Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সিসিডি কর্তার ‘আত্মহত্যা’য় উঠছে ‘আয়কর সন্ত্রাস’-এর অভিযোগ

ম্যাঙ্গালুরুতে ময়না-তদন্তের পরে সিদ্ধার্থের দেহ তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আজ চিকমাগালুরুতে সিদ্ধার্থের বাবার কফি বাগানে তাঁর শেষকৃত্য হয়েছে।

সিসিডি-র কর্ণধার ভি জি সিদ্ধার্থকে শ্রদ্ধা আত্মীয়দের। বুধবার চিকমাগালুরুতে।  সিসিডি কর্তা ভি জি সিদ্ধার্থ (ইনসেটে) ছবি: পিটিআই।

সিসিডি-র কর্ণধার ভি জি সিদ্ধার্থকে শ্রদ্ধা আত্মীয়দের। বুধবার চিকমাগালুরুতে। সিসিডি কর্তা ভি জি সিদ্ধার্থ (ইনসেটে) ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৫১
Share: Save:

আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করে আজ কর্নাটকে নেত্রাবতী নদীর তীর থেকে উদ্ধার হল ‘কাফে কফি ডে’ (সিসিডি)-র কর্ণধার ভি জি সিদ্ধার্থের দেহ। পুলিশের মতে, কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণের জামাই সিদ্ধার্থ আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। কোম্পানির কর্মীদের উদ্দেশে লিখে যাওয়া চিঠিতে আয়কর দফতরের হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিলেন সিদ্ধার্থ। এ দিন তাঁর দেহ উদ্ধারের পরে নরেন্দ্র মোদী জমানায় ‘আয়কর সন্ত্রাস’ নিয়ে সরব হয়েছে শিল্পমহল ও বিরোধী দলগুলি।

সোমবার ম্যাঙ্গালুরুর কাছে নেত্রাবতী নদীর উপরে ওই সেতুতে গাড়িচালককে অপেক্ষা করতে বলেন সিদ্ধার্থ। এক ঘণ্টা পরেও সিদ্ধার্থ না ফেরায় তাঁর পরিবারকে সতর্ক করেন চালক বাসবরাজ পাটিল।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সেন্টার ফর ওশান ইনফর্মেশন সার্ভিস’-এর বিশেষজ্ঞেরা নেত্রাবতীর স্রোতের একটি মডেল তৈরি করে কোন এলাকায় সিদ্ধার্থের দেহ পাওয়া যেতে পারে তা নিয়ে প্রাথমিক ধারণা তৈরি করেন। আজ সেই এলাকাতেই পুলিশকর্মী ও মৎস্যজীবীরা দেহটি দেখতে পান। সিদ্ধার্থের কয়েক জন বন্ধু দেহ শনাক্ত করেন।

ম্যাঙ্গালুরুতে ময়না-তদন্তের পরে সিদ্ধার্থের দেহ তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আজ চিকমাগালুরুতে সিদ্ধার্থের বাবার কফি বাগানে তাঁর শেষকৃত্য হয়েছে। সেখানে শ্রদ্ধা জানান মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী-সহ অনেকে।

সিদ্ধার্থকে টুইটারে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন শিল্পমহলের অনেকে। সেইসঙ্গে আয়কর দফতরকে নিশানা করেছেন তাঁরা। বাজেটে
অতি-ধনীদের উপর আয়করের বাড়তি বোঝা চাপায় শিল্পপতিরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। এ বার সেই ক্ষোভের আগুনেই ঘৃতাহুতি পড়ল।

বায়োকন-এর চেয়ারপার্সন কিরণ মজুমদার শ’-এর অভিযোগ, ‘‘বহু সংস্থাই এ ভাবে আয়কর দফতর, ইডি-র তদন্তের মোকাবিলা করছে।’’ মণিপাল গ্লোবালের চেয়ারম্যান মোহনদাস পাইয়ের যুক্তি, অফিসারদের হাতে গ্রেফতারির ক্ষমতা দিলে তার অপব্যবহার হবেই। গ্রেফতারিতে আদালতের অনুমতি বাধ্যতামূলক করা উচিত।

শুধু শিল্পমহল নয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে কংগ্রেস নেতৃত্বও আজ আয়কর দফতর, ইডি-র মতো সংস্থার হাতে শিল্পপতিদের হেনস্থার জন্য মোদী সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন। মমতা বলেন, ‘‘আমি বিভিন্ন সূত্র থেকে শুনতে পাচ্ছি, গোটা দেশে শিল্পমহলের শীর্ষ ব্যক্তিত্বেরা চাপের মধ্যে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন দেশ ছেড়েছেন। আরও কয়েক জন দেশ ছাড়ার কথা ভাবছেন।’’ মমতার মতে, ‘‘ভি জি সিদ্ধার্থ যা বলে গিয়েছেন তাতে মনে হচ্ছে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থার হেনস্থা ও চাপের মুখে উনি খুবই বিষণ্ণ ছিলেন। ওই হেনস্থা ও চাপের জন্যই তিনি শান্তিপূর্ণ ভাবে ব্যবসা করতে পারছিলেন না। এই চাপ উনি নিতে পারেননি।’’ মমতার মতে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি যেমন ঘোড়া কেনাবেচা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে হেনস্থার জন্য ভীত, তেমনই শিল্পমহলও চাপের মুখে।

আজ লোকসভায় এ নিয়ে সরব হন কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি। তাঁর দাবি, ‘‘সিদ্ধার্থ আত্মহত্যা করেছেন কি না তার যেমন তদন্ত দরকার, তেমনই আত্মহত্যার কারণ আয়কর দফতরের আধিকারিকদের হেনস্থা কি না, তা নিয়েও সরকারকে তদন্ত করতে হবে।’’ কর্নাটক কং‌গ্রেস আজ দাবি করে, আয়কর দফতরের হেনস্থার ফলেই সিদ্ধার্থের মৃত্যু হয়েছে। কর্নাটক বিজেপি পাল্টা দাবি করে, ‘সুযোগসন্ধানী রাজনৈতিক শকুন’-রা সিদ্ধার্থের পরিবারের আবেগের কথা না ভেবেই আসরে নেমেছে।

সিদ্ধার্থের অভিযোগ ছিল, আয়কর দফতরের প্রাক্তন ডিজি তাঁর তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা মাইন্ডট্রি-র শেয়ার বেচা আটকাতে শেয়ার বাজেয়াপ্ত করেন। পাওনা আদায় করতে সিসিডি-র শেয়ারও দখল করা হয়। সে কারণেই তিনি আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়েন। আয়কর দফতরের অবশ্য দাবি, সিদ্ধার্থ নিজেই তদন্তে উদ্ধার কালো টাকার কথা স্বীকার করেন।

মোদী সরকারের মন্ত্রীরা অবশ্য এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, ‘‘এই বিষয়ে এখনই কিছু বলতে চাইছি না। এই মৃত্যু খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’’ আয়কর দফতরের হেনস্থার অভিযোগ নিয়ে জাভড়েকরের যুক্তি, ‘‘আয়কর দফতর নিজেই বিবৃতি দিয়ে যা বলার বলেছে।’’ কংগ্রেসের যুক্তি,
মোদী-ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিদের বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।

কংগ্রেসের যুক্তি, ইউপিএ-সরকারের আমলে ব্যবসায়ী সংস্থাগুলির শ্রীবৃদ্ধি হয়েছিল। এখন তারা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বহু মানুষ কাজ হারাচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীরও একই সুরে অভিযোগ তুলেছেন, ‘‘আর্থিক বৃদ্ধির হার জানুয়ারি-মার্চে ৫.৮ শতাংশে নেমে এসেছে। যা পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন। বেকারত্ব ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ মাত্রায় উঠেছে। সামগ্রিক অর্থনীতির হাল খারাপ। সাধারণ মানুষ ফল ভুগছেন। শিল্প, কৃষি ও কর্মসংস্থাই দেশের ভবিষ্যৎ। যদি শিল্পমহল হতোদ্যম হয়ে পড়ে, তা কোনও অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হবে না। কর্মসংস্থানও বাড়বে না। ফলে আরও মানুষ কাজ হারাবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE