Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জহরের ইস্তফা ঝুলিয়ে রাখছে কেন্দ্র

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল তাঁর। ঠিক সময়েই এসেছিলেন। কিন্তু দেখেন অরুণ জেটলির ঘরে বসে রয়েছেন কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনার বিমল জুলকা। তাঁকে দেখেই কপাল কুঁচকে বেরিয়ে যান প্রসার ভারতীর সিইও জহর সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:১৭
Share: Save:

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল তাঁর। ঠিক সময়েই এসেছিলেন। কিন্তু দেখেন অরুণ জেটলির ঘরে বসে রয়েছেন কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনার বিমল জুলকা। তাঁকে দেখেই কপাল কুঁচকে বেরিয়ে যান প্রসার ভারতীর সিইও জহর সরকার। পরে ফিরে এসে মন্ত্রীকে বলেন— ওই অফিসারের উপস্থিতিতে তিনি কথা বলতে চাননি!

বিস্মিত জেটলি পরে ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছিলেন, এমন লোকের সঙ্গে কী ভাবে কাজ করা সম্ভব!

ওয়াকিবহাল মহল বলছে জহর সরকার এমনই। একরোখা, একগুঁয়ে এবং স্পষ্টবক্তা। মুখের উপরে সত্যি কথা বলে দিয়ে অতীতেও অনেক নেতা-মন্ত্রীর অপ্রিয় হয়েছেন। তা তিনি পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যই হোন, বা সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কুমারী শৈলজা বা মণীশ তিওয়ারি। আর এই অনমনীয় মানসিকতার কারণেই মেয়াদ ফুরনোর চার মাস আগে, গত কাল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দিলেন প্রসার ভারতীর এই সিইও। নিয়ম অনুযায়ী জহরবাবুর পদত্যাগপত্র সম্প্রচার মন্ত্রীরই পাঠিয়ে দেওয়ার কথা তাঁর নিয়োগকর্তা উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারির কাছে।

সরকারি সূত্রের বক্তব্য, তবে এখনই এই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হচ্ছে না। যে হেতু এ’টি সাংবিধানিক পদ, প্রধানমন্ত্রী তাই এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলবেন। আগামী নভেম্বরে প্রসার ভারতীর বোর্ড মিটিংয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা। কেন্দ্র চাইছে জহরবাবু সেই বৈঠকে উপস্থিত থেকে সিদ্ধান্তগুলি পাশ করিয়ে নিন। তা হলে মনে হবে না জহর সরকারকে সরিয়ে নিজের পছন্দের লোককে বসিয়ে সরকার গায়ের জোরে সিদ্ধান্তগুলি পাশ করাচ্ছে। পাশাপাশি জহরবাবু যখন নিজেই সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তখন তাঁর সঙ্গে সৌজন্যের সম্পর্ক রেখে অবসরকালীন কিছু বিশেষ সুযোগসুবিধা দেওয়া যায় কি না, অথবা অন্য কোনও সাংবিধানিক পদ তাঁকে দেওয়া যায় কি না— সেটাও বিবেচনা করবে সরকার।

মন্ত্রক সূত্রের খবর, প্রসার ভারতীর চেয়ারম্যান, সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ সূর্য প্রকাশের সঙ্গে মতবিরোধের কারণেই সরতে হল জহরকে। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার ছ’মাস পরই প্রসারভারতীর চেয়ারম্যান পদে নিয়ে আসা হয় সূর্য প্রকাশকে। বিরোধীদের অভিযোগ, বিজেপি ক্ষমতায় আসতেই দূরদর্শন ও আকাশবাণীর রাশ পুরোপুরি হাতে পেতে চাইছিল সঙ্ঘ। জহরবাবু সরে না-যাওয়া পর্যন্ত সেটা সম্ভব হতো না। অথচ সিইও পদটি সাংবিধানিক হওয়ায় তাঁকে ‘ইমপিচ’ না-করে সরানোও যায় না। বিরোধীদের অভিযোগ, সেই কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হল, যাতে কোণঠাসা হয়ে সরে যান জহরবাবু। পরিস্থিতি চরমে ওঠে যখন তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একটি বৈঠকে এক আমলাকে না পাঠানোর জন্য সিইও জহর সরকারকে শো-কজ করেন চেয়ারম্যান সূর্য প্রকাশ।

সূত্রের খবর— দূরদর্শনের সিরিয়াল নিয়ে দুর্নীতির তদন্তের নির্দেশ দিয়েই তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী জাভড়েকরের বিরাগভাজন হন জহরবাবু। দূরদর্শনে দু’ধাঁচের ধারাবাহিক হয়ে থাকে। একটি হল, ‘স্পনসর্ড’। যেখানে সিরিয়ালের প্রযোজককে বিজ্ঞাপন জোগাড় করতে হয়। দ্বিতীয়টি, ‘কমিশনড’। যেখানে দূরদর্শনে ধারাবাহিক দেখানোর জন্য প্রযোজককে কমিশন বাবদ টাকা দেয় প্রসার ভারতী। স্বাভাবিক ভাবেই, ঘরের টাকা না-লাগিয়ে ‘কমিশনড’ সিরিয়াল বানাতে চান অধিকাংশ প্রযোজক। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, প্রযোজকদের কাছ থেকে প্রসার ভারতীর কর্তারা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ঘুষ চাইছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ ধরনের অভিযোগ জমা পড়ায় তার তদন্তের জন্য সিবিআই ডাকেন জহরবাবু। ১৭ জনকে গ্রেফতার করে সিবিআই। নোটিস পাঠানো হয় প্রসার ভারতীর আরও ৪০ কর্মীকে। সূত্রের দাবি, এর পরেই কোণঠাসা করে ফেলা হয় জহরবাবুকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Central Government Prasar Bharati CEO
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE