Advertisement
১৯ মে ২০২৪
স্থলসীমান্ত চুক্তি

বিজেপির আপত্তিতে আপাতত নেই অসম

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের স্থলসীমান্ত চুক্তি রূপায়ণ এক লপ্তে করা হবে কিনা তা নিয়ে সরকারিস্তরে খানিকটা সংশয় দেখা দিয়েছে। পরিবর্তে, কয়েকটি পর্বে তা রূপায়ণের ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে ভারত সরকারের সর্বোচ্চ স্তরে। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, ২০১৬ সালে অসমের বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই সে রাজ্যের বিজেপি-শাখার দাবি মেনে নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তিটি আংশিকভাবে রূপায়ণ করার নতুন ভাবনাচিন্তা চলছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩৩
Share: Save:

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের স্থলসীমান্ত চুক্তি রূপায়ণ এক লপ্তে করা হবে কিনা তা নিয়ে সরকারিস্তরে খানিকটা সংশয় দেখা দিয়েছে। পরিবর্তে, কয়েকটি পর্বে তা রূপায়ণের ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে ভারত সরকারের সর্বোচ্চ স্তরে।

রাজনৈতিক সূত্রের খবর, ২০১৬ সালে অসমের বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই সে রাজ্যের বিজেপি-শাখার দাবি মেনে নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তিটি আংশিকভাবে রূপায়ণ করার নতুন ভাবনাচিন্তা চলছে। তবে সবটাই নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের উপর। বিদেশ সফর সেরে তিনি দিল্লিতে ফিরলেই এ ব্যাপারে সরকার নির্দিষ্ট মনোভাব চূড়ান্ত করবে। সে ক্ষেত্রে এমন হতে পারে, আসন্ন সংসদীয় অধিবেশনে পাশ করার জন্য যে বিলটি আনা হবে তার আওতা থেকে প্রথম পর্বে বাদ রাখা হবে অসমকে। প্রথম পর্বে সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গ এবং মেঘালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের ভূখণ্ড বা ছিট মহল বিনিময় হবে। পরের দফায় অসম ও উত্তর-পূর্বের অন্যান্য সীমান্তবর্তী রাজ্যের কথা ভাবা হবে।

এক দিকে, বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং অন্য দিকে, অসমে বিজেপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে মজবুত করা,-- এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় এই পর্ব-বিভাজন ছাড়া অন্য কোনও উপায় দেখছে না কেন্দ্রীয় সরকার। গত কয়েক মাস ধরেই বিজেপি-র অসম শাখার নেতারা এই বিল আটকানোর জন্য ধারাবাহিকভাবে দরবার করে গিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের কাছে। কেন না এই চুক্তির ফলে অসমের ২৬৮.৩৯ একর জমি বাংলাদেশকে দিতে হবে। বিনিময়ে কোনও জমি অসম পাবে না। এই বিষয়টিই যথেষ্ট বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে অসমবাসীর আবেগের কাছে।

ফলে কেন্দ্রীয় সরকার চেষ্টা চালালেও পরিস্থিতি সহজ হয়নি। বরং অসমের বিস্তীর্ণ ভূখন্ড বাংলাদেশকে দিয়ে দিতে হবে এই প্রচারে আতঙ্ক এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, শেষ পর্যন্ত এই চুক্তির আওতা থেকে অসমকে বাদ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় কিনা তা ভাবতে শুরু করেছে কেন্দ্র।

রাজ্য নেতৃত্বের সর্বশেষ হিসেব, এই চুক্তি হলে বিধানসভার ভোটে ভরাডুবি হবে বিজেপির। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে অসমের ১৪টি আসনের মধ্যে ৭টি আসন জিতে বিজেপি ইতিমধ্যেই সেখানে ক্ষমতার গন্ধ পেয়ে গিয়েছে। তাদের ভোটের শতকরা হারও যথেষ্ট ভাল (৩৬.৫শতাংশ)। সে রাজ্যের সাম্প্রতিক পুর নির্বাচনেও জিতেছে বিজেপি। ফলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য দখল করাটা স্বাভাবিকভাবেই অগ্রাধিকার পাচ্ছে।

তবে অসমকে বাদ দিয়ে এই বিলটিকে আনার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ত্রিদেশীয় সফর শেষ করে নয়াদিল্লি ফেরার পর। এই নতুন আকারে বিলটি আনা নিয়ে ঢাকার সঙ্গে কথা হয়েছে নয়াদিল্লির। দীর্ঘদিন ধরে যে দু’টি বিষয় (অন্যটি তিস্তা চুক্তি) ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অস্বস্তির কারণ হয়ে রয়েেছ, এটি তার একটি। ফলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও চাইছেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই চুক্তি রূপায়ণ করতে। এটি তাঁর ঘরোয়া রাজনৈতিক প্রয়োজনীয়তার মধ্যেও পড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE