মুখে মশারি। ত্রিপুরা সীমান্তে টহলদার বাহিনী। ছবি:বাপি রায়চৌধুরী।
জঙ্গি, চোরাচালানকারী নয় জঙ্গলি মশার ভয়ে কাঁপছে ত্রিপুরার সীমান্তরক্ষী বাহিনী! এক বার কামড়ালেই ম্যালেরিয়া যে নিশ্চিত। বিএসএফ সূত্রের খবর, ত্রিপুরার ২৪৫টি সীমান্ত চৌকির মধ্যে ১১০টির আশপাশের এলাকায় হানা দিয়েছে অ্যানোফিলিস মশা। সে সব জায়গায় ছড়িয়েছে ম্যালেরিয়ার ‘প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিফেরাম’ জীবাণু। মশার হামলা থেকে বাঁচতে তাই কার্যত ‘যুদ্ধ’ শুরু করেছে বিএসএফ।
আগরতলা থেকে ২৬০ কিলোমিটার উত্তরে ত্রিপুরা-মিজোরাম-বাংলাদেশ সীমান্তের পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা কান্তলাং গ্রামে গিয়ে সেটাই দেখা গেল। মশা-নিধনে রীতিমতো ‘অস্ত্র’ হাতে নেমেছেন বিএসএফ জওয়ানরা। কাঁধে এসএলআর, মুঠোয় মশা মারার ‘ফগিং মেশিন’। কান ফাটানো শব্দে তা থেকে ঝাঁঝালো সাদা ধোঁয়া ছড়াচ্ছে চারপাশে। জওয়ানদের মুখে মশা-রোধক মুখোশ। সেটি তৈরি করেছেন ত্রিপুরার বিএসএফ বাহিনীর এক উচ্চপদস্থ অফিসার। জওয়ানরা জানান, মশার কামড় থেকে বাঁচতে তাঁদের সঙ্গে থাকছে ‘ওডোমস’-ও।
রাজ্যে বিএসএফ বাহিনীর সদর অফিসের এক কর্তা জানান, মশার আক্রমণ ঠেকাতে প্রতিটি সীমান্ত চৌকির চার দিকে ২৫ কিমি ব্যাসার্ধ জুড়ে জঙ্গল পরিস্কার করা হয়েছে। দিনে দু’বার মশা তাড়ানোর ধোঁয়া ছড়ানো হচ্ছে।
নিয়মিত ক্লোরোকুইন জাতীয় প্রতিষেধক ওষুধ খাচ্ছেন জওয়ানরা। তিনি জানিয়েছেন, এই বছর জুন-জুলাই মাসে ত্রিপুরার পাহাড় এলাকায় ম্যালেরিয়ায় ৭০ জন আদিবাসীর মৃত্যু হয়। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় এখনও পর্যন্ত অবশ্য ম্যালেরিয়ায় কোনও জওয়ানের মৃত্যু হয়নি।
বিএসএফ সূত্রের খবর, ২০০৮ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ত্রিপুরায় কর্মরত জওয়ানদের অনেকে ছুটিতে বাড়ি ফেরার পর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। মৃত্যু হয় ১৪ জনের।
বাহিনীর চিকিৎসকদের বক্তব্য, বাড়ি ফেরার পর ঠিকমতো ম্যালেরিয়ার ওষুধ না খাওয়ার জন্যই ওই ঘটনাগুলি ঘটে। সতর্কতা হিসেবে এখন কোনও জওয়ানের ছুটির আবেদন মঞ্জুর হলে, তাঁর জন্য বিশেষ রক্তপরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। দেহে ম্যালেরিয়ার হদিস পেলে বাড়িতে ফিরে নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই জওয়ানকে একটি ফোন-বুক এবং ম্যালেরিয়া-কিট দেওয়া হচ্ছে। ফোন-বুকে ওই জওয়ানের সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কম্যাডেন্ট, চিকিৎসকের নাম ও টেলিফোন নম্বর থাকে। তাতে বাড়ি ফেরার পর জ্বর হলে জওয়ানরা ওই নম্বরে ফোন করে পরামর্শ নিতে পারবেন।