Advertisement
E-Paper

কালো টাকার তোপে এ বার কেজরীবালই

দিন আনি দিন খাই দশা, তবু দানবীর বড়! আর এমন দানবীরদের কোটি কোটি টাকাতেই তহবিল ফেঁপে উঠেছে দলের! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে অভিযোগের আঙুল এ বার অরবিন্দ কেজরীবালের দিকে। দুর্নীতি ও কালো টাকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে যাঁর রাজনীতিতে প্রবেশ, তাঁর বিরুদ্ধেই এ বার কালো টাকা সাদা করার অভিযোগ আনল বিজেপি। ভোট-সমীক্ষা বলছে, কিরণ বেদীকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার পরে ক্রমেই নম্বর কমছে বিজেপির খাতায়। এই অবস্থায় কেজরীবালের অস্ত্রেই শেষ বাজারে আপ-বধের লড়াইয়ে নামল বিজেপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৬

দিন আনি দিন খাই দশা, তবু দানবীর বড়! আর এমন দানবীরদের কোটি কোটি টাকাতেই তহবিল ফেঁপে উঠেছে দলের! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে অভিযোগের আঙুল এ বার অরবিন্দ কেজরীবালের দিকে। দুর্নীতি ও কালো টাকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে যাঁর রাজনীতিতে প্রবেশ, তাঁর বিরুদ্ধেই এ বার কালো টাকা সাদা করার অভিযোগ আনল বিজেপি। ভোট-সমীক্ষা বলছে, কিরণ বেদীকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার পরে ক্রমেই নম্বর কমছে বিজেপির খাতায়। এই অবস্থায় কেজরীবালের অস্ত্রেই শেষ বাজারে আপ-বধের লড়াইয়ে নামল বিজেপি।

দিল্লির ভোটের মাত্র পাঁচ দিন আগে বোমাটি অবশ্য ফাটিয়েছেন কেজরীবালেরই দলের এক প্রাক্তন সদস্য। গোপাল গয়াল। আপের ওয়েবসাইট থেকে তিনি বের করেছেন, গত বছর এপ্রিলে মধ্যরাতে চারটি লেনদেন হয়েছে ৫০ লক্ষ টাকা করে। দু’ কোটি টাকা। কেজরীবালের সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলে গয়াল ও বিজেপির দাবি, রাতারাতি ওই কালো টাকা সাদা করেছে আপ!

গোপাল গয়ালের দাবি, ওই টাকা দিয়েছিলেন, দিল্লির গঙ্গাবিহারের বাসিন্দা হেমপ্রকাশ শর্মা। সাদামাঠা জীবনযাপন করলেও ১১টি সংস্থার নির্দেশক তিনি। সমস্যা হল, ওই সংস্থাগুলির না আছে অস্তিত্ব, না আছে আয়। কোনওটির ঠিকানা দিল্লির কোনও বস্তি, কোনওটি মন্দিরের। স্কুটারে চড়ারও পয়সা নেই হেমপ্রকাশের। তবে ২ কোটি টাকা তিনি দিলেন কী করে?

ভুয়ো সংস্থা গড়ে, কিংবা ছাপোষা লোকজনকে সংস্থার ‘ডামি ডিরেক্টর’ বানিয়ে প্রতারণার ভুরিভুরি অভিযোগ হালে সামনে এসেছে বিভিন্ন বেআইনি অর্থলগ্নির সংস্থার কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পরে। আপ শুধু নয়, তৃণমূলও তহবিল সংগ্রহে এই পথ নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে সম্প্রতি।

সারদা তদন্তের ধাক্কায় জেরবার তৃণমূল যখন কোনও মতে একজোট হয়ে রাজ্যের দু’টি লোকসভা আসনের উপনির্বাচনে ঝাঁপাতে চাইছে, এমন একটা সময়ে, গত ৮ জানুয়ারি বিজেপির সিদ্ধার্থনাথ সিংহ কলকাতায় এক সাংবাদিক বৈঠক করে ত্রিনেত্র কনসালট্যান্ট প্রাইভেট লিমিটেড নামে এক সংস্থার মোটা অঙ্কের দান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সংবাদমাধ্যমেও খবর বেরোয়, ত্রিনেত্রর ডিরেক্টর মনোজ শর্মা গত বছর তৃণমূলের তহবিলে ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। অথচ তাঁর নিজের রোজগার মাসে বড়জোর হাজার পাঁচেক টাকা। ঠিকানা তিলজলার এক বস্তি। সংস্থার বাকি ডিরেক্টরদের ঠিকানা ভুয়ো। দেখা গিয়েছে, ২০১৩ সালে মনোজের সংস্থায় লোকসান হয়েছিল ৪,১২১ টাকা। আর ২০১৪ সালে লাভ হয় ১৩,৫৮৯ টাকা।

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তৃণমূল বা আপকে দেওয়ার জন্য এত টাকা মনোজ শর্মা, হেমপ্রকাশ শর্মারা পেলেন কোথা থেকে? কে জোগাল ওই টাকা? প্রাক্তন আপ নেতা গয়ালের অভিযোগ, লোকসভা ভোটের আগে প্রার্থী করার বিনিময়ে যে কালো টাকা কেজরীবালরা নিয়েছেন, সে সবই ঘুরপথে ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে জমা হয়েছে দলের অ্যাকাউন্টে। আয়কর দফতরের প্রাক্তন অফিসার হিসেবে এ সব কীর্তি ভালই জানা আছে কেজরীবালের।

শিয়রে ভোট নিয়ে কী বলছেন কেজরীবাল? তাঁর বক্তব্য, “আমাদের সব টাকা চেকে নেওয়া। তাই ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। যিনি চাঁদা দিচ্ছেন, তিনি কোনও গরমিল করলে আমাদের দায় কীসের?” অন্য আপ নেতাদের মতে, যখন কোনও চেক আসে, কম্পিউটারের মাধ্যমে একসঙ্গে তা নথিভুক্ত করা হয়। সেটি মাঝরাতেই হয়। এটা কোনও গোপন লেনদেন নয়। চাইলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তদন্ত করুক।

তদন্তের দাবি তুলছেন পীযূষ গয়াল, নির্মলা সীতারামনের মতো কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও। তাঁদের দাবি, নির্বাচন কমিশনও খতিয়ে দেখুক অভিযোগ। আপ-ছুট বিজেপি নেত্রী সাজিয়া ইলমি বলছেন, “আমি একেবারেই বিস্মিত নই। এমন কাণ্ড আম আদমি পার্টি করতেই পারে।”

বিজেপি এটা জানে, অভিযোগ যখন উঠেছে, তদন্তও নিশ্চয়ই হবে। কিন্তু তত দিনে মানুষ যা বোঝার বুঝে নিয়ে ভোট দিয়ে দেবেন। তাই ভোটের মুখে কেজরীবালের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করার এমন সুযোগ কোনও ভাবে হাতছাড়া করতে চাইছে না তারা।

কেন্দ্রের মন্ত্রী থেকে রাজ্য বিজেপি নেতা সকলে মিলে এ ভাবে তেড়েফুঁড়ে নামার পিছনে রয়েছে দলের ঘরোয়া সমস্যাও। কিরণ বেদীকে দলের মুখ করার পর থেকে বিজেপিতে সমস্যা বেড়েছে বই কমেনি। দলের অনেক নেতাই মুখ ফেরাচ্ছেন কিরণের থেকে। কিরণকে ‘স্বেচ্ছাচারী’ আখ্যা দিয়ে তাঁর সহায়কের পদ থেকে আজ ইস্তফা দেন নরেন্দ্র টন্ডন। পরিস্থিতি সামাল দিতে খোদ বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ তাঁর সঙ্গে দেখা করে ইস্তফা প্রত্যাহার করান। বিজেপির এই অস্বস্তির মধ্যেই কেজরীবালের বিরুদ্ধে তাঁর দলেরই এক প্রাক্তন সদস্য আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগ তোলায় নতুন অক্সিজেন পেয়েছে বিজেপি।

কিরণকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার পর একের পর এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে বিজেপির হাল খারাপ হচ্ছে। গত নভেম্বরে এবিপি-নিউজ এবং এসি নিয়েলসেনের যৌথ সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল বিজেপি ৪৬টি এবং আপ ১৮টি আসন পেতে পারে। কিন্তু জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে দেখা গিয়েছে, বিজেপি ২৯ ও আপ ৩৫। অর্থাৎ আপ গরিষ্ঠতার চেয়ে ১টি আসনে পিছিয়ে। তাদের নেতা যোগেন্দ্র যাদব বলছেন, “হারছেন বুঝে বিজেপি নেতারা দিশাহারা। তাই কাদা ছুড়তে শুরু করেছেন। এটা প্রত্যাশিতই ছিল।” বিজেপি নেতারা বলছেন, ওই সমীক্ষা হয়েছে নরেন্দ্র মোদী প্রচারে নামার আগে। তিনি নিজে প্রচারে নামায় ছবিটা এ বার পাল্টে যাবে। দিল্লিতে কাল ফের সভা করবেন মোদী।

delhi assembly election aam aadmi party vlack money arvind kejriwal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy