Advertisement
E-Paper

রাঘববোয়ালদের ধরতে সব ‘গো স্লো’, আড়ালে কে?

২০১৪-র মে মাসে সারদা-রোজ ভ্যালি কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্ত শুরুর পর থেকে এটাই ছিল রোজকার চেনা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৫৬
নরেন্দ্র মোদী

নরেন্দ্র মোদী

প্রতিদিনই কাউকে না কাউকে সিবিআই তলব করছে। একের পর এক তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী গ্রেফতার হচ্ছেন। প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, এর পর কে!

২০১৪-র মে মাসে সারদা-রোজ ভ্যালি কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্ত শুরুর পর থেকে এটাই ছিল রোজকার চেনা ছবি। ২০১৮-র ফেব্রুয়ারিতে এসে সেই দৃশ্য এখন উধাও। তদন্তে ভাটার টান। তদন্ত থেকে আদালতে চার্জশিট পেশের কাজ— সবই যেন ‘গো স্লো’ হয়ে গিয়েছে। সারদা-রোজ ভ্যালি কাণ্ডে মদন মিত্র থেকে তাপস পাল, যাঁরা গ্রেফতার হয়েছিলেন, একে একে সকলেই জামিন পেয়ে গিয়েছেন। উচ্চ আদালতে গিয়ে সেই জামিন নাকচ করার কোনও তোড়জোড়ও নেই।

সিবিআই কর্তাদের প্রশ্ন করলে উত্তর মিলছে, ‘কর্তার ইচ্ছায় কর্ম। উপরমহলের নির্দেশ অনুযায়ীই সব কিছু চলছে।’ উপরমহল মানে কি প্রধানমন্ত্রীর দফতর? সেই প্রশ্নে মুখে কুলুপ আঁটছেন সিবিআই কর্তারা।

আরও পড়ুন: টাকার আশা ছাড়ো, সাফ জবাব নীরবের

কী বলছে মোদী সরকার? দলীয় নেতাদের গ্রেফতারি শুরুর পর মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সিবিআই-কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাজে লাগানোর অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল। তখন কেন্দ্র বলেছিল, ‘সিবিআই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তদন্ত করছে। এতে সরকারের কোনও হাত নেই।’ এখন তদন্তের ধীর গতি নিয়েও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের একই যুক্তি, ‘সিবিআই আইন অনুযায়ী তদন্ত করছে। সরকার তাতে নাক গলাচ্ছে না।’

রাজ্যে বিরোধীরা অবশ্য অন্য কথা বলছেন। ‘দিদিভাই-মোদীভাই’ গোপন আঁতাঁতের অভিযোগ তুলে তাঁরা বলছেন, সেই কারণেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন সরাসরি মোদীকে আক্রমণ করছেন না। রাহুল গাঁধীর থেকেও দূরত্ব বজায় রাখছেন।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল, সারদা-রোজ ভ্যালির মতো সংস্থাগুলির কর্মকাণ্ডের পিছনে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’ খুঁজে বের করতে হবে। ধরতে হবে রাঘব-বোয়ালদের। সেই ‘রাঘব-বোয়াল’ বা সন্দেহের তালিকায় থাকা তৃণমূল নেতাদেরও আর ডাক পড়ছে না। নারদ-কাণ্ডেও একই দশা। ছ’জন সাংসদ, চার জন মন্ত্রী, এক জন বিধায়ক তথা ডেপুটি মেয়র, এক জন প্রাক্তন মন্ত্রী এবং এক জন আইপিএস অফিসার— এই ১৩ জন প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে সিবিআই এফআইআর করেছিল। সেটা গত এপ্রিলে। এখনও মুকুল রায় এবং এসএমএইচ মির্জার ঠিকানায় ঘুষ-কাণ্ডের পুনর্নির্মাণই করা হয়নি।

সারদা-রোজ ভ্যালিতেও একে একে সকলে জামিন পেয়ে গিয়েছেন। জামিন নাকচ করতে তেমন ভাবে উদ্যোগীও হয়নি সিবিআই। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘটনাই যেমন। রোজ ভ্যালি কাণ্ডে সুদীপ গত বছর ১৯ মে জামিন পেয়েছেন। অগস্টে জামিন নাকচের জন্য সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে সিবিআই। এখনও তার শুনানি হয়নি। সিবিআইয়েরও তা নিয়ে যেন কোনও মাথাব্যথা নেই। সিবিআইয়ের আইনজীবী এক দিনও সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে দ্রুত শুনানির অনুরোধ জানাননি। তথ্য বলছে, সাড়ে তিন বছরে সারদা-কেলেঙ্কারির মাত্র একটি মামলাতেই চূড়ান্ত চার্জশিট পেশ করেছে সিবিআই। আর নারদ-কাণ্ডে এখনও কলকাতা হাইকোর্টে তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্টই জমা পড়েনি।

তা হলে কি সারদা-রোজ ভ্যালি-নারদ তদন্ত হিমঘরে চলে গেল? দিল্লির প্রবীণ রাজনীতিবিদরা অবশ্য বলছেন, একেবারেই নয়। মায়াবতী-মুলায়মের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত প্রয়োজন পড়লেই মাথাচাড়া দিয়েছে। বফর্স-কাণ্ডেও কবর খুঁড়ে ফের সিবিআই তদন্ত শুরু করতে চাইছে মোদী সরকার। কিন্তু নীরব মোদী কাণ্ডে এমনিতেই মোদী এখন চাপের মুখে। তখন কাচের ঘরে বসে ঢিল ছোড়া বিচক্ষণতার কাজ নয়। পশ্চিমবঙ্গে সামনে বিধানসভা ভোটও নেই। ফলে সিবিআই-কে মাঠে নামিয়ে বাজার গরম করেও কোনও লাভ নেই।

Narendra Modi CBI Ineffectiveness Scam Investigation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy