রাহুল গাঁধীর মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর উপরে হামলা করলেন তাঁর নিজের দলের সাংসদই। তা-ও আবার লোকসভায় দাঁড়িয়ে।
বিহারের বেগুসরাইয়ের সাংসদ ভোলা সিংহের পক্ষে অবশ্য মোদীকে এ ভাবে চোখা ভাষায় আক্রমণ করার ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু সংসদে দাঁড়িয়ে আজ বেনজির কাণ্ডটি বাধিয়ে ফেলেছেন তিনি। এত দিন রাহুল গাঁধী প্রধানমন্ত্রীকে খোঁচা দিয়ে বলতেন, স্যুট-বুটের সরকার। এ সরকার মুষ্টিমেয় শিল্পপতির। রাহুল গাঁধীর সেঁটে দেওয়া সেই তকমা ঝাড়তে মোদীকে আজ পর্যন্ত ‘গরিব-গরিব’ মন্ত্র উচ্চারণ করতে হয়। কিন্তু আজ সেই কথাটিই ফের উঠে দলের সাংসদ ভোলা সিংহের গলায়। লোকসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি বললেন, কেন্দ্রীয় সরকারের উপর রিলায়েন্সের বিপুল চাপ রয়েছে। সেই চাপে পড়েই চলতে চায় সরকার। সরকারের কীসের এত বাধ্যবাধকতা? কেন কঠোর হাতে মোকাবিলা করা হচ্ছে না তাদের?
ভোলা সিংহের মুখে থেকে বেরোনো উক্তি যে বিজেপিরই অনেক সাংসদের মনের কথা, সেটি বোঝা গেল আশপাশে বসে থাকা আরও ডজনখানেক সাংসদ যখন টেবিল চাপড়ে সে বক্তব্যকে সমর্থন জানালেন। অন্য সাংসদের মুখের হাসি সেই সময় বুঝিয়ে দিচ্ছি, অন্তত তাঁদের মধ্যে এক জন সহজ কথাটি সহজ ভাবে বলবার সাহস দেখিয়েছেন। যেটি অন্যদের পক্ষে এতটা অকপটে বলা মুশকিল। বিষয়টি অস্বস্তিকর পর্যায়ে যাচ্ছে দেখে স্বয়ং স্পিকার সুমিত্রা মহাজন বার বার ভোলা সিংহকে থামিয়ে বলেন, ‘‘আপনি প্রশ্নটি করুন।’’ তাতেও কে থামায়? বলেন, ইউপিএ সরকারও এ ভাবে চাপে ছিল, এই সরকারেরও কিছুটা তাই।
সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে এর পরে জবাব দেওয়ার পালা ছিল পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের। তিনি যথেষ্ট সাহসী মুখ করে বলেন, ‘‘এই সরকারের কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। সম্মাননীয় সাংসদকে আমি আশ্বস্ত করতে চাই, দেশের প্রধানমন্ত্রী যেখানে নরেন্দ্র মোদী রয়েছেন, তখন এ ধরনের আশঙ্কার কোনও কারণ নেই। সব কিছু সকলের সামনে রয়েছে।’’ এই বলে মন্ত্রীমশাই বিষয়টি কংগ্রেসের দিকে ঘুরিয়ে দিতে চান। বলেন, ‘‘আমাদের কিছু সমস্যা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি।’’ সেই সময় লোকসভায় কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গে অবশ্য উঠে বলেন, ‘‘উত্তরাধিকার কী পেয়েছেন?’’ ধর্মেন্দ্র প্রধান জবাব দেন, ‘‘তা নিয়ে যদি মুখ খুলি, তা হলে আপনাদেরই সমস্যা হবে।’’
আরও পড়ুন:
কেজরীর প্রশ্নে ‘জানা গেল’, মোদী ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছিলেন এমএ-তে!
ধর্মেন্দ্র প্রধান কোনও রকমে আজ সামলে নিয়েছেন বটে, কিন্তু গোটা বিজেপি শিবিরে আজ চাঞ্চল্য ফেলে দিয়েছেন বেগুসরাইয়ের সাংসদ। মোদী সরকারের ছ’মাসের মাথায় প্রধানমন্ত্রীর সামনে দলের বৈঠকেই এই ভোলা সিংহ গর্জে উঠে বলেছিলেন, দিল্লি থেকে বড় বড় নীতি ঘোষণা হচ্ছে, কিন্তু জমিতে তার ফল মিলছে না। মন্ত্রীরাও কোনও গা করেন না। বিহারের হারের পর এই ভোলা সিংহই বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর জন্যই হার হয়েছে বিহারে। তাঁর পদত্যাগ করা উচিত। বিজেপি বিহারে হারেনি, আত্মহত্যা করেছে। কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা বলেন, ‘‘যে বক্তব্য আজ বিজেপির সাংসদ তুলেছেন, সেটিই তো আমরা সংসদে তুলতে চাইছি। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় নরেন্দ্র মোদী এই শিল্পপতিদের সুবিধা করতে গিয়েই তো রাজকোষে কুড়ি হাজার কোটি টাকার লোকসান করিয়েছেন। এখন সিএজি-ও সেই রিপোর্ট দিয়েছে। এটি ভাল যে বিজেপির মধ্যেও শুভবুদ্ধির মানুষজন রয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy