চন্দননগরের বসু পরিবারের রুশ বৌমা ভিক্টোরিয়া জ়িগালিনা বসু ও তাঁর নাবালক ছেলের বিরুদ্ধে ব্লু কর্নার নোটিস জারি করা হল। ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দিল্লি পুলিশ ভিক্টোরিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর নিজের ছেলেকেই অপহরণ, অপহরণ করে দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়া, এবং পাসপোর্ট জাল করার অভিযোগে এফআইআর দায়ের করেছে। তবে গোটা ঘটনায় মস্কোয় থাকা ভারতীয় দূতাবাসের গা-ছাড়া ভূমিকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বসু পরিবার।
ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে সৈকত বসুর বিয়ের পরে চন্দননগরের বসু পরিবার জানতে পেরেছিল, ভিক্টোরিয়ার বাবা রাশিয়ার গুপ্তচর সংস্থা এসএসবি-র অবসরপ্রাপ্ত গুপ্তচর। ভিক্টোরিয়া বিয়ের পরে সৈকতের বাবা, প্রাক্তন ফৌজি অফিসারকে কলকাতায় সেনার ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দফতরে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়ায় পরিবারের সন্দেহ হয়, ভিক্টোরিয়া নিজেও রুশ গুপ্তচর। সৈকত-ভিক্টোরিয়ার বিবাদের জেরে সুপ্রিম কোর্টেরই নির্দেশে তাঁদের পাঁচ বছরের পুত্র বাবা-মায়ের কাছে ভাগাভাগি করে থাকত। কিন্তু ৭ জুলাই ভিক্টোরিয়া ছেলেকে নিয়ে উধাও হন। প্রথমে দিল্লি থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে বিহারের নারকাটিয়াগঞ্জ রেল স্টেশন। সেখান থেকে ভারত-নেপাল সীমান্ত পেরিয়ে কাঠমান্ডু। দিন পাঁচেক পরে কাঠমান্ডু থেকে এয়ার আরবিয়ার বিমানে শারজা। শারজা থেকে বিমানে রাশিয়া। ভিক্টোরিয়া এ ভাবেই পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়ে ভারত ছেড়ে পালিয়েছেন বলে সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছিল দিল্লি পুলিশ। সুপ্রিম কোর্টের কড়া নির্দেশ সত্ত্বেও ভিক্টোরিয়া ছেলেকে নিয়ে দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় শীর্ষ আদালত দিল্লি পুলিশের গাফিলতি ও অকর্মণ্যতাকেই দায়ী করেছিল।
শুধু দিল্লি পুলিশের অর্কমণ্যতাই নয়, রাশিয়াস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বসু পরিবার। ভিক্টোরিয়া যখন ১০ জুলাই নেপালে পালিয়ে যান, তখন সৈকত মস্কোস্থিত ভারতীয় দূতাবাসকে জানিয়েছিলেন, তিনি এক নাবালক ভারতীয় নাগরিককে অপহরণ করে মস্কোর উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। ছ’দিন পরে, অর্থাৎ ১৬ জুলাই ভিক্টোরিয়া মস্কো পৌঁছলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ হয়নি। তাৎপর্যপূর্ণ হল, সৈকত প্রথম যে দিন (১০ জুলাই) মস্কোর ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, সে দিন দূতাবাস যা জবাব দিয়েছিল, ৭ অগস্ট মস্কোর ভারতীয় দূতাবাসে যোগাযোগ করে একই উত্তর পান সৈকত। আরও তাৎপর্যপূর্ণ, মামলাটিতে সুপ্রিম কোর্টে ১ অগস্টের শুনানির পরে মস্কোর ভারতীয় দূতাবাসের কাউন্সিলার শাখার যিনি প্রধান ছিলেন তাঁকে অন্য দফতরে সরিয়ে দেওয়া হয়। বসু পরিবারের অভিযোগ, গোটা বিষয়টির সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সরকারি দফতর যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও, গোটা বিষয়টিতে যাদের ভূমিকা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, সেই মস্কোস্থিত ভারতীয় দূতাবাস গত ৫ অগস্টের পর থেকে সৈকতের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)