প্রশান্ত কিশোর (পিকে) নিজে ভোটে দাঁড়াননি। কিন্তু তাঁর জন সুরাজ দলের প্রার্থীরা উচ্চবর্ণের ভোট কেটে নিতে পারেন বলে আশঙ্কায় ভুগছেন বিজেপি নেতৃত্ব। বিশেষ করে যে কেন্দ্রগুলিতে বিজেপি প্রার্থী দাঁড় করায়নি, সেই এলাকায় এনডিএ-র জোট শরিকের পরিবর্তে পিকে-র দল স্থানীয় ব্রাহ্মণ ও অন্য উচ্চ বর্ণের ভোট টেনে নিতে পারে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বিজেপিতে, যে ভোট সাধারণত এত দিন বিজেপিতেই গিয়েছে।
প্রশান্ত কিশোর নিজে ব্রাহ্মণ। বিহারের রাজনীতিতে উচ্চ বর্ণের প্রতিনিধি ভূমিহার ভোট রয়েছে ৩% এবং ব্রাহ্মণ ভোট সাড়ে তিন শতাংশের কিছু বেশি। গত কয়েক দশক ধরে বিহারের রাজনীতিতে এদের প্রভাব ক্রমশ কমে আসছিল। এই পরিস্থিতিতে প্রশান্ত কিশোরের আবির্ভাবে নতুন করে গা-ঝাড়া দিয়ে উঠেছে ব্রাহ্মণ ও ভূমিহার সমাজ। তাঁদের একাংশ প্রকাশ্যেই প্রশান্ত কিশোরকে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। বিহারের রাজ্য-রাজনীতিতে মিথিলাঞ্চল ছেড়ে দিলে বাকি সব জায়গায় অন্য জাতের সঙ্গে রাজনৈতিক বিবাদের কারণে ব্রাহ্মণ ও ভূমিহার একসঙ্গে ভোট দিয়ে থাকে। বিশেষ করে বেগুসরাই, রোহতাস, গয়া, সমস্তিপুর, ভোজপুরের মতো জেলাগুলিতে ব্রাহ্মণ-ভূমিহার ভোটের ভালই প্রভাব রয়েছে। তারা এ যাবৎ বিজেপিকে ভোটে দিয়ে আসায় ওই এলাকার অধিকাংশ আসন দখলে রাখতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি। কিন্তু এখন ওই ভোটব্যাঙ্কে বড়সড় চিড় যে ধরতে পারে, তা প্রশান্ত কিশোরের জনসভার ভিড় থেকেই স্পষ্ট। চাকরি না পাওয়া উচ্চ বর্ণের যুবসমাজ প্রকাশ্যে সমর্থন করছে প্রশান্ত কিশোরের দলকে।
বিজেপির এক নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘বেশ কিছু কেন্দ্রের রিপোর্ট বেশ চিন্তার। উচ্চ বর্ণের সমর্থন কমার ইঙ্গিত আসছে। বিশেষ করে যে কেন্দ্রগুলিতে শরিক দলের প্রার্থীরা রয়েছেন, সেখানে বিজেপির ভোটারেরা এনডিএ প্রার্থীকে ভোট দেবেন কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এটাকে কাজে লাগাচ্ছেন প্রশান্ত কিশোর। নিজের পরিচয়কে তলে তলে কাজে লাগিয়ে উচ্চ বর্ণের ভোট টানার চেষ্টায় তৎপর রয়েছেন তিনি।’’ উদাহরণস্বরূপ ওই নেতার ব্যাখ্যা, বেগুসরাই বরাবর এনডিএ-র শক্ত ঘাঁটি। ওখান থেকে লোকসভায় জিতে মন্ত্রী হয়েছেন বিজেপির গিরিরাজ সিংহ। এলাকার ভূমিহার ভোট রয়েছে ২০ শতাংশ ও ব্রাহ্মণ ভোট রয়েছে ১০ শতাংশ। ওই তিরিশ শতাংশের অধিকাংশ যদি প্রশান্তের প্রার্থীর সমর্থনে চলে যায়, সে ক্ষেত্রে বেগুসরাইয়ে বড় মাপের ধাক্কা অপেক্ষা করছে বিজেপির জন্য। সে কারণে বিহারে প্রচারে এসে বেগুসরাইকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দু’জনেই।
ক্ষমতা থেকে দীর্ঘ সময় দূরে থাকা সবর্ণ সমাজ (ভূমিহার, ব্রাহ্মণ, রাজপুত ও কায়স্থ) এ বারের ভোটে নিজেদের অধিকারের দাবিতে সরব। ওই চার শ্রেণি রাজ্যের মোট ভোটারের সাড়ে ১০ শতাংশ হলেও রাজ্যের প্রায় এক-চতুর্থাংশ বিধায়কের ভাগ্য নির্ণয়ে ভূমিকা নিয়ে থাকে। বিজেপির একাংশের মতে, ওই সমাজের সমর্থন রয়েছে প্রশান্ত কিশোরের দিকে। গোড়ায় যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রার্থী দেওয়ার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত স্থানীয় জাতপাতের সমীকরণকে মাথায় রেখেই টিকিট দিয়েছেন পিকে। রাজনীতিকদের মতে, স্থানীয় জাতপাতের অঙ্ক ও উচ্চ বর্ণের বাড়তি সমর্থন খেলা ঘুরিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। সে ক্ষেত্রে এক দিকে যেমন অনেক জেতা প্রার্থীর হিসাব গুলিয়ে দিতে পারেন পিকে, তেমনই অন্য দিকে জাতপাতের অঙ্ককে কাজে লাগিয়ে ‘কিং মেকার’ হয়ে ওঠার সম্ভাবনাও রয়েছে তাঁর। ফলে ভবিষ্যতে সরকার গড়ার ক্ষেত্রে সমর্থন দরকার হতে পারে ধরে নিয়ে এখন থেকেই তাঁর সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলার পক্ষপাতী বিহার বিজেপির অনেক নেতাই।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)