Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
lata mangeshkar

BHupen-Lata: ভূপেন-লতা, আবার অন্য কোনওখানে...

ভূপেনবাবুর চার দশকের সঙ্গিনী কল্পনার দাবি, “দুই জনের পবিত্র সম্পর্কে তথাকথিত প্রেম থাকলে আমি অন্তত জানতাম।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:৪২
Share: Save:

আলাপ হয়েছিল ১৯৫৬ সালে। যাযাবরী জীবনের শেষে ১১ বছরের বিচ্ছেদ। আজ থেকে অন্য কোনওখানে ফের আলাপ-বিস্তার। যাযাবরের কাছে কোকিলকণ্ঠী ছিলেন সাক্ষাৎ সরস্বতী। আর কোকিলকণ্ঠীর কাছে যাযাবর গায়ক ছিলেন জীবন ও প্রাণশক্তির অপর নাম। মুম্বইয়ের হাসপাতালে যখন রোগশয্যায় শুয়ে ভূপেন হাজরিকা, তখন লতা মঙ্গেশকরের গানই চালিয়ে রাখতেন ছায়াসঙ্গিনী কল্পনা লাজমি। লতা মঙ্গেশকর ও ভূপেন হাজরিকার দীর্ঘ ৪৪ বছরের বন্ধুত্বে ঝড়-বিতর্ক কম হয়নি। এমনকি, সেই বিতর্কে লতাকে বিদ্ধ হতে হয়েছে ভূপেনবাবুর মৃত্যুর পরেও। কিন্তু সম্পর্কের সংজ্ঞাকে আমৃত্যু বন্ধুত্বের বন্ধনীতে বেঁধে রাখলেন দু’জনই।

ভূপেনের প্রথম পছন্দের শিল্পী ছিলেন লতাজি। কিন্তু সরাসরি যোগাযোগ নেই। ১৯৫৬ সালে নিজের প্রথম অসমিয়া ছবি ‘এরা বাটর সুর’-এ লতাজিকে দিয়ে গান গাওয়ানোর ইচ্ছে নিয়ে বন্ধু হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সাহায্য চান ভূপেনবাবু। হেমন্ত বম্বেতে লতাজি-সহ মঙ্গেশকর পরিবারের সঙ্গে আলাপ করান ভূপেনের। লতার কণ্ঠে আজও অমর ‘জোনাকরে রাতি’ গানটি। ভূপেনবাবু তাঁর প্রথম হিন্দি ছবি ‘এক পল’ তৈরি করেন ১৯৮৬ সালে। সব গান গেয়েছিলেন লতা।

২০১২ সালে ভূপেনবাবুর মৃত্যুর বর্ষপূর্তিতে এ নিয়ে ফের বিতর্ক মাথা চাড়া দেয় স্ত্রী প্রিয়ম্বদা পটেল হাজরিকার দাবিকে ঘিরে। কলকাতায় এলে সাধারণত ভূপেনের টালিগঞ্জের বাড়িতেই উঠতেন লতা। প্রিয়ম্বদা সরাসরি দাবি করেন, লতাজি কলকাতায় এলে ভূপেনবাবুকে আর কাছে পাওয়া যেত না। লতাকে নিয়ে তাঁর ও প্রিয়ম্বদার মধ্যে টানাপড়েনের ছবি ফুটে উঠেছিল ভূপেনবাবুর আত্মজীবনী ‘আমি এক যাযাবর’-এও।

ভূপেনবাবু ও লতার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ভূপেন হাজরিকা কালচারাল ট্রাস্টের চেয়ারপার্সন কল্পনা লাজমি। তিনি বলেন, “পাঁচ দশক ধরে স্বামীর থেকে দূরে থাকা প্রিয়ম্বদা ভূপেনদার মৃত্যুর পরে ফিরে এমন কাদা ছোড়াছুড়ি না করলেই পারতেন।” লাজমিই ঘটনাটি লতাকে জানান। লতা মামলাও করেছিলেন। ভূপেনবাবুর চার দশকের সঙ্গিনী কল্পনার দাবি, “দুই জনের পবিত্র সম্পর্কে তথাকথিত প্রেম থাকলে আমি অন্তত জানতাম। কিন্তু ভারতে ‘প্লেটনিক প্রেম’-এর বোধকে পাত্তা দেওয়া হয় না বলেই মৃত্যুর পরেও ভূপেন-লতাকে ঘিরে এত বিতর্ক।”

লতার যখন ৮০ বছরের জন্মদিন, ভূপেন বলেছিলেন, “আমি, ভূপেন হাজরিকা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, কারণ যে শতকে লতা মঙ্গেশকরের মতো মহান শিল্পী জন্মগ্রহণ করেছেন, সেই একই শতকে আমিও জন্ম নিয়েছি।” ৮৩ বছর বয়সে, মু্ম্বইয়ে চিকিৎসার জন্য আসা ভূপেনবাবুর অবস্থা দেখে চমকে উঠেছিলেন লতা। তার পর থেকে যোগাযোগ থাকত বোন ঊষার মাধ্যমেই। ভূপেনবাবুর মৃত্যুর তিন দিন আগে বার্তা রেকর্ড করে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন। সময় ঘনিয়ে এসেছে জানতে পেরেই ফোন করেছিলেন। মৃত্যুশয্যায় থাকা ভূপেনবাবুর কানে ফোন ধরেন কল্পনা। কান্না ভেজা গলায় লতা তাঁর আরোগ্য কামনা করেছিলেন। রুদালির গান ছড়িয়ে পড়ে কেবিনে ‘এক বুঁদ কভি পানি কি, মেরি আঁখিয়োঁ সে বরসায়ে...’ জল গড়িয়ে পড়ছিল দুজনেরই চোখ বেয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

lata mangeshkar Bhupen Hazarika
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE