Advertisement
E-Paper

শিলচরে কেজরীবালের পথেই বিজেপি

শপথ গ্রহণ মঞ্চ থেকেই জলকর ৫০ শতাংশ কমানোর কথা ঘোষণা করলেন শিলচরের নতুন পুরপ্রধান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর। অনেকটা অরবিন্দ কেজরীবালের ধাঁচে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপির ঘোরশত্রু কেজরীবালের নাম অবশ্য মুখে আনেননি নয়া পুরপ্রধান। তবে নিজেদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করেই পুরবাসীদের উদ্দেশে তিনি তাঁর বার্তাটি পৌঁছে দেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪০
শপথ গ্রহণের পর শিলচরবাসীকে পুরপ্রধান নীহার ঠাকুরের অভিবাদন। বৃহস্পতিবার স্বপন রায়ের তোলা ছবি।

শপথ গ্রহণের পর শিলচরবাসীকে পুরপ্রধান নীহার ঠাকুরের অভিবাদন। বৃহস্পতিবার স্বপন রায়ের তোলা ছবি।

শপথ গ্রহণ মঞ্চ থেকেই জলকর ৫০ শতাংশ কমানোর কথা ঘোষণা করলেন শিলচরের নতুন পুরপ্রধান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর। অনেকটা অরবিন্দ কেজরীবালের ধাঁচে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপির ঘোরশত্রু কেজরীবালের নাম অবশ্য মুখে আনেননি নয়া পুরপ্রধান। তবে নিজেদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করেই পুরবাসীদের উদ্দেশে তিনি তাঁর বার্তাটি পৌঁছে দেন।

পুর নির্বাচনের আগে বিজেপি তাদের ইস্তাহারে বলেছিল, মানুষের কাছে পর্যাপ্ত জল পৌঁছে দেবেন তাঁরা। আর তা যতদিন না করতে পারবেন, ততদিন অধের্ক জলকর নেওয়া হবে। নীহারবাবু আজ বলেন, ‘‘পর্যাপ্ত জল পৌঁছে দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পুরনো প্লান্টের আধুনিকীকরণের কাজ চলছে। এই কাজ শেষ হলে জলের পরিমাণ কিছুটা বাড়বে। তবে তাতে সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে না। আরও তিনটি প্লান্ট তৈরি করার প্রয়োজন রয়েছে। তার জন্য সময় লাগবে, অর্থের সংস্থান করতে হবে।’’ তবে এই কাজ যতদিন না করে উঠতে পারবেন, ততদিন মাসে একশো টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা করে জলকর নেওয়া হবে।

ক্ষমতায় এসেই এই ‘জলমোহিনী’ সিদ্ধান্ত পুরসভার রাজস্বের উপর যে বাড়তি চাপ তৈরি করবে তা নতুন বোর্ড কী ভাবে সামাল দেবে? আনন্দের দিনে প্রত্যাশিত ভাবেই এই অপ্রীতিকর প্রশ্নটির মুখোমুখি হতে হয়েছে নতুন বোর্ড-কর্তাদের। নীহারবাবুর দাবি, ‘‘এই সিদ্ধান্ত রাজস্বের উপর কোনও প্রভাব ফেলবে না। সব হিসেব করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ কোন অঙ্কে তিনি হিসেব মেলাবেন তা নীহারবাবু স্পষ্ট না করলেও শিলচর পুরসভারই এক সূত্রে জানা গিয়েছে, জলকর থাকলেও তা ঠিক মতো আদায় হয় না। ভাল করে জল পাওয়া যায় না, তার উপর কর! অধিকাংশ নগরবাসীই কর দেন না। বকেয়ার পরিমাণ ১৫ কোটি টাকারও বেশি। নতুন পুরবোডের্র পরিকল্পনা, কর কমিয়ে তা আদায়ের উপর জোর দিয়ে প্রকৃত অর্থে রাজস্ব আয় বাড়ানো। একই সঙ্গে বকেয়া কর আদায়ের উপরেও বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা নতুন বোর্ডের রয়েছে। বাড়ি বাড়ি ঘুরে কর সংগ্রহ করার ব্যবস্থা ফের চালু করার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও উল্লেখ করেছেন নীহারবাবু। তিনি জানান, এই ব্যবস্থাও শীঘ্র কার্যকর করা হবে।

তবে শহরে উড়ালপুল নির্মাণের যে আশ্বাস বিজেপি দিয়েছিল, তা নিয়ে ভোটের আগেই কংগ্রেস হাসিঠাট্টা শুরু করেছিল। আজ সে ব্যাপারে মুখ খোলেননি নীহারবাবু। অবশ্য কাছাড়ের জেলাশাসক গোকুলমোহন হাজরিকা শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের শুরুতে জানান, ‘‘দুধপাতিলে নদীর ওপর সেতু তৈরির কাজ শেষ হলে শিলচর স্যাটেলাইট সিটি হয়ে উঠবে। ব্রডগেজ হওয়ায় শহরের গুরুত্ব বেড়ে গিয়েছে। এক সময় উড়ালপুলও হবে এখানে।’’

রাজ্যের কংগ্রেস সরকারের কাছ থেকে সহায়তা পাবেন বলেই গত কাল আশা প্রকাশ করেছিলেন নীহারবাবু। ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই আক্ষেপ করেছেন, ‘‘ভেবেছিলাম রাজ্য সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা পাব। কিন্তু যে সব রিপোর্ট পেলাম তাতে এখন আমার ভাবনা বদলে গিয়েছে। বিজেপি ক্ষমতায় বসলে যাতে বেকায়দায় পড়ে তার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা তৈরি রাখা হয়েছে।’’ জেলাশাসক গোকুলমোহন হাজরিকা, অতিরিক্ত জেলাশাসক এ আর শেখ এবং পুরসভার কার্যনির্বাহী অফিসারকে মঞ্চে বসিয়েই তিনি অসহযোগিতার দু’টি উদাহরণ দেন। প্রথমত, ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অন্য বিভাগের মত পুরসভাকেও সরকারের কাছে বাজেট পেশ করতে হয়। এ বছর তা করা হয়নি। দ্বিতীয়ত, কর্মীদের মার্চের বেতনের টাকা নির্ধারিত সময়ে ট্রেজারি থেকে তোলা হয়নি। টাকা ফেরত চলে গিয়েছে। এর দরুন এ মাসে কর্মীরা বেতন পাবেন না। আর বেতনের টাকা যখন দেওয়া হবে, তাও যুক্ত হবে নয়া অর্থবর্ষের হিসেবে। শিলচরের বিজেপি বিধায়ক দিলীপকুমার পালও একে ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘‘শুধু বেতনের টাকাই নয়, অর্থবর্ষ শেষ বলে ৩ কোটি ফিরে গিয়েছে। পাঁচ বছরের হিসেব ধরলে ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ না দেওয়ায় ১৬ কোটি টাকা কাজে লাগাতে পারেনি কংগ্রেস-শাসিত শিলচর পুরসভা।’’

পুরসভার কার্যনির্বাহী অফিসার এস এন সিংহ এই দুই ক্ষেত্রেই নিজের কাঁধেই দায় নেন। তিনি যুক্তি দেন, ‘‘২৮ জন নির্বাচিত সদস্য মিলে পুরসভার যাবতীয় কাজ করেন। কিন্তু পুরনো বোর্ড ভাঙা, নির্বাচন ও দায়িত্ব হস্তান্তরে সাড়ে পাঁচ মাস সময় লেগেছে। এই সময় একা আমাকে সব কাজ করতে হয়েছে। বেতন তোলার জন্য ট্রেজারি মার্চের শেষ দিকে দু’দিন সময় দিয়েছিল। কিন্তু এত কম সময়ে সব প্রক্রিয়া শেষ করা যায়নি।’’ বাজেট পেশ না করার কারণ হিসেবে আর এক জটিলতার কথা শোনান এস এন সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘পাঁচ বছরের সমস্ত কাজকর্মের হিসেব টেনে এ বার বাজেট পেশ করতে হত। আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি, ২০১১ থেকেই সব হিসেব ফেলে রাখা হয়েছে। পাঁচ বছরে যে কাজ নির্বাচিত বোর্ড করতে পারেনি, আমি তা কী করে সাড়ে পাঁচ মাসে করে ফেলব?’’

২৮ সদস্যের পুরসভায় বিজেপি ১৭, কংগ্রেস ৮ ও নির্দল প্রার্থীর সংখ্যা ৩। স্বাভাবিক ভাবে পুর-প্রধান ও উপ-প্রধান পদে আর কোনও মনোনয়ন পত্র জমা পড়েনি। নীহার ঠাকুর ও চামেলি পাল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ওই দুই পদে জয়ী হন। সব নির্বাচিত সদস্য আজ শপথ নিলেও অনুপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন পুরপ্রধান তমালকান্তি বণিক। দু’বারের পুরপিতা মনজুর আহমদকে আজ দু’বার শপথ নিতে হয়। প্রথমে নিজের নাম উল্লেখ না-করে পুরো শপথবাক্য পাঠ করেন তিনি। প্রোটেম স্পিকার বীজেন্দ্রপ্রসাদ ভুল ধরিয়ে দিলে তাঁকে ফের শপথ-বাক্য পাঠ করতে হয়।

পদাধিকারবলে শিলচরের সাংসদ সুস্মিতা দেব, শিলচরের বিধায়ক দিলীপ পাল ও উধারবন্দের বিধায়ক অজিত সিংহ পুরসভার সদস্য। তাঁদের মধ্যে শুধু দিলীপবাবুই আজ শপথ নেন। উধারবন্দের বিধায়ক তথা রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী অজিত সিংহ শহরে থাকলেও এই অনুষ্ঠানে আসেননি। কংগ্রেস সূত্রের খবর, দলের জেলা সভাপতি অরুণ দত্ত মজুমদারকে আমন্ত্রণ করা হয়নি। তাই অজিতবাবু শিলচরে এসেও অনুষ্ঠানে গরহাজির ছিলেন। কংগ্রেসের নির্বাচিত সদস্যরা অবশ্য যথারীতি শপথ নিয়েছেন।

আমন্ত্রণ পত্র বিলি না হলেও আজ শপথ গ্রহণ দেখতে বঙ্গ ভবনে উপস্থিত হয়েছিলেন প্রচুর মানুষ। অধিকাংশই অবশ্য বিজেপি কর্মী।

Niharendra Narayan Thakur BJP municipality silchar tax Arvind Kejriwal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy