শপথ নিতে যাচ্ছেন অনুপ্রিয়া পটেল। ছবি: পিটিআই।
মুক্তোর মালা, খোলা চুল আর গোলাপী শাড়িতে চুঁইয়ে পড়ছে আত্মবিশ্বাস। রাষ্ট্রপতি ভবনের দরবার হলে আজ তাঁকে দেখে বোঝার জো নেই, নিজের মায়ের সঙ্গে গত সাত বছর ধরে রাজনৈতিক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন! এমনকী, যে দলের হয়ে মোদীর মন্ত্রিসভায় অন্যতম কনিষ্ঠ হিসাবে শপথ নিলেন, সেই ‘আপনা দল’ থেকেই তাঁকে তাড়িয়ে দেওয়ার লাগাতার চেষ্টা করে যাচ্ছেন দলীয় সভাপতি স্বয়ং তাঁর মা কৃষ্ণা পটেল। বরং উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুরের এই সাংসদ অনুপ্রিয়া পটেল হেসে বলছেন, ‘‘আজ এখানে পৌঁছতে পেরেছি মায়ের আশীর্বাদেই। বাবা-মার পরিশ্রমেরই আজ আমাদের দল শক্তিশালী।’’
উত্তরপ্রদেশের কুর্মি সম্প্রদায়কে (অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীভুক্ত) আসন্ন নির্বাচনে পাশে পেতে মোদীর তাস এ বার এই অনুপ্রিয়া। যাকে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক শিবির চিহ্নিত করতে শুরু করেছে লম্বা দৌড়ের ঘোড়া হিসাবে। বয়স মাত্র ৩৫, নিজের জাত-রাজনীতির সমীকরণকে চেনেন হাতের তালুর মতো। তদুপরি পড়াশোনা করেছেন দিল্লির লেডি শ্রীরাম কলেজে। কুর্মি নেতা সোনেলাল পটেলের (যাঁর হাতে তৈরি এই আপনা দল) একটি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর যিনি ঘরে এবং বাইরে একসঙ্গে লড়ে, চলে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সুনজরে। বিজেপি-র শরিক হিসাবে দাঁড় করিয়েছেন নিজের দলকে। আজ প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পর এ কথা স্পষ্ট, উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগেই বিজেপি-র সঙ্গে মিশে যাবে ‘আপনা দল’।
২০১২ সালে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটে লড়ে বিধায়ক হয়েছিলেন। তার পরই বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের নজরে পড়েন অনুপ্রিয়া। আরও বড় মাঠে খেলার স্বপ্ন দেখা শুরু হয়। এর পর ২০১৪ সালে লোকসভায় লড়ে জিতে আসেন অক্লেশে। অবশ্যই তৎকালীন মোদী-হাওয়াকে সঙ্গে নিয়ে। আপনা দল থেকে তখন জেতেন মোট দু’জন— তিনি এবং হরিবংশ সিংহ। নিজের ‘গ্ল্যামার কোশেন্ট’-এর সুবাদেই হোক অথবা সুবক্তা হিসাবে পরিচিত ও জনপ্রিয় হওয়ার জন্য (মনস্তত্ত্ব এবং বাণিজ্য-পরিচালনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন)— হরিবংশ সিংহের থেকে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছেন অনুপ্রিয়া, এমনটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল বেশ কিছু দিন আগেই।
আরও পড়ুন: মোদী ক্যাবিনেটে নতুন মন্ত্রী কারা হলেন? দেখে নিন
তবে থেকেই গিয়েছিল মা এবং মেয়ের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই। ২০০৯ সালে সোনেলালের মৃত্যুর পর স্ত্রী কৃষ্ণা হন দলের সভাপতি এবং মেয়ে অনুপ্রিয়া সাধারণ সম্পাদক। এর পরই শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। মা এবং তাঁর বড় মেয়ে পল্লবী পটেল এক দিকে, অন্য দিকে অনুপ্রিয়া। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই গ্রহণযোগ্যতা এবং রাজনৈতিক জনপ্রিয়তায় মা এবং দিদিকে অনেকটাই পিছনে ফেলে দেন অনুপ্রিয়া। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, এই গৃহযুদ্ধকেই কাজে লাগিয়ে আপনা দলকে নিজের দিকে টেনে নেন বিজেপি নেতৃত্ব। আজ মেয়ের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আসা তো দূরস্থান, এমনকী টিভিতেও নাকি দেখেননি মা। আর এই মা-মেয়ের বৈরিতাকে কাজে লাগিয়ে তার বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন নিজের দলের সতীর্থ সাংসদ হরিবংশ সিংহ। কিন্তু ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামলেছেন অনুপ্রিয়া। আজ একটি কটু কথাও নিজের পরিবার সম্পর্কে বলতে শোনা যায়নি তাঁকে। শুধু বলেছেন, ‘‘হরিবংশ সিংহ আমার পরিবার নিয়ে কোনও টিপ্পনি যেন না করেন। সবাই আমার সঙ্গে রয়েছেন।’’
এর পরই মায়ের ‘আশীর্বাদ’-এর কথা যে ভাবে বললেন এই কনিষ্ঠা মন্ত্রী, তা দেখে রীতিমতো চমৎকৃত দিল্লির পোড় খাওয়া রাজনৈতিক মহল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy