Advertisement
E-Paper

Nagaland Killing: গোয়েন্দা ব্যর্থতা কবুল কেন্দ্রের

প্যারা কমান্ডোর কাছে ‘বিশ্বস্ত সূত্র’ মারফৎ ‘নিশ্চিত’ খবর ছিল যে টিরং গ্রামে ঢুকতে চলেছে সংগ্রামপন্থী খাপলাং জঙ্গিরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৪:৫৮
ওটিং গ্রামের ঘটনার প্রতিবাদে কাবুইখুল্লেন গ্রামে মোমবাতি হাতে পড়ুয়ারা।

ওটিং গ্রামের ঘটনার প্রতিবাদে কাবুইখুল্লেন গ্রামে মোমবাতি হাতে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।

১৩ নভেম্বর। মণিপুরের চূড়াচাঁদপুর জেলার এস সেকান গ্রাম।

৪ ডিসেম্বর। নাগাল্যান্ডে মন জেলার ওটিং গ্রাম।

২১ দিনের ব্যবধানে দু’টো অ্যামবুশ। আধাসেনা ও সেনার কর্তারাই মানছেন, এই দু’টি ঘটনা গোয়েন্দা ব্যর্থতার চরম দুই নজির হিসাবে লেখা থাকবে। একই মত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের।

প্রথমটির ক্ষেত্রে আসাম রাইফেলসের ডিজির সীমান্ত এলাকা সফরের পরের দিনেই ৪৬ নম্বর আসাম রাইফেলসের কনভয়ে হামলা চালিয়ে সপরিবার কমান্ডান্টকে হত্যা করে জঙ্গিরা। মারা যান আরও চার জওয়ান। একেবারে অতর্কিতে, সুপরিকল্পিত ভাবে চালানো আইইডি, রকেট, গুলির হামলার সামনে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ার সময়ই পাননি জওয়ানরা। অথচ ‘এরিয়া ডমিনেশন’-এর নিয়মে ওই যাত্রাপথ সামরিক ভাষায় ‘স্যানিটাইজ়়ড’ হওয়ার কথা।

পরের ঘটনা শনিবার রাতের। সেনার সবচেয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাহিনী প্যারা কমান্ডোর কাছে ‘বিশ্বস্ত সূত্র’ মারফৎ ‘নিশ্চিত’ খবর ছিল যে টিরং গ্রামে ঢুকতে চলেছে সংগ্রামপন্থী খাপলাং জঙ্গিরা। সেই মতো ওঁৎ পেতে ছিলেন কমান্ডোরা। এমনকি খবর ফাঁস হওয়ার ভয়ে আসাম রাইফেলস ও স্থানীয় পুলিশকেও আগে থেকে কিছুই জানানো হয়নি। কার্যক্ষেত্রে কমান্ডোদের গুলিতে প্রাণ গেল নিরীহ ১৬ জন গ্রামবাসীর। প্রাণ গেল এক কমান্ডোরও। শুধু তাই নয়, নাগাল্যান্ডে সামরিক বাহিনীর প্রতি মানুষের অল্প হলেও যে আস্থা ফিরেছিল মানুষের মনে- এই ঘটনায় তা ফের ধুলিসাৎ হয়ে গেল। থমকে থাকা শান্তি আলোচনা ফের সচল করতে দিল্লি গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নেফিউ রিও। সেই আলোচনার রাস্তাও আপাতত বন্ধ হয়ে গেল।

জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, প্যারা কমান্ডোরা যে অভিযান চালাবেন তা আগে থেকে আসাম রাইফেলসকে বা পুলিশকে জানাননি। ফলে ভুল বোঝাবুঝি বাড়ে। শ্রমিকেরা যে শনিবার ওই পথে ফেরেন তা যেমন বহিরাগত কমান্ডোরা জানতেন না, তেমনই নাগাল্যান্ডের মাটিতে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি বলবৎ থাকায় চট করে জঙ্গি সন্দেহে কারও উপরে এ ভাবে এলোপাথাড়ি গুলি চালানোর দস্তুর নেই- সেই বিষয়টিও কমান্ডোদের মাথায় ছিল না।

প্রশ্ন উঠছে নাইট ভিশন ও অন্য আধুনিক সরঞ্জামে সজ্জিত বিশেষ বাহিনী কেন নিরস্ত্র গ্রামবাসীদের চিহ্নিত করতে পারল না? কেন তাদের থামতে না বলে দূর থেকেই গুলি চালাতে থাকল? সেনা সূত্রে বলা হচ্ছে, জঙ্গি গতিবিধির বিষয়টি নিয়ে কমান্ডোদের কাছে এতটাই পাকা খবর ছিল যে তাঁরা এই ভুল করে ফেলেছেন। কমান্ডোদের ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল তথ্য দিয়ে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে।

সেনার ৩ নম্বর কোরের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, কমান্ডোদের কাছে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর এসেছিল ওই এলাকায় জঙ্গিরা আসতে চলেছে। তার ভিত্তিতেই তাঁরা অভিযান চালান। তার পরের ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ঘটনা নিয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী আরও জানায়, ঘটনায় তারাও বিস্তর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এক কমান্ডো নিহত হয়েছেন। একাধিক কমান্ডো জখম হয়েছেন।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের মতে, কমান্ডো দলটিকে পরিকল্পিত ভাবে ভুল তথ্য দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। স্থানীয় সূত্রে প্যারা কম্যান্ডো বাহিনীকে জানানো হয়েছিল, ডজন খানেক জঙ্গির একটি দল সন্ধ্যার পরে ওটিং গ্রামে প্রবেশ করতে পারে। স্বরাষ্ট্র সূত্র বলছে, জঙ্গিরা কোন ধরনের গাড়ি করে আসতে পারে তাও জানানো হয়েছিল। ঘটনাচক্রে যা মিলে যায় খনি শ্রমিকদের গাড়ির সঙ্গেও। ফলে স্বভাবতই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যে স্থানীয় সূত্র জঙ্গিদের বিষয়ে তথ্য দিয়েছিল সেই ব্যক্তি পরিকল্পিত ভাবে কমান্ডোদের নিরীহ নাগরিকদের উপরে হামলার দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু কেন নিশ্চিত না হয়ে এলোপাথাড়ি ওই গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানো হল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এক স্বরাষ্ট্র কর্তার বক্তব্য, অ্যামবুশের ক্ষেত্রে টার্গেট নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত হামলা করার নির্দেশ দেওয়া হয় না। এ ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছিল তা তদন্তের পরেই বোঝা যাবে। স্বরাষ্ট্র সূত্রের মতে, হতে পারে স্থানীয় সূত্র জঙ্গিদের হয়ে এ ক্ষেত্রে কাজ করেছে। তাই স্থানীয় সূত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরেই পুরো চিত্রটি স্পষ্ট হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

Assam Rifles nagaland Death Violence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy