তাড়াহুড়ো করে মিড ডে মিলে আধার বাধ্যতামূলক করতে আপত্তি করেছিল মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। কিন্তু দুর্নীতি আটকাতে এবং খরচ সাশ্রয়ে মরিয়া নরেন্দ্র মোদী সরকারের আর একটি অংশ তাতে কান দেয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্তরে বিরোধিতা শুরু হওয়ার পরে মোদী সরকার বুঝতে পারে, চালে ভুল হয়েছে। আধার কার্ডের অভাবে স্কুলের শিশুরা খাবার পাচ্ছে না, এটা অত্যন্ত অমানবিক দৃশ্য। তা হলে মোদী সরকারের সম্পর্কে ভুল বার্তা যাবে। ভুল শোধরাতেই মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় সরকার পিছু হটে জানায়, মিড ডে মিলে আধার আবশ্যক নয়।
সরকারি সূত্র বলছে, শুধু রাজনৈতিক বিপদ নয়। সুপ্রিম কোর্টেও সমস্যার মুখে পড়তে হতো সরকারকে। কারণ আধার বাধ্যতামূলক করা এবং এর মাধ্যমে সরকারি ভাতা বা ভর্তুকি দেওয়ার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চে একগুচ্ছ মামলা ঝুলছে। বিভিন্ন সময়ে শীর্ষ আদালত সরকারের আবেদন শুনে একশো দিনের কাজের মজুরি বা রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি দেওয়ার ছাড়পত্র দিয়েছে। কিন্তু আধার নম্বর নেওয়া বাধ্যতামূলক নয় বলেও সরকারকে প্রচারের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কারণ আধার-এর মাধ্যমে নাগরিকদের গোপনীয়তার অধিকারে হস্তক্ষেপ হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্নের এখনও ফয়সালা হয়নি।
প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর জানিয়েছেন, মে মাসে গরমের ছুটির সময় পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হবে। ফলে সেখানেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হতো সরকারকে। এমনকী আধারের মাধ্যমে সরকারি ভাতা বিলির জন্য যে আইন পাশ করিয়েছে সরকার, তাকে অর্থ বিলের তকমা দেওয়া নিয়েও সুপ্রিম কোর্টে মামলা ঠুকেছেন কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ। তবে এরই মধ্যে কৃষি বিমায় আধার বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মীদেরও পেনশন পেতে আধার কার্ডের প্রয়োজন হবে।
মিড ডে মিলে আধার বাধ্যতামূলক করতে কেন এত তাড়াহুড়ো? সূত্রের খবর, সিএজি রিপোর্ট দিয়েছিল, মিড ডে মিল নিয়ে নয়ছয় চলছে। একই ছাত্রছাত্রীর নাম একাধিক স্কুলে লেখানো হয়েছে। সেই সুযোগে চুরি হচ্ছে প্রচুর টাকা। সেই কারণে শুধু ছাত্রছাত্রী নয়, রান্নাবান্নার কাজে যুক্ত অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদেরও আধার বাধ্যতামূলক করা হয়। অর্থ মন্ত্রক ভেবেছিল, কারচুপি রোখা গেলে অর্থ সাশ্রয় হবে। চলতি বছরে মিড ডে মিলে কেন্দ্রের খরচ হবে ৯,৭০০ কোটি টাকা। নতুন অর্থ বছরে বরাদ্দ ১০ হাজার কোটি টাকা।
২০১৫-’১৬-র হিসেব অনুযায়ী, দেশের ১১.৫ লক্ষ স্কুলের ১৩.৬ কোটি ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ১০.০৩ কোটি ছেলেমেয়েকে রোজ মিড ডে মিল দেওয়া হয়। তা দেখিয়েই মানব সম্পদ মন্ত্রকের স্কুল শিক্ষা দফতর আপত্তি তোলে, নাবালকদের আধার
কার্ডের জন্য এত দিন জোর দেওয়া হয়নি। আধার বাধ্যতামূলক করার আগে আরও ভাবনাচিন্তা দরকার। সরকারি সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও অর্থ মন্ত্রক তাতে কান দেয়নি। তবে তাদের আপত্তির পরে মোদী পিছু হটায় একে রাজনৈতিক জয় হিসেবেই তুলে ধরতে চাইছে তৃণমূল। রাজ্যসভায় আধার নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব আনতে নোটিসও দিয়েছে তৃণমূল।