আর্দশের পরিবর্তে, বিজেপি নরেন্দ্র মোদী-কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে বলেই মনে করছে আরএসএস নেতৃত্ব। ওই ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা ক্ষতিকর বুঝেই দলকে নতুন করে আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে তুলতে দক্ষ কোনও সংগঠককেই বিজেপির আসন্ন সভাপতি হিসাবে দেখতে চাইছে আরএসএস। ওই ভাবনার সঙ্গে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের যে মতানৈক্য রয়েছে, তা স্পষ্ট করে দিলেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ ঘনিষ্ঠ, ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তিনি বলেন, ‘‘আগামী লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদী না থাকলে দল দেড়শোটি আসনও পাবে না।’’
সম্প্রতি সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত ৭৫ বছর বয়েসে রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার প্রশ্নে সওয়াল করেন। ভাগবতের নিজের এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দু’জনের এ বছর ৭৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে। ফলে অনেকেই মনে করছেন,ভাগবত নিজে যেমন সরে যেতে ইচ্ছুক, তেমনি আরএসএস চায় বয়সের কারণে স্বেচ্ছাবসর নিন নরেন্দ্র মোদী। রাজনীতিকদের মতে,বয়সের কারণ দেখিয়ে মোদীর উপর ইস্তফা দেওয়ার চাপ দিয়ে এক ঢিলে দু’পাখি মারতে চাইছেন সঙ্ঘ নেতৃত্ব। তাঁদের বিশ্লেষণ, বিজেপি আদর্শভিত্তিক দল। আদর্শের কারণে সমর্থকেরা দলে যোগ দেন। কিন্তু গত কয়েক বছরের প্রবণতা দেখাচ্ছে, দল নয়, ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদীই দলের মুখ হয়ে উঠেছেন। কার্যত নিশিকান্তের মন্তব্য থেকেও তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। আদর্শের পরিবর্তে ব্যক্তির প্রশ্নে সমঝোতা করায় বিজেপির ভিত দুর্বল হয়ে পড়ছে বলেই মনে করছে আরএসএস। এতে মোদী পরবর্তী জমানায় দলের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল কঠিন হবে বলেই মনে করছে আরএসএস। তাই আদর্শগত ভাবধারার কথা বলে আরএসএস নেতৃত্ব চাইছেন, মোদী ইস্তফা দিন। পরিবর্তে দল অন্য কোনও মুখকে সামনে রেখে লোকসভানির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করুক।
শাহ আগেই জানিয়েছিলেন, মোদীর অবসর নেওয়ার প্রশ্নই নেই। আরএসএসের ৭৫ বছরের নিদান আসার পরে এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন নিশিকান্ত। তাঁর মতে, ‘‘আগামী ১৫-২০ বছরের জন্য নরেন্দ্র মোদীকে প্রয়োজন রয়েছে বিজেপির। তিনি না থাকলে বিজেপি ২০২৯ সালে ১৫০টি আসনও পাবে না। তাই মোদী বিজেপির কাছে অপরিহার্য। তিনি না থাকলে ভোটব্যাঙ্কে ধস নামবে।’’ রাজনীতিকদের মতে, ভাগবত ৭৫ বছরের সীমা ধার্য করলেও, ওই ফরমান যে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের পছন্দ নয় তা নিশিকান্তের সরব হওয়া থেকেই স্পষ্ট।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)