Advertisement
E-Paper

দুই মলাটে বাঁধা লৌকিক ক্রীড়া

বঙ্গীয় ঐতিহ্যে প্রচলিত ৬০টি লৌকিক ক্রীড়াকে এক মলাটের মধ্যে নিয়ে এলেন নরসিং উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সমরেন্দ্র ভট্টাচার্য।

উত্তম সাহা

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৪০

বঙ্গীয় ঐতিহ্যে প্রচলিত ৬০টি লৌকিক ক্রীড়াকে এক মলাটের মধ্যে নিয়ে এলেন নরসিং উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সমরেন্দ্র ভট্টাচার্য। গত কাল সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁর ‘বঙ্গীয় লৌকিক ক্রীড়া’ বইটির আবরণ উন্মোচন করলেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্য।

লৌকিক ক্রীড়ার সংজ্ঞায় অনুষ্ঠানের শুরুতে সমরেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, ভলিবল ইত্যাদি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সমাজে একই নিয়মরীতিতে খেলা হয়। এ সব খেলাগুলি উপভোগ করার জন্য কোনও বিশেষ জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন হয় না। এগুলি শিষ্ট খেলা। অন্য দিকে, ডাংগুলি, ইকিরমিকির, ওপেনটি বায়োস্কোপ, কানামাছি, পানিঝুপ্পা, ঘুঁটি খেলা ইত্যাদি এক এক অঞ্চলে এক এক নিয়মে খেলা হয়। এ সব খেলাই হচ্ছে লৌকিক ক্রীড়া।’’ বঙ্গীয় সমাজে প্রচলিত লৌকিক ক্রীড়াগুলিকে নিয়েই তাঁর এই বই, জানান সমরেন্দ্রবাবু।

তপোধীর ভট্টাচার্য একে ‘বিরাট ডকুমেন্টেশন’ বলে মন্তব্য করেন। এই কঠিন কাজটি করা যে একজন গবেষকের মন ছাড়া সম্ভব নয়, সে কথার উল্লেখ করেন অন্য বক্তারাও। লোকগবেষক অমলেন্দু ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘বহু খেলার নাম পুরনো বই-পুঁথিতে আমরা পাই। কিন্তু সে সব খেলার ধরন আমরা জানি না। সে দিক থেকে এই গ্রন্থ প্রকাশ একটা বড় কাজ হয়েছে। সামাজিক ব্যবস্থা অধ্যয়নের জন্যও বইটি ভবিষ্যতে কাজে আসতে পারে।’’ তিনি জলের খেলা ‘লাই’-কে জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায় কিনা ভেবে দেখতে ক্রীড়া সংগঠকদের আহ্বান জানান।

একই অনুষ্ঠানে সমরেন্দ্রবাবুর লেখা ‘তৃতীয় রাজ্য ক্রীড়া সমারোহে শিলচর দলের সাফল্য’ গ্রন্থটির আবরণ উন্মোচন করেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোড়। এই বছরের ৭ থেকে ১২ জানুয়ারি রাজ্য ক্রীড়া সমারোহ কাছাড়ে অনুষ্ঠিত হয়। মোট ২৫টি ইভেন্টে খেলা হয়েছিল। পদক তালিকায় শিলচর ছিল দ্বিতীয় স্থানে। বাবুলবাবু বিস্মিত, ‘‘আসাম অলিম্পিক সংস্থা এখনও শংসাপত্র তৈরি করে পাঠাতে পারেনি। রেকর্ড বুকের কাজ সবে শেষ হয়েছে। প্রকাশ হয়নি এখনও। তার আগেই সমরেন্দ্রবাবু ব্যক্তিগত উদ্যোগে বই লিখে প্রকাশও করে ফেললেন!’’ এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন প্রাক্তন খেলোয়াড় পরিতোষ চন্দ এবং সুজিতকুমার দত্তগুপ্তও।

সমরেন্দ্রবাবুর কথায়, এই ধরনের লেখালেখির দরুন সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন তাঁর বাবা, বিশিষ্ট চিকিৎসক ব্রজেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। কিন্তু তিনি আজ বেঁচে নেই। তাই পিতার স্মৃতিতে কাল গ্রন্থপ্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি ১০জন চিকিৎসককে সম্বর্ধনা জানান। তাঁরা হলেন—মনুজেন্দ্র শ্যাম, নবারুণ পুরকায়স্থ, দেবীদাস দত্ত, সুজিতকুমার নন্দী পুরকায়স্থ, সত্যরঞ্জন ভট্টাচার্য, অরুণকুমার ভট্টাচার্য, হীরেন্দ্রকুমার চৌধুরী, অনিরুদ্ধ বিশ্বাস, সীতাংশু দাম ও সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য। তাঁদের সামনেই বিশিষ্ট কবি-লেখক অতীন দাশ তরুণ প্রজন্মের ডাক্তারদের বলেন, ‘‘মানুষের বিশ্বাস, ভগবানের পরই ডাক্তারদের অবস্থান। মানুষের এই বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে হবে।’’

শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেবীদাস দত্ত বলেন, ব্রজেন্দ্রবাবু খাকি প্যান্ট, সাদা শার্ট পরে সাইকেলে রোগীদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াতেন। আর এক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, সুজিতকুমার নন্দী পুরকায়স্থ তাঁকে ‘সেবা-দিকপাল’ বলে অভিহিত করেন। অনিরুদ্ধ বিশ্বাসের আক্ষেপ, আগে ডাক্তাররা সমাজের সঙ্গে যে ভাবে মিশতে পারতেন, এখন তা সম্ভব হচ্ছে না। লোকসংখ্যা বৃদ্ধিকে এর একটা বড় কারণ বলে মনে করেন সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য।

local games Book Publish
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy