বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর দাবি মেনে দিল্লির দূষণ নিয়ে আজ লোকসভায় আলোচনা করতে রাজি হয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু তার আগে ‘বিকশিত ভারত জি-রামজি বিল’ থেকে মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীর নাম সরানো নিয়ে বিরোধীদের বিক্ষোভের মুখে পড়ল কেন্দ্র। লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সরকার ওই বিলটি পাশ করিয়েও নিল। আর তার পরেই সারা দিনের জন্য মুলতুবি হয়ে গেল অধিবেশন। ফলে দূষণে দম আটকে আসা দেশের নাগরিকদের জন্য সংসদে বসা জনপ্রতিনিধিরা আদৌ কতটা চিন্তিত, সেই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়ে উঠল এ দিন।
গত কাল রাত থেকেই দূষণের চাদরে ঢেকে ছিল নয়াদিল্লির জাতীয় রাজধানী অঞ্চল সংলগ্ন গোটা এলাকা। আজ সকাল থেকেই ঘন ধোঁয়াশার জন্য দৃশ্যমানতা এতটাই কম ছিল যে, তার প্রভাব পড়ে রেল ও বিমান চলাচলে। সকাল ১১টায় যখন সংসদ বসল, তখন সংসদ চত্বর, বিজয় চকের মতো ভিভিআইপি এলাকায় উপস্থিত ব্যক্তিত্বরা কেউ দূষণে চোখ জ্বালা করার কথা বলছিলেন। কেউ খুকখুক কাশি নিয়েই ঘুরছিলেন। অর্থাৎ, সংসদে দূষণ নিয়ে আলোচনার আদর্শ পরিস্থিতি ছিল। সংসদের কার্যসূচিতেও বিষয়টির উল্লেখ ছিল আজ। ঠিক ছিল, কংগ্রেসের পক্ষে ওই আলোচনা শুরু করবেন ওয়েনাড়ের সাংসদ প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা। তবে তার আগে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান ‘জি রাম জি’ বিলটি নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্নের জবাব দেবেন। গত কাল গভীর রাত অবধি ওই বিলটি নিয়ে আলোচনা হয় লোকসভায়।
আজ প্রশ্নোত্তর পর্বের পরেই ‘জি রাম জি’ বিল নিয়ে আলোচনা শুরু করে দেয় সরকার। কেন বিলটি থেকে গান্ধীর নাম সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, সেই প্রশ্ন তুলে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিরোধীরা। প্রবল হট্টগোলের মধ্যেই বিল পাশ হয়ে যায়। তার পরেই গোটা দিনের জন্য অধিবেশন মুলতুবি করে দেন স্পিকার ওম বিড়লা। ফলে ভেস্তে যায় দূষণ নিয়ে হতে চলা আলোচনা। পরে এ নিয়ে সরকারের একটি শীর্ষ সূত্রে বলা হল, ‘‘বিরোধীরা আমাদের বক্তব্য শুনতে ইচ্ছুক নন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যতক্ষণ জবাব দিচ্ছিলেন, ততক্ষণ ওয়েলে নেমে হল্লা করে গিয়েছেন বিরোধীরা। ফলে বিরোধীদের যখন সরকার পক্ষের বক্তব্য শোনার প্রয়োজন নেই, তখন সরকারও বিরোধীদের বক্তব্য শুনতে আগ্রহী নয়। সেই কারণে অধিবেশন গোটা দিনের জন্য মুলতুবি করে দেওয়া হয়।’’
আগামিকাল শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিন। পরিস্থিতি যা, তাতে কাল দূষণের বিষয়ে সংসদে আলোচনা হওয়া বেশ কষ্টসাধ্য। এর অর্থ হল, শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিন থেকে দিল্লি দূষণ-জর্জরিত হলেও, তা নিয়ে আলোচনার সময় করে উঠতে পারল না শাসক শিবির। দিল্লির বিজেপি সরকার বায়ুদূষণ কমাতে একাধিক পদক্ষেপ করেছে। রাজধানীতে বিএস-৪ পর্যায়ের চেয়ে পুরনো ইঞ্জিনচালিত গাড়ি এবং বিভিন্ন ধরনের নির্মাণকাজে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
সংসদের নিরাপত্তাকর্মীরা পর্যন্ত বললেন, ‘‘সকলেই কাশছেন। অনেকের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। অথচ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হল না।’’ শাসক শিবিরের ওই সূত্রটি অবশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বিরোধীদের ইটের বদলে পাটকেল ছুড়েছেন তাঁরা। আর তাই দেশবাসীর স্বচ্ছ বাতাসে শ্বাস নেওয়ার অধিকার নিয়ে আলোচনাও মুলতুবি রইল।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)