রাজ্যের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সামলাতে নজিরবিহীন ভাবেই স্থগিত করে দেওয়া হল বিধানসভার বাজেট অধিবেশন। আজ থেকে আগামী ৭ অগস্ট পর্যন্ত অধিবেশন স্থগিত থাকছে। জরুরি ভিত্তিতে সব বিধায়ককে নিজের নিজের কেন্দ্রে গিয়ে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ তদারকির নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল।
মুখ্যমন্ত্রী আজ বিধানসভায় জানান, ১৬ জুন থেকে চলছে বন্যার তাণ্ডব। এখন রাজ্যের ১৯টি জেলার প্রায় ১৬ লক্ষ মানুষ বন্যা কবলিত। এই পরিস্থিতিতে বন্যার্তদের উদ্ধার করাই রাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাই স্পিকারের কাছে অধিবেশন স্থগিত রেখে বিধায়কদের উদ্ধার কাজে নেতৃত্ব দিতে নিজের নিজের কেন্দ্রে পাঠানোর আবেদন জানান তিনি। স্পিকার আবেদন মঞ্জুর করেন। ফলে আজকের বাজেট আলোচনাও বাতিল হয়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সব জেলাশাসককে ত্রাণের টাকা পাঠানো হয়েছে। সকলকে ত্রাণ শিবির ঘুরে অবিলম্বে ত্রাণ ও উদ্ধারের যাবতীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। বিধায়করা কেন্দ্র ঘুরে রিপোর্ট দেবেন। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে কেন্দ্রকে চূড়ান্ত রিপোর্ট পাঠাবে রাজ্য।’’
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ রাজ্যের বন্যার খবর নিয়েছেন বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান। বন্যাত্রাণে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন রাজনাথ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও আশ্বাস দিয়েছেন, ত্রাণে টাকার কোনও অভাব হবে না। তিনি সব দলকে হাত মিলিয়ে কাজে নামতে অনুরোধ করেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, আজ পর্যন্ত বন্যার মৃতের সংখ্যা ১২। বন্যায় রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্র মাজুলির। তিনি দ্রুত মাজুলি রওনা হচ্ছেন বলে জানান।
এ দিকে, আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে স্বাভাবিকের থেকে অসম-সহ উত্তর-পূর্বে ২১ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। তারপরেও ব্রহ্মপুত্র, জিয়াভরালি, সুবনসিরি, ধনসিরি, দিখৌ, বুড়িদিহিং, বেকি, পুঁথিমারি, গঙ্গাধর, কপিলি, মানস, জিয়াঢল, কাটাখাল, সঙ্কোশ, কুশিয়ারা নদীগুলি বিপদসীমা ছাড়িয়েছে। এমনকী বহু বছর পরে আজ ব্রহ্মপুত্রের জল ফ্যান্সিবাজার, ভূতনাথ এলাকায় পাড় ছাপিয়ে শহরে ঢুকে পড়েছে। এখনও বাড়ছে জল।
কাজিরাঙায় ১০০ শতাংশ জঙ্গলই জলের তলায়। প্রাণ বাঁচাতে কার্বি আংলংয়ের উঁচু জায়গার দিকে দলে দলে পাড়ি দিচ্ছে বন্যপ্রাণীরা। কাজিরাঙার মধ্য দিয়ে যাওয়া ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়কে কোথাও এক কোমর জল। উজানি-নামনি অসমের মধ্যে ছোট গাড়ি চলাচলও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ ও ফোন সংযোগ নেই। ত্রাণ কাজে নেমেছে সেনা, এনডিআরএফ।