E-Paper

বাহিনীর কর্তারা কী জানতেন, শুরু তদন্ত

তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, একজন সেপাইয়ের পদে কর্মরত কারও পক্ষে একার চেষ্টায় আধাসামরিক বাহিনীতে বাঁকা পথে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া অসম্ভব।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:১৪
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

জাল পরিচয়পত্রের মাধ‍্যমে আধাসামরিক বাহিনীতে নিয়োগ জালিয়াতির তদন্তে অসম রাইফেলস, সিআইএসএফ, বিএসএফ এবং এসএসবির কর্তাদের তলব করেও জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব শুরু করেছে সিবিআই। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, ওই সব আধাসামরিক বাহিনীর নিয়োগ সংক্রান্ত পদের আধিকারিকদের কী ভূমিকা তা খতিয়ে দেখা উচিত।

সম্প্রতি কাঁকিনাড়ায় আধাসামরিক বাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সেপাই মহেশকুমার চৌধুরীকে এই জালিয়াতিতে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছে। দাবি, মহেশ এই জালিয়াতি চক্রের বিপুল টাকা লেনদেনের এক জন ‘মিডলম্যান’ বলে তদন্তে উঠে আসে।

তবে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, একজন সেপাইয়ের পদে কর্মরত কারও পক্ষে একার চেষ্টায় আধাসামরিক বাহিনীতে বাঁকা পথে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া অসম্ভব। এর পিছনে বৃহত্তর চক্রের দুর্নীতির ছায়া রয়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। প্রধানত বাঁকা পথে বাসিন্দাগত শংসাপত্র (ডোমিসাইল সার্টিফিকেট) এবং জাতিগত শংসাপত্রের (কাস্ট সার্টিফিকেট) কারচুপি করেই এই নিয়োগ দুর্নীতিটি সংঘটিত হয়েছে বলেও আদালতে সিবিআইয়ের দাবি। তদন্তকারী সূত্রের দাবি, প্রতি শংসাপত্রের জন‍্য ধৃত মহেশের মাধ‍্যমে চার-ছ’লক্ষ টাকা আদায় করা হত। কিন্তু একা কেউ পুরো টাকা হস্তগত করত বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন না।

এক দিকে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন জেলায় মহকুমা শাসকদের দফতরের মাধ্যমে জাল শংসাপত্র তৈরি করা হয়েছে বলে সিবিআই তদন্তে মালুম হচ্ছে। তেমনই অন‍্য দিকে, বিভিন্ন আধা সামরিক বাহিনীর অন্দরেও টাকার বিনিময়ে কনস্টেবল পদে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কুচক্রীরা থাকতে পারে বলেও সিবিআইয়ের হাতে প্রাথমিক সূত্র উঠে এসেছে। আদালতে লিখিত ভাবে সিবিআই ইতিমধ‍্যেই জানিয়েছে, বিহার,উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা থেকে পাকিস্তানের নাগরিকেরাও এই বেআইনি নিয়োগ চক্রে লাভবান হয়েছেন। সুতরাং বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই দেখা হচ্ছে।

তবে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে মহকুমা শাসকের দফতরের আধিকারিকেরা দাবি করছেন, লোকবলের অভাবে অনিচ্ছাকৃত ভাবেই কিছু ভুল শংসাপত্র তৈরি হয়েছে। কিন্তু তদন্তকারীদের সূত্রের অভিমত, দেখা যাচ্ছে ২০০-র বেশি জাল শংসাপত্র তৈরি হয়েছে, যার সবটাই ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ হিসেবে বিশ্বাসযোগ্য নয়। এই সব শংসাপত্রে মহকুমা শাসকের সই লাগে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি অর্থাৎ বিধায়ক, পুরপ্রতিনিধি বা পঞ্চায়েত প্রধানকে দিয়েও সংশ্লিষ্ট ব‍্যক্তির পরিচয় যাচাই করানো হয় বলে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি। তাই খাস আধাসামরিক বাহিনীতে অতি স্পর্শকাতর এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রাজ‍্যের জেলা প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলের একাংশের ভূমিকা নিতান্তই নিরীহ বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলে সিবিআই সূত্রে দাবি উঠে আসছে।

তদন্তকারীদের কথায়, মহেশের মাধ্যমে উত্তর ২৪ পরগনার বারাকপুরের মহকুমা শাসকের দফতর থেকে ২৫০র কাছাকাছি, জাল শংসাপত্র তৈরি করা হয়েছিল বলে তদন্ত সূত্রে উঠে এসেছে। মহেশের মাধ্যমে আধাসামরিক বাহিনীতে ৩০- ৪০ জনের বেআইনি পথে চাকরি হয়েছিল বলে দাবি তদন্তকারীদের।

প্রাথমিক ভাবে ব্যারাকপুর মহাকুমা শাসকের অফিসের গত ১০ বছরের ওই সব শংসাপত্র প্রাপককারীদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ব্যারাকপুরের মহকুমার শাসকের দফতরের আধিকারিক ও কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু হয়েছে। এর পরে ধাপে ধাপে মহাকুমা শাসকের দফতরের অধীনে বিডিও এবং জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা নিয়ে তদন্তের প্রস্তুতি শুরু হবে বলে সিবিআই সূত্রে দাবি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CBI CISF BSF Assam Rifles

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy