স্বামীহারা: বুলন্দশহরে নিহত পুলিশ অফিসার সুবোধকুমার সিংহের অন্ত্যেষ্টিতে স্ত্রী রজনী। মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের এটায়। পিটিআই
বাবা ছেলেকে শেখাতেন, ‘ধর্মের নামে কখনও হিংসা ছড়াবে না’। গো-রক্ষকদের হাতে বাবার মৃত্যুতে ছেলের প্রশ্ন ‘‘এ বার কার বাবার পালা?’’
দাদা বোনকে বলতেন, ‘কর্তব্যে কখনও অবহেলা করবে না’। দাদা নিহত হওয়ার পরে বোন বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজে সারাক্ষণ ‘গরু গরু’ করেন। তিনি নিজে এসে কেন গোরক্ষা করতে পারেন না? বলা হয়, গরু আমাদের মা। তা হলে কি মাকে বাঁচাতে দাদাকে মরতে হল?’’
স্বামী স্ত্রীকে কয়েক দিন আগে বলেছিলেন, ‘ছুটি চেয়েছিলাম, কর্তারা দিলেন না’। কর্মরত অবস্থায় সেই স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীর কান্না, ‘‘ছুটিতে থাকলে তো ওকে মরতে হত না!’’
কাল উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরে নিহত পুলিশ অফিসার সুবোধকুমার সিংহের পরিবার মানতেই পারছে না, তিনি আর কখনও বাড়ি ফিরবেন না। তাঁর ছেলে অভিষেক বলেন, ‘‘আমার পরীক্ষা চলছিল। বাবা বলছিলেন, যে সব বিষয়ে আমি দুর্বল, সেগুলোয় জোর দিতে। ঠিক মতো খাওয়াদাওয়া করছি কি না, আগের দিনও খোঁজ নিয়েছেন।’’ তাঁদের দাবি, আখলাক খুনের তদন্তকারী অফিসার ছিলেন বলেই পূর্বপরিকল্পিত ভাবে সুবোধকে খুন করা হয়েছে। সুবোধের স্ত্রী জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে আখলাক খুনের পরে তাঁদের বারবার হুমকি দেওয়া হত। তখন দিনের পর দিন বাড়ি থেকে বেরোতেন না তাঁরা। এই মৃত্যুর পিছনে ‘পুলিশের ষড়যন্ত্র’ রয়েছে বলে দাবি করেছে সুবোধের পরিবার।
পুলিশ খুনের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত যোগেশ রাজ-সহ পাঁচ জনকে আজ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃত যোগেশ বুলন্দশহরের বজরং দলের প্রধান ও উত্তরপ্রদেশের বিজেপি যুব মোর্চার সদস্য। বাকি ধৃতদের মধ্যে এক জন ভিএইচি এবং একজন বিজেপি যুব মোর্চার নেতা। এফআইআরে নাম থাকা অভিযুক্তদের অনেকেই ভিএইচপি ও বজরং দল-হিন্দু যুব বাহিনীর সদস্য। ফলে পুলিশ খুনের পিছনে উগ্র হিন্দুত্ববাদী যোগই ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। ভিডিয়ো ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে পুলিশের ছ’টি দল। সিট গড়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। আজ যোগী সরকারকে নোটিস পাঠিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। অন্য পুলিশ কর্মীরা কেন সুবোধকে একা যেতে দিলেন, তা খতিয়ে দেখছে বিশেষ তদন্তকারী দল।
আরও পড়ুন: সাক্ষী-মৃত্যুতে ধাক্কা আখলাক মামলায়
সোমবার সকালে ২৫টি গবাদি পশুর দেহ উদ্ধার ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় বুলন্দশহরে। গো-হত্যার গুজব ছড়িয়ে পথে নামে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ হাজির হলে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। তখনই বিক্ষোভকারীদের ছোড়া পাথরে আহত হন সুবোধ। তাঁর চালক রাম আশরে আজ জানিয়েছেন, সুবোধকে গাড়িতে চড়িয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় বিক্ষোভকারীরা ‘মার মার’ করে পিছনে ধাওয়া করে গাড়িটি ধরে ফেললে প্রাণভয়ে পালান তিনি। চালকের কথায়, ‘‘গাড়ির মধ্যেই স্যারকে গুলি করা হয়।’’ একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গাড়ির বাইরে হেলে পড়ে রয়েছে সুবোধের দেহ। চারপাশে গুলির শব্দ। তার মধ্যেই ‘গুলি করো, গুলি করো’ বলে চিৎকার করছে কেউ। ময়না-তদন্তে জানা গিয়েছে, ভুরুর নীচে গুলি লেগে মৃত্যু হয়েছে সুবোধের। তাঁর বন্দুক ও মোবাইল ফোন চুরি গিয়েছে।
তাণ্ডবে প্রাণ গিয়েছে সুমিতকুমার সিংহ নামে ২০ বছরের এক যুবকের। চিঙ্গারওয়াতির বাসিন্দা সুমিত বিজেপি কর্মী ছিল বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। সুমিতের বাবা অমরজিৎ জানান, তাঁরা ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের এক জনের চাকরি চান। সেই দাবি অবশ্য রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। পরিবারের এক সদস্যকে সরকারি চাকরি দেওয়া হবে বলে আশ্বাসও দিয়েছেন।
কিন্তু নিহত পুলিশ অফিসারের ভাই ভাই বলেছেন, ‘‘যা-ই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক না কেন, আমরা কি দাদাকে ফিরে পাব?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy