Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

গ্রেফতার নয় সিপি-কে, সিবিআই-রাজীবের কথা হবে শিলংয়ে

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শুরু হওয়া সারদা-রোজ ভ্যালির তদন্তে রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসন বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে আদালত অবমাননার মামলাও করেছিল সিবিআই।

আদালতের বক্তব্য, সিপি তদন্তে সহযোগিতা করবেন। ছবি: সংগৃহীত।

আদালতের বক্তব্য, সিপি তদন্তে সহযোগিতা করবেন। ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৫২
Share: Save:

কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে সিবিআইয়ের সামনে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। তবে তাঁকে গ্রেফতার করা যাবে না, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ‘দমনমূলক পদক্ষেপ’ বা জোর-জবরদস্তিও করা যাবে না। আদালতের বক্তব্য, সিপি তদন্তে সহযোগিতা করবেন। শিলং শহরে বসে সিবিআই তাঁর সঙ্গে কথা বলবে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শুরু হওয়া সারদা-রোজ ভ্যালির তদন্তে রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসন বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে আদালত অবমাননার মামলাও করেছিল সিবিআই। তা নিয়ে আজ ফয়সালা না করে, সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের মুখ্যসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি ও কলকাতার পুলিশ কমিশনারের জবাব চেয়েছে। সেই জবাব খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে তাঁদের ২০ ফেব্রুয়ারির পরবর্তী শুনানিতে ব্যক্তিগত ভাবে হাজির থাকতে বলা হতে পারে।
প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ আজ প্রথমেই বলে দেন, ‘‘এমন নির্দেশ দেব, যাতে দু’পক্ষেরই কোনও অভিযোগ থাকবে না।’’ বাস্তবে হয়েছেও তাই। মমতা ও মোদী সরকার— উভয় শিবিরই আজ নিজেদের জয় দেখছে। কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘এটা আমাদের নৈতিক জয়।’’ আর দিল্লিতে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ একে ‘সিবিআইয়ের নৈতিক জয়’ বলে দাবি করেছেন। একই ভাবে আদালত অবমাননার অভিযোগ সুপ্রিম কোর্ট প্রাথমিক ভাবে মেনে নিয়েছে বলে বিজেপি দাবি করেছে। কিন্তু কলকাতা পুলিশের অন্যতম আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেবের যুক্তি, ‘‘সিবিআই তদন্তে বাধা দেওয়ার অভিযোগ সুপ্রিম কোর্ট কানেই তোলেনি।’’

সুপ্রিম নির্দেশ

• কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে সিবিআইয়ের সামনে হাজির হতে হবে, ডাকা হলে যেতে হবে এবং বিশ্বাসযোগ্য ভাবে সহযোগিতা করতে হবে।
• গ্রেফতারি-সহ কোনও দমনমূলক পদক্ষেপ পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে করা যাবে না।
• পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ, দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পরে মেঘালয়ের শিলংয়ে সিবিআইয়ের সামনে হাজির হতে হবে।
• আদালত অবমাননার মামলায় মুখ্য সচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি ও পুলিশ কমিশনারকে নোটিস। ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জবাব।
• জবাব খতিয়ে দেখে, প্রয়োজনে তিন জনকে ২০ ফেব্রুয়ারির শুনানিতে হাজির থাকতে বলা হবে।
• ১৯ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের সেক্রেটারি জেনারেল এ বিষয়ে অফিসারদের জানাবেন।


সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, রাজীবকে শিলংয়ে সিবিআইয়ের সামনে হাজির হতে হবে। কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, রাজীব আজ সিবিআইকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ৮ ফেব্রুয়ারি যেতে প্রস্তুত। সিবিআই কর্তাদের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘কবে জিজ্ঞাসাবাদ করব, সেটা তো আমরা ঠিক করব।’’

আরও পড়ুন: রাজীব স্বস্তি না পেলেও তিন দিনের ধুন্ধুমার শেষে বিরোধী শিবিরের শীর্ষস্থানে মমতা

হঠাৎ শিলং কেন? রাজীবের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি দাবি তোলেন, রাজীবকে যেন সিবিআইয়ের দফতরে যেতে না বলা হয়। আবার সিবিআই অফিসাররা রাজীবের অফিসে গেলে তাঁদের নিরাপত্তার আশঙ্কা রয়েছে বলে দাবি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল। রাজীবকে দিল্লিতে ডাকা নিয়েও আপত্তি ওঠে। তখন ‘নিরপেক্ষ স্থান’ হিসেবে শিলংয়ের নাম সুপারিশ করেন অসমের মানুষ, প্রধান বিচারপতি গগৈ। মুচকি হেসে তিনি বলেন, ‘‘শিলং চলে যান। ঠান্ডা জায়গা। দু’পক্ষই ঠান্ডা থাকবেন।’’
এ দিন শীর্ষ আদালতের লড়াই অবশ্য মোটেই ঠান্ডা ছিল না। রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ তুলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘‘বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে কেলেঙ্কারির তদন্তে রাজীব কুমারের নেতৃত্বে এসআইটি তৈরি হয়। যখন সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইকে তদন্তের ভার দেয়, তখন আমাদের সন্দেহ হয়, রাজীব সমস্ত নথি দেননি। সুদীপ্ত সেনকে জম্মু-কাশ্মীরে গ্রেফতারের পর তাঁর থেকে একটি ল্যাপটপ, চার-পাঁচটি মোবাইল উদ্ধার হয়। তার তথ্য না রেখে, সেগুলো ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে না পাঠিয়ে মোবাইলগুলি ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ফোনের সংখ্যায় অসঙ্গতি রয়েছে। যে সব কল রেকর্ডস দেওয়া হয়েছে, সেটাও সম্পূর্ণ নয়। কে, কাকে ফোন করেছিল, সেই তথ্য মুছে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইতে ওঁকে ডাকা হলেও আসেননি।’’
উত্তরে অভিষেক যুক্তি দেন, রাজীব এই মামলায় অভিযুক্ত নন। কোনও এফআইআর-এ তাঁর নাম নেই। তাঁকে ডাকা হয়েছিল সাক্ষী হিসেবে। তা-ও এক বছরের ব্যবধানে। ২০১৭-র ২৩ অক্টোবর একবার নোটিস পাঠানোর পরে ২০১৮-র ৮ ডিসেম্বর পরবর্তী নোটিস পাঠানো হয়। রাজীব নিজেই সিবিআইকে তাঁর দফতরে ডেকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, এসআইটি-র সব সদস্যদের একদিন ডেকে এনে সিবিআই তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ সেরে ফেলতে পারে। সিবিআই তার কোনও জবাবই দেয়নি।
অ্যাটর্নি জেনারেল প্রশ্ন তোলেন, ‘‘রাজ্য পুলিশ কি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের বাধা দিতে পারে? সিবিআই অফিসারদের ঠেলে পুলিশের গাড়িতে তোলার পিছনে কে ছিলেন?’’ উত্তরে অভিষেক বলেন, ‘‘সিবিআই অফিসারদের আটক বা গ্রেফতার কিছুই করা হয়নি। রবিবারের পুরো ঘটনাটার উদ্দেশ্যই ছিল, আমাদের হেনস্থা ও অপমান করা। একটি রাজনৈতিক সভার দু’দিন পরেই এই ঘটনা ঘটেছে। তা-ও অন্তর্বর্তী সিবিআই ডিরেক্টরের শেষ দিনে।’’
প্রধান বিচারপতি শেষ পর্যন্ত তাঁর বেঞ্চের অন্য দু’জন, বিচারপতি দীপক গুপ্ত ও বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার সঙ্গে আলোচনা করে সিবিআইয়ের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনাদের প্রধান আর্জি তো, রাজীব যাতে সিবিআইয়ের সামনে হাজির হয়! তা তো হতেই পারে। আমরা নির্দেশ দিয়ে দিচ্ছি।’’
অভিষেক আপত্তি তুলে বলেন, ‘‘রাজীব কী অপরাধ করেছেন যে তাঁকে হাজিরা দিতে হবে? প্রমাণ লোপাট নিয়ে এত চিন্তা থাকলে সিবিআই গত পাঁচ বছর কী করছিল?’’ রাজ্য পুলিশ যে রাজীবের গ্রেফতারির আশঙ্কা করছে, তা বুঝে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘সমস্যা হল, আপনি অনেক কিছু আন্দাজ করে নিচ্ছেন। কমিশনার তদন্তে সহযোগিতা করবেন, তাতে সমস্যা কোথায়? আপনাদের কোনও পক্ষের কথাই আমাদের খুব একটা প্রভাবিত করেনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CBI vs Kolkata Police CBI Supreme Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE