Advertisement
E-Paper

হাতে রসদ দশ দিনের, সেনাবাহিনী নিধিরাম

আজ যুদ্ধ শুরু হলে ১০ দিন বাদে স্রেফ খালি হাতে লড়াই করে মরতে হবে ভারতীয় সেনা জওয়ানদের। কারণ সিংহভাগ গোলাবারুদ ১০ দিনেই ফুরিয়ে যাবে। হাতে বন্দুক-কামান থাকবে। তাতে গুলিগোলা থাকবে না। সেনাবাহিনীর গোলাবারুদের খতিয়ান দেখে শুক্রবার সিএজি সংসদে এই রিপোর্ট পেশ করেছে। সিএজি-র বক্তব্য, এখন যুদ্ধ শুরু হলে সেনার ৯০ শতাংশ গোলাবারুদ ১০ দিনের মধ্যেই ফুরিয়ে যাবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৫ ০২:৩৪

আজ যুদ্ধ শুরু হলে ১০ দিন বাদে স্রেফ খালি হাতে লড়াই করে মরতে হবে ভারতীয় সেনা জওয়ানদের। কারণ সিংহভাগ গোলাবারুদ ১০ দিনেই ফুরিয়ে যাবে। হাতে বন্দুক-কামান থাকবে। তাতে গুলিগোলা থাকবে না।

সেনাবাহিনীর গোলাবারুদের খতিয়ান দেখে শুক্রবার সিএজি সংসদে এই রিপোর্ট পেশ করেছে। সিএজি-র বক্তব্য, এখন যুদ্ধ শুরু হলে সেনার ৯০ শতাংশ গোলাবারুদ ১০ দিনের মধ্যেই ফুরিয়ে যাবে। যে কোনও সেনাবাহিনীর নিয়মই হল, অন্তত ৪০ দিন তীব্র লড়াইয়ের মতো গোলাবারুদ মজুত রাখতে হয়। ২০১২ সালে সেনাবাহিনী লক্ষ্য নিয়েছিল, ২০১৫-র মার্চের মধ্যে এর অন্তত অর্ধেক, অর্থাৎ ২০ দিন যুদ্ধ করার মতো গোলাবারুদ মজুত করে ফেলা হবে। তার পর ২০১৯-এর মধ্যে পুরোপুরি ৪০ দিন যুদ্ধ করার মতো গোলাবারুদ মজুত করে ফেলা হবে। কিন্তু সিএজি রিপোর্ট বলছে, সেই লক্ষ্যের ধারেকাছে পৌঁছনো যায়নি। ১৯৯৯-এ কারগিল যুদ্ধের পর সেনার সদর দফতর ঠিক করেছিল, ৪০ না হোক, অন্তত ২০ দিন যুদ্ধ করার মতো গোলাগুলি মজুত রাখতেই হবে। কার্গিলের ১৫ বছর কেটে গেলেও সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি। এক দিকে পাকিস্তান, অন্য দিকে চিনের মতো প্রতিবেশী, তার সঙ্গে রয়েছে জম্মু-কাশ্মীর ও উত্তর-পূর্বের মতো রাজ্যগুলিতে জঙ্গি দমন—এই বিশাল দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে কার্যত ঢাল-তরোয়ালহীন নিধিরাম সর্দারের মতোই দশা সেনাবাহিনীর।

রাজনীতির নিয়মে সিএজি-র এই রিপোর্টকেই হাতিয়ার করেই বিরোধীদের সরকারের উদ্দেশে কামান দাগার কথা। কিন্তু তা হয়নি। কারণ সিএজি ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত পরিস্থিতির পর্যালোচনা করেছে। সে সময় ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সরকার। সরকারকে দোষ দিতে গেলে দায় নিজের ঘাড়েই পড়বে। আবার বিজেপি-ও কংগ্রেসকে আক্রমণ করছে না। কারণ মোদী জমানায় যে পরিস্থিতি বদলেছে, তা নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের আশ্বাস, ‘‘ভারত সুরক্ষিত। সব সময় সুরক্ষিত থাকবে।’’ প্রাক্তন সেনাপ্রধান, বর্তমানে মোদী সরকারের মন্ত্রী ভি কে সিংহও রিপোর্টের বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, বর্তমান সিএজি শশীকান্ত শর্মা আগে প্রতিরক্ষা সচিব ছিলেন। তিনিই এই বিষয়টি ভাল জানবেন।

প্রশ্ন হল, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনীর কেন এই করুণ পরিস্থিতি?

সিএজি রিপোর্ট এ জন্য একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, সেনা, অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডকে কাঠগড়ায় তুলেছে। সিএজি-র বক্তব্য, সেনা অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডকে ঠিক মতো গোলাবারুদ সরবরাহ না করার জন্য দুষছে। সরবরাহ হবে কী করে? সেনার চাহিদা পূরণ করার মতো যথেষ্ট অর্থই সরকারের থেকে চায়নি অর্ডন্যান্স বোর্ড। বিদেশ থেকে গোলাবারুদ আমদানি করে অভাব মেটানোর জন্য ২০১৩-য় যে সব প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল, সেগুলো ঠিক মতো শেষ হয়নি। বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে লাল ফিতের ফাঁস।

যা পরিস্থিতি, তাতে বায়ুসেনার হাতে যথেষ্ট সংখ্যায় যুদ্ধবিমান নেই। পাকিস্তান ও চিন একসঙ্গে হামলা চালালে ভারতের ৪৫ স্কোয়াড্রন যুদ্ধবিমান দরকার। আছে মাত্র ২৫ স্কোয়াড্রন। তার মধ্যে আবার অর্ধেকের বেশি মিগ-২১ ও মিগ-২৭-এর মতো পুরনো আমলের যুদ্ধবিমান। এর পর সেনার ভাঁড়ারের অবস্থা স্বাভাবিক ভাবেই দুশ্চিন্তা ছড়িয়েছে।

গত বছর জানুয়ারিতে বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল বিক্রম সিংহ বলেছিলেন, যুদ্ধের জন্য যে ৪০ দিনের গোলাগুলি মজুত রাখতে হয়, তার অর্ধেকও বাহিনীর হাতে নেই। যার অর্থ, ২০ দিনও লড়তে পারবে না সেনাবাহিনী। শুধু যুদ্ধের প্রস্তুতি নয়, ফৌজের প্রশিক্ষণেও ধাক্কা লাগছে। চিনের মোকাবিলার জন্য ৯০ হাজার জওয়ান নিয়ে নতুন মাউন্টেন স্ট্রাইক কোর গড়ে তোলা হচ্ছে। যুদ্ধের জন্য মজুত ভাণ্ডার থেকেই তাদের গোলাগুলি দিতে হবে। যদি ২০১৯-এর মধ্যে ৪০ দিনের গোলাগুলি মজুত করতে হয়, তা হলে ১৯,২৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন। বিক্রম সিংহের পূর্বসূরি ভি কে সিংহও একই রিপোর্ট দিয়েছিলেন। কাজেই সিএজি-র রিপোর্টে কোনও ভুল নেই। দীর্ঘদিন যুদ্ধ চালানোর মতো গোলাগুলি সেনার হাতে নেই।

cag report indian army ammunitions ammunition storage poor army storage indian army
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy