ছবি: পিটিআই।
রাজস্থানে ব্যর্থ হতেই এ বার মহারাষ্ট্রে সরকার ফেলার চক্রান্তের অভিযোগ উঠল বিজেপির বিরুদ্ধে। শাসক দল শিবসেনা তাদের মুখপত্রে জানিয়েছে, আগামী মাসের মধ্যে মহারাষ্ট্রে পালাবদল ঘটাতে মরিয়া অমিত শাহের দল। এবং সেই উদ্দেশ্যেই মহারাষ্ট্রের জোট সরকারকে ঠিক মতো কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিজেপি জানিয়েছে, মহারাষ্ট্রে জোট সরকার সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই এখন বিজেপির দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে।
দিল্লি-মহারাষ্ট্র চাপানউতোরের মধ্যে উঠে এসেছে অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুরহস্যের বিষয়টিও। ওই মৃত্যুর তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার পিছনে কেন্দ্রের পরিকল্পিত পদক্ষেপ রয়েছে বলেই মনে করছে শিবসেনা। দলের অভিযোগ, সুশান্ত-কাণ্ডে কৌশলে উদ্ধব পুত্র আদিত্য ঠাকরের নাম জড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। রাজনীতির অনেকেই মনে করছেন, এক বার আদিত্যের নাম সিবিআইয়ের তদন্তে উঠে এলে স্বভাবতই দর কষাকষির প্রশ্নে দুর্বল অবস্থানে থাকবে শিবসেনা। এতে কেন্দ্রের শাসক শিবির এখন যে ভাবে সিবিআই-জুজু দেখিয়ে সমাজবাদী পার্টি ও বিএসপির সমর্থন আদায় করে থাকে, ঠিক সে ভাবে শিবসেনাকেও কব্জা করতে সক্ষম হবে বিজেপি।
গত বছর বিধানসভা নির্বাচনের পরে যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রিত্বের প্রশ্নে শিবসেনা মহারাষ্ট্রে বিজেপির সরকার গড়া ভেস্তে দিয়েছিল তা এখনও ভুলতে পারেননি বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। শিবসেনার অভিযোগ, গোড়া থেকেই তাই মহারাষ্ট্রে সরকার ফেলতে তৎপর রয়েছে কেন্দ্র। তাই প্রথম থেকেই জোট সরকারকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
শিবসেনার মুখপত্রে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বরের মধ্যে মহারাষ্ট্রে সরকার ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করে এগোচ্ছে বিজেপি। বিজেপির এই জোড়-তোড় রাজনীতির মধ্যেও রাজস্থানে সরকার বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে কংগ্রেস। শোলে সিনেমার গব্বর সিংহের মতো অপারেশন লোটাস-এর ভয় দেখানো হয়ে থাকে বিরোধী রাজ্যগুলিতে। কিন্তু রাজস্থানে তা প্রয়োগ করতে গিয়ে অশোক গহলৌতের চক্রব্যূহে বিজেপির পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছে। রাজস্থানের পরে এবার বিজেপির নজর পড়েছে মহারাষ্ট্রের দিকে।
শিবসেনার অভিয়োগ, যেখানেই বিজেপি-বিরোধী সরকার রয়েছে, সেখানেই সরকার ফেলে দেওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা। উদ্ধবদের এ-ও দাবি, ঝাড়খণ্ডেও সরকার ফেলতে তলে তলে তৎপর রয়েছে বিজেপি। ইতিমধ্যেই জল্পনা ছড়িয়েছে যে মহারাষ্ট্রের জোট শরিকের অন্যতম শরিক এনসিপি-র ১২ জন বিধায়ক নাকি বিজেপির সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। যদিও এই জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছেন এনসিপি নেতা নবাব মালিক। তাঁর দাবি, দলে কোনও ভাঙন নেই। সকলেই একজোট রয়েছেন। তবে ১২ জন বিধায়ক যদি সত্যি এনসিপি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন সে ক্ষেত্রে ২৮৮ আসনের বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোট। বিধানসভায় শিবসেনার বিধায়ক সংখ্যা ৫৬। শিবসেনার ৫৪ ও কংগ্রেসের ৪৪। সেখানে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা হল ১০৫।
শিবসেনা-জোটের সরকার ফেলার চেষ্টা করার দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের বক্তব্য, করোনা দেশের সর্বাধিক করোনা-সংক্রমিতের ঠিকানা হল মহারাষ্ট্র। সংক্রমিত শহরের মধ্যে এক নম্বরে মুম্বই। ফলে শিবসেনা সরকার যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রুখতে ব্যর্থ, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে সুশান্ত সিংহ মামলার তদন্ত যে ঠিক পথে এগোচ্ছে না, তা-ও এখন সামনে উঠে এসেছে।
সব দিক থেকেই চাপে রয়েছে মহারাষ্ট্র সরকার। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে এখন বিজেপির বিরুদ্ধে সরকার ফেলার অভিযোগ তুলে আসলে পিঠ বাঁচাতে চাইছে উদ্ধব সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy