা নিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হওয়ায় বিজেপি সক্রিয়তা বাড়িয়েছে। নির্বাচন কমিশন অন্য রাজ্যে থাকা ভোটারদের জন্য অনলাইনে ফর্ম পূরণের বন্দোবস্ত করায় বিজেপি নেতা-কর্মীরা সক্রিয় হয়ে সমর্থকদের ফর্ম পূরণ করিয়েছেন। এই কর্মসূচির মাধ্যমে রাজ্যে রাজ্যে বিহারের পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম, ধাম, ফোন নম্বর জোগাড় করে তথ্যভান্ডার তৈরি করা হয়েছে। এ বার ভোটের সময়ে প্রয়োজনমতো এই সব ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। প্রয়োজনে তাঁদের খাইখরচ দিয়ে ভোট দিতে নিয়ে যাওয়ারও বন্দোবস্ত করা হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)