সিবিআই বলছে, লোকবলের অভাব। তাই পশ্চিমবঙ্গের সারদা ও অন্য বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে সব মামলার তদন্ত করতে পারবে না। ওই ধরনের সব সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত করতে হলে রাজ্য পুলিশকে ১০ জন পুলিশ সুপার ও প্রয়োজন মতো নিচুতলার কর্মী দিয়ে সাহায্য করতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গের যুক্তি, রাজ্যের পুলিশ বাহিনীতেই হাজার হাজার পদ ফাঁকা পড়ে। এই পরিস্থিতিতে সারদা ও অন্য ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত ঠিক মতো হবে কি না, তা নিয়েই চিন্তায় পড়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি টি এস ঠাকুর আজ সিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘‘লোকবলের অভাবের ফলে যেন তদন্তে ধাক্কা না লাগে। কোনও ফাঁক যেন না থাকে।’’ সিবিআই যদি সব মামলার তদন্ত না করে তা হলে অর্থ লগ্নি সংস্থা কেলেঙ্কারির পিছনে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র প্রকাশ করার ক্ষেত্রে কী প্রভাব পড়বে, তা-ও সিবিআইকে ভেবে দেখতে বলেছেন বিচারপতি ঠাকুর।
সিবিআইয়ের আর্জি, তদন্তের স্বার্থে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাদের ১০ জন পুলিশ সুপার দিক। কলকাতায় সিবিআইয়ের কোনও বিশেষ আদালত নেই। তার ফলে গোটা রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে সিবিআইকে মামলা চালাতে হচ্ছে। তাই কলকাতায় তিনটি বিশেষ আদালত তৈরি হোক। এ বিষয়ে রাজ্যকে মতামত জানাতে বলা হয়েছে। আগামী সোমবার বিচারপতি ঠাকুর ও বিচারপতি সি নাগাপ্পনের বেঞ্চে ফের এই মামলার শুনানি হবে।
বিজেপি-তৃণমূলের আঁতাঁতের ফলে সারদায় সিবিআই তদন্তের গতি শ্লথ হয়েছে বলে আগেই অভিযোগ ওঠা। আজ সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছে, তারা সারদার বিরুদ্ধে সব মামলার তদন্তের ভার হাতে নিতে চায় না। সারদা বাদ দিলে পশ্চিমবঙ্গে আরও ২৪৩টি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। সিবিআইয়ের যুক্তি, সব ক’টি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করাও তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ, সব মামলা হাতে নিতে গেলে তদন্তের গুণগত মান নষ্ট হবে।
সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইকে পশ্চিমবঙ্গ ও অন্য রাজ্যে অর্থ লগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারির পিছনে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছিল। টাকার হাত বদল কী ভাবে হয়েছে, তা-ও দেখতে বলা হয় ওই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে। সেবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, কোম্পানি নিবন্ধকের মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির গাফিলতি আছে কিনা বা তাদের কোনও কর্তা জড়িত কি না, তা-ও দেখছে সিবিআই। এই পরিস্থিতিতে সিবিআইয়ের তরফে যুক্তি, সব সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গেলে যে লক্ষ্যে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা পূরণ হবে না। স্থির লক্ষ্য রেখে তদন্ত করলেই ফল মিলবে। আজ সিবিআইয়ের আইনজীবী রঞ্জিত কুমার আদালতে বলেন, ‘‘অন্য রাজ্যে মামলার সংখ্যা কম। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এত মামলা বলেই সমস্যা বেশি।’’
এই অবস্থায় রাজ্য পুলিশ সিবিআইকে সাহায্য করতে পারবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ রাজ্যের আইনজীবী নাগেশ্বর রাও আদালতে যুক্তি দিয়েছেন, রাজ্যের বাহিনীতে হাজার হাজার পদ ফাঁকা পড়ে রয়েছে। তবে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিলে তিনি রাজ্য সরকারের অবস্থান জেনে আদালতকে জানাবেন।
সিবিআই ও রাজ্যের এই অবস্থান দেখে কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের কটাক্ষ, ‘‘এ হল চোরে চোরে মাসতুতো ভাই।’’ মান্নানের উদ্যোগেই সারদায় সিবিআই তদন্তের দাবিতে জনস্বার্থের মামলা হয়েছিল। আজ মান্নান বলেন, ‘‘মমতা ও মোদী, দুই সরকারের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ। কেলেঙ্কারি থেকে বাঁচতে তাঁরা হাত মিলিয়েছেন। সিবিআইকে পরিকাঠামো না দিয়ে দুর্বল করে রাখা হয়েছে।’’
সিবিআই সূত্রের অবশ্য দাবি, সামগ্রিক ভাবেই তাদের ঘাড়ে যে পরিমাণ তদন্তের ভার চেপেছে, সেই তুলনায় লোকবল কম। তার উপরে পশ্চিমবঙ্গে লগ্নি সংস্থা সংক্রান্ত মামলা এত বেশি যে চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এর আগে সারদা তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারি চেয়েছিল রাজ্য। তখনই সিবিআই জানিয়েছিল, সব মামলার তদন্তের ভার হাতে নেওয়া মুশকিল।