শাসক শিবিরের দাবি ছিল, গত পাঁচ বছরে সরকারের পরিকল্পনার সুফল বেশি পেয়েছেন গ্রামের গরিব, পিছিয়ে পড়া শ্রেণির প্রতিনিধিরা। তাই সরকারের মূল শক্তি হল গ্রামীণ আম জনতার সমর্থন। কিন্তু একের পর এক বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয় প্রশ্ন তুলেছে সেই জনসমর্থন নিয়ে। এ বারে তাই লোকসভার আগে দেশের খাস জনতাকে সরকারের সাফল্য বোঝাতে সক্রিয় হল মোদী সরকার। পাঁচ বছরের রেল মন্ত্রকের রিপোর্ট কার্ড পেশ করলেন রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। তিনিই প্রথম হলেও, বিজেপি সূত্রের খবর রিপোর্ট কার্ড পেশের দৌড়ে রয়েছেন অন্য মন্ত্রীরাও।
আজ রেল মন্ত্রকের রিপোর্ট কার্ড পেশ করে তিনি বলেন, আগের চেয়ে দুর্ঘটনা কমছে ভারতীয় রেলে। চালু হয়েছে ভারতে তৈরি ট্রেন-১৮। শুরু হয়েছে বুলেট ট্রেনের কাজ। পণ্য পরিবাহী করিডোরের কাজ প্রায় সমাপ্ত। বলেন, মোদী সরকারের লক্ষ্য সমাজের উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির কাছেও সুফল পৌঁছে দেওয়া।
বিগত বছরগুলিতে বিজেপি নেতাদের বক্তব্য ছিল, সরকারের সাফল্য সমাজের প্রান্তিক মানুষেরা বুঝলেও, শহুরে উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্তরা বুঝতে পারেননি। তাই ঘরে-ঘরে শৌচাগার, রান্নার গ্যাস পৌঁছে দেওয়ার মতো সুবিধা গ্রামের মানুষের জীবনে কী পরিবর্তন এনেছে, সে সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই শহুরেদের। সেই সূত্র ধরেই আজ মধ্যপ্রদেশে অমিত শাহ বলেন, ‘‘এই প্রথম দিল্লির কোনও সরকার রাজধানীতে বসে প্রান্তিক মানুষের কথা যে ভাবছে তা বুঝতে পারছেন গ্রামের মানুষ। সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রামের জীবনযাত্রা বদলে দিচ্ছে।’’ কিন্তু অমিত শাহেরা ঘনিষ্ঠ মহলে মেনে নিয়েছেন, দলের সাফল্য যতটা প্রচার করা উচিত ছিল ততটা করতে ব্যর্থ দল ও সরকার।
তাই সাফল্যের কাহিনী মানুষের কাছে পৌঁছতে প্রতিটি বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতিদের নির্দেশ দিয়েছে বিজেপি। বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুফল যারা পেয়েছে তাদের নিয়ে রাজ্য জুড়ে প্রচারে নামতে হবে। জোর দেওয়া হচ্ছে দলিত ও পিছিয়ে পড়া সমাজের আস্থা অর্জনে।
কিন্তু সমস্যা হল, যে গ্রামীণ ভারতের ভরসায় ভোটে ঝাঁপাতে চাইছে বিজেপি, সেই মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ছত্তীসগঢ়ের মানুষ বিধানসভা নির্বাচনে প্রত্যাখ্যান করেছে তাদেরকে। অসন্তোষ মোদী রাজ্য গুজরাতেও। সে রাজ্যে গ্রামাঞ্চলে কার্যত মুছে গিয়েছে বিজেপি। তাই শহুরে ভোট টানায় জোর দিচ্ছেন মোদী-শাহ।
পুলওয়ামা কাণ্ডের আগে পর্যন্ত আদৌ রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিজেপির অনুকূলে ছিল না। একের পর এক রাজ্যে হার, রাজ্যে-রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভে স্পষ্ট লোকসভা ভোটের আগে জনসমর্থনে ভাটা পড়েছে। মাসখানেক পরে হতে যাওয়া ভোটে পুলওয়ামা কাণ্ড আখেরে কতটা সাহায্য করবে, তা নিয়ে সংশয় এখনও রয়েছে বিজেপিতে। তাই ঝুঁকি না নিয়ে রিপোর্ট কার্ডের মাধ্যমে সরকারের সাফল্য তুলে ধরতে সব মন্ত্রীকে পথে নামাচ্ছেন অমিত শাহ।